ডেঙ্গু দমনে কাজে আসছে না দুই সিটির উদ্যোগ

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫৭

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস

এডিস মশা নিমূর্লে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেন নানা উদ্যোগ নিলেও ডেঙ্গু দমনে কার্যত কোনো সাফল্য মিলছে না। ফলে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উর্ধ্বমূখী। যদিও এই দুই সিটির কর্মকর্তাদের দাবি, অসময়ে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার উপদ্রব বেড়েছে। তবে ঢাকার রোগীদের বড় একটা অংশ বাইরের জেলাগুলো থেকে এসেছেন। এজন্য রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে।

ডেঙ্গু দমনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা নিমূর্লে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসব উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না।

এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে মাসব্যাপী ডেঙ্গু নিধনে অভিযান চালানোর ঘোষনা দিয়েছেন মেয়র আতিকুল। অভিযানে এই সিটির আওতাধীন প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘পুরো মাসজুড়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মশা নিধনে কাজ করবে। অসময়ে ঝড় বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মাঠে কাজ করতে হবে। মশার প্রজননক্ষেত্র খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে হবে। নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি কিউলেক্স মশাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোথাও পানি বা ময়লা জমতে দেয়া যাবে না। এডিসের লার্ভার উৎস পেলে কাউন্সিলররা ছবি তুলে লোকেশন উল্লেখ করে ডিএনসিসির অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করবে। ছবি ও লোকেশন দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবে।'

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে দুই মাসব্যাপী ডেঙ্গুর উৎসগুলো ধ্বংসের কার্যক্রম নিয়েছি৷ যার ফলে এডিশ মশার উপদ্রব থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষা করতে পেরেছি।’

মেয়র তাপস বলেছিলেন, এই মৌসুমে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছিলেন যে, গত বছরের তুলনায় এডিশ মশা ও ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাবে। তারা বলেছিলেন ২০১৯ সালে ডেঙ্গু যে রকম মহামারি আকার ধারণ করেছিল, সে রকম হতে পারে। আমরা এজন্য প্রথম থেকে ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম। আমাদের কাছে যে জরিপ এসেছিল সে ভিত্তিতে চিরুনি অভিযান কার্যক্রম করেছি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সেলিম রেজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, এডিস মশা নিমূলের ক্ষেত্রে উত্তর সিটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মানুষের বাসাবাড়ি নির্মানাধীন ভবনের নিচে এবং বাসাবাড়ির ছাদ বাগানে ময়লা আবর্জনায় এডিস লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এডিস মশা নিমূল করা খুবই কঠিন। বাইরের বিভিন্ন দেশেও প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ভর্তি হচ্ছে।

মশা মারার ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা যায় না জানিয়ে সেলিম রেজা বলেন, মশা মারতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলা যাবে না। প্রতিদিন দুই তিন বেলা মশার ওষুধ দেওয়া যায় না। আমি যদি এখন একটা ঘোষণা দেই যে, সবাই জানালা দরজা বন্ধ রাখেন খাবার ঢেকে রাখেন আমরা কাল মশার ওষুধ ছেটাবো তাহলে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হবে। এরপর স্বাভাবিক অসুস্থ হলেও বলবে এটা মশার ওষুধের কারনে হয়েছে। তাই প্রকৃতি, পরিবেশ সবকিছু ঠিক রেখে মশার ওষুধ ছেঁটাতে হয়। তাই আমরা ঘন্টা বাজিয়ে মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। যাতে জণগন বোঝে যে এখানে মশার ওষুধ ছেঁটানো হচ্ছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী (অতিঃ সচিব) ফরিদ আহাম্মদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এডিস লার্ভা নিমূলে দক্ষিণ সিটি সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অঃদাঃ) ডাঃ ফজলে শামসুল কবির বলেন, ঢাকা দক্ষিণে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী দেখা যাচ্ছে, এর একটা বিরাট অংশ ঢাকার বাইরের আশ পাশ জেলা থেকে আসছে। ঢাকা দক্ষিণে ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রকৃত রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে। কিন্তু বাহিরের জেলার রোগী এখানে এসে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু বান্ধবের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির সময় তারা ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করছে। এই কারনে ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন,  দক্ষিনের কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে আক্রান্ত দেখা যাচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটা এলাকায় একটানা চিরুনি অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের ৬ টি ওয়ার্ডে নতুন করে ডেঙ্গু দেখা যাচ্ছে। আমরা এই ৬টি ওয়ার্ডে ৬ দিন ব্যাপী চিরুনি অভিযান শুরু করেছি। এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে আমাদের যে দৈনন্দিন কার্যক্রম সেটি আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। আমরা আশা করছি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের এ পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ২৬২ জন। আর মারা গেছেন ১২৮ জন।  বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৫৩৯ জন।  

(ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/কেআর/আরকেএইচ)