কেমন আছে ঢাকাবাসী

এম এস নাঈম, কৌশিক রায়, পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৯

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে/লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে’- সিনেমার এই গানটি এক সময় ঢাকায় নতুন আসা মানুষজনের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক ছিল। স্বপ্নে ঢাকা নিয়ে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্তহীন কৌতূহল। কী আছে এই মহানগরী ঢাকায়? এখনো কী উৎকণ্ঠায় থাকে কেউ- এখানেই সব স্বপ্ন। এখানেই সব আছে। উচ্চ শিক্ষা। চাকরি। জীবনের নিশ্চয়তা। স্ট্যাটাস। টাকা। আভিজাত্য। বড় হবার সিঁড়ি। একমুঠো স্বপ্ন পুঁজি করে এক সময় মানুষ দলে দলে ঢাকায় আসত। বিশেষ করে তরুণ সমাজ। লক্ষ্য জীবনের জন্য নিজেকে তুলে ধরা। আর এর জন্য উপযুক্ত জায়গা হলো ঢাকা। কিন্তু সেই স্বপ্নের ঢাকাবাসী এখন কেমন আছে? এখনো কি আগের মতো তাদের স্বপ্ন টেনে নিয়ে আসে নাকি মাঝপথে কোনো দেয়াল এসে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে?

সত্যি কথা বলতে কী ২০২০ ও ২০২১ সালের করোনা মানুষের সেই স্বপ্নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই চাকরি হারান। অনেকে ধারদেনা করে টিকতে না পেরে গ্রামে চলে যান। করোনা গেলে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন এমনটিই প্রত্যাশা ছিল তাদের। কিন্তু অনেকের কপালে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে বর্তমান নিষ্ঠুর বাস্তবতা। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতিও রয়েছে চাপের মুখে। যদিও এতা চাপ থাকার কথা ছিল না। যদি পরিকল্পিতভাবে সব কাজ করা যেত। গত ৫ আগস্ট হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলে দাম অন্তত ৫১ পার্সেন্ট বাড়িয়ে দেয়ার পর দেশের মানুষের মাথায় প্রথম বাজ পড়ে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে জীবন মানের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হলো তা-ই সহ্য করার মতো নয়। তার ওপর নতুন করে আরও অনেকগুলো চাপ এসে জড়ো হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। মানুষের জীবন বিষময় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকাবাসীর জীবন। এখানে যারা আছেন, তাদের ওপর চাপটা একটু বেশি। এখানে বাসাভাড়া বেশি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। ভাড়া বেশি। এক কথায় ঢাকার মানুষের জীবন চিড়েচ্যাপ্টা। মধ্যবিত্তের মুখে কথা নেই। কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। নিম্ন মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর দিয়েও বয়ে যাচ্ছে আর্থিক ঝড়। সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।

ঢাকায় বসবাস করা শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কর্মজীবীসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমস প্রতিবেদকের। তাদের অনেকেই জানান, খরচের চাপ সামলাতে না পেরে কখনো কখনো একবেলার খাবার বন্ধ করতে হচ্ছে তাদের। জিনিসপত্রের দাম কম থাকতে সকালের নাস্তায় যে মেন্যু ছিল তাতেও কাটছাঁট করা হচ্ছে। কেউ কেউ রুটি কলা খেয়ে, আবার কেউ সামান্য কিছু খেয়েই পার করছেন সকাল। আবার কেউ বা সকাল দুপুরের খাবার মাঝামাঝি একটা সময়ে খাচ্ছেন। যাতে এক বেলার খাবারে ২ বেলার চাহিদা মিটে যায়। এর মাধ্যমে অনেকেই টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বা সাশ্রয় করছেন কিছু টাকা।

রুবাইয়া ইয়াসমিন কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ২২ হাজার টাকা। ভাড়া থাকতেন বকশিবাজারের একটি বাসায়। সাবলেট হিসেবে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি একজন কর্মজীবী নারী। স্বাবলম্বী। আগেও একসময় হোস্টেলে ছিলাম। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সাবলেট বাসায় উঠি। আগামী বছরের শুরুর দিকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। যার জন্য সাবলেট বাসায় আস্তে আস্তে ফার্নিচার গুছাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন সত্যিই হিমশিম খাচ্ছি। জীবন নিয়ে স্বপ্নের রথ যেন থেমে যাচ্ছে। গত মাসে আমি বাসার সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি। নভেম্বরের ১ তারিখ আবারও কর্মজীবী হোস্টেলে উঠেছি।’

রুবাইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের কাছে রিকশাওয়ালা, বাসের কন্ডাক্টর সবজিওয়ালাসহ সবাই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়তি টাকা চায়। কিন্তু আমরা কার কাছে চাইব। বেতন বাড়ানোর কথা বলা তো দূরের বিষয়, ভয়ে থাকি পাছে না আবার চাকরি চলে যায়।’

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে রাজধানীতে কেমন আছেন- ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের হোসেন মিয়ার কাছে। দিনাজপুর সদরের হোসেন মিয়া কাজ করেন ওয়েল ফুড পান্থপথ শাখায়। তিনি জানান, মা-বাবা এবং স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। কাজের সূত্রে থাকেন পশ্চিম রাজাবাজারে।

‘২০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে বাড়িতে পাঠাই ১২ হাজার টাকা। বাকি ৮ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় মেসে থাকা-খাওয়া এবং নিজের প্রয়োজন মেটাই’- এইটুকু বলে থেমে যান হোসেন মিয়া। আগস্টের পর থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জীবন-যাপন কঠিন হয়ে গেছে। রীতিমত হিমশিম খেতে হয় ৮ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে।

হোসেন মিয়া বলেন, গেল বছরেও ৪৮-৫৫ টাকা কেজি দরে মেসের জন্য চাল কেনা হতো। কিন্তু এখন প্রতি কেজি চাল কিনতে হয় ৬০ টাকা কেজিতে। আর শাক-সবজিসহ সব কিছুর দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। অন্যদিকে আমার ব্যক্তিগত খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে সেপ্টেম্বর মাসে বাড়িতে পুরো টাকা পাঠাতে পারিনি। মাত্র ৫ হাজার টাকা পাঠানোর ফলে তারাও অনেক কষ্টে আছেন।

ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি জানিয়ে হোসেন মিয়া বলেন, ‘আগে আমি ৪০ টাকায় সকালের নাস্তা খেতাম ৩টি পরটা, ভাজি আর ডিম দিয়ে। এখন আমি খরচ বাঁচাতে একটা কলা আর একটি রুটি দিয়ে ২৫ টাকায় সকালের নাস্তা করি। দুপুর এবং রাতে ২ বেলা ভাত খেলেও এখন শুধুমাত্র দুপুরে ভাত খাই। আর রাতে পরোটা ও ডিম খাই।’

‘খাবারের আইটেম কমিয়ে দেওয়ার পরও খরচ কমেনি’ এমন আক্ষেপ করে হোসেন বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে তত খরচ বাড়ছে। এরকম বাজার পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে সংসার চালাব কেমন করে আর নিজে বাঁচব কেমন করে?’

মালিবাগ রেললাইনের পাশে টিনশেড ঘরে থাকেন রিকশাচালক আলাউদ্দিন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বউ এবং ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। ছয় মাস আগেও রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন আয় করতাম ৫ থেকে ৬শ টাকা। সে সময় কিছুটা স্বস্তিতে সংসার চালাতে পারতাম। দৈনিক আয় আগের থেকে অল্প কিছু বাড়লেও এখন মাঝে মাঝে উপোসও থাকতে হয়।’

আলাউদ্দিন বলেন, ‘বাজারে সব কিছুর দাম বাইড়া যাওনের কারণে সংসারের খরচ লাফাইয়া লাফাইয়া বাড়তাছে কিন্তু আয় বাড়ে নাই। দুই বেলা ভাত খাইতে হিমশিম খাইতে হইতাছে। ৬০ টাকা কেজির নিচে চাইল নাই। ডাইল, আলু ভর্তা দিয়া খাইতে গেলেও পেঁয়াজ, রসুন এবং তেল মশলা লাগে। প্রতিদিন এইগুলো খরচ করতে খুব বেশি কষ্ট হয়ে যায়। দিন দিন আমাগোর অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যাইতাছে।’

আলাউদ্দিন জানান, আগে ৩ হাজার টাকা বাসা ভাড়া আর খাবার খরচ ৭ হাজার টাকায় তার মাস পার হয়ে যেত। এখন তার এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়েও ১৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়।

পশ্চিম রাজাবাজারে মেসে থাকেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী মো. মুকিত আহমদ। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চাল, ডাল, ডিম ব্যাচেলরদের কমন খাবার। মেসে রান্নার জন্য আগে ৫০ টাকা কেজি প্রতি চাল কিনেছি। একই চাল এখন ৬০ টাকা কিনতে হচ্ছে। আগস্টের আগে ডিম ৩৮/৪০ টাকা হালি কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এছাড়া শাক-সবজিসহ সবকিছুর দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।’

মুকিত বলেন, ‘খাতা-কলম-বই, মেস ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। আগে প্রতিদিন আমার খরচ ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন তিন বেলার খাবার দুই বেলা খেলেও খরচ সেই আগের মতোই হচ্ছে। মাঝে মাঝে বেশিও খরচ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আমার অনুরোধ- দেশের মানুষের জন্য একটু নজর দিয়ে অস্থির বাজারকে স্থির করা হোক।’

বাড়ি থেকে আমার জন্য প্রতি মাসে পাঠানো হয় ১৫ হাজার টাকা। যা দিয়ে আমি মেসের ভাড়া, খাবার বিল, পড়াশোনার খরচসহ সবকিছু মিটিয়ে থাকি। আগে সুন্দরভাবে চলতে পারলেও এখন আমি হিমশিম খাচ্ছি। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আমি পার্টটাইম একটি চাকরি খুঁজছি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইয়াসির রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়ে ইতোমধ্যে মানুষের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও আমাদের আয় বাড়েনি। ১০ টাকার পণ্য ১৫ টাকা হয়ে গেছে। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে ভাড়া থাকি। ১৫ হাজার টাকা বাসা ভাড়াসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি এবং কাজের বুয়ার বেতনে চলে যায় ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ছেলে-মেয়ের খরচ তো আছেই। আগে ২৫ কেজির চালের বস্তা কিনলেও এখন ১০ কেজি করে খুচরা কিনি। আগে অনেক মাছ-মাংস একসাথে কিনে ফ্রিজে রেখে দিলেও নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে এখন বুঝে বুঝে খরচ করি।’

বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মাস শেষে যে বেতন আসে তার অধিকাংশই চলে যায় বাজার করতে। বাকি টাকা খরচ হয় অফিস যাতায়াতে। সবকিছুর দাম বাড়লেও বেতন বাড়েনি। ঠিক কবে বেতন বাড়তে পারে তাও জানি না। সবকিছুর দাম যখন কম ছিল তখন বেতনের টাকা থেকে জমাতে না পারলেও মোটামুটি খেয়ে পরে চলে যেত। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে খাবার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

আগে সপ্তাহে একদিন খাসি বা গরুর গোস্ত এবং মাছ প্রতিদিনই থাকতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সপ্তাহে একদিন খাসি কিংবা গরুর গোস্ত তো দূরের কথা মাসে একদিনের বেশি দুদিন মুরগির মাংস খেতেও কষ্ট হয়ে যায়।’

রাজধানীতে চাকরি খুঁজছেন মেহেদি হাসান রাব্বি। থাকেন রাজধানীর শ্যামলীতে। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতে টিউশনি করেন। রাব্বি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়লেও টিউশনির কোনো বেতন বাড়ে নাই। বরং বেতন বাড়ানোর কথা বলতেও ভয় করে। যদি বেতন বাড়ানোর কথা বললে আমাকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে নিয়ে নেয়। এখন তো অনেকেই চাকরি খুঁজছে। চাকরি না পেলে কম বেতনেও টিউশনিতে ঢুকে পড়বে। তাই বেতন বাড়ানোর কথাও বলতে পারি না।’

সবকিছুর দাম যখন কম ছিল তখন মাস শেষে টিউশনির টাকা থেকেও কিছু টাকা বাঁচাতে পারতেন জানিয়ে রাব্বি বলেন, ‘এখন যে পরিমাণ খরচ বেড়েছে তাতে মাস শেষে বাড়ি থেকে অতিরিক্ত ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে হয়। তারপরেও হিসাব করে চলতে হয় কোথাও ৫ টাকার বেশি খরচ করলে সেটা কীভাবে মেকআপ হবে সেই চিন্তা করতে হয়। মেসে আগে তিন বেলা খাবারকে আড়াই মিল ধরা হলেও এখন সকালের মিল বন্ধ করে ২ মিল করা হয়েছে।’

বাবা-মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে তিনরুমের বাসা ছেড়ে অল্প টাকায় সাবলেট বাসায় উঠেছেন শ্যামলীর হেলাল শেখ। খাবারেও এসেছে সীমাবদ্ধতা। হেলাল শেখ জানান, আগে পুরো মাসে যে টাকায় বাজার খরচ চলত এখন সেই একই টাকার বাজারে মাসের ১২ থেকে ১৫ দিনও যায় না। এই বাজার খরচ মেকআপ করতে ভাগ করতে হয়েছে সংসারকে। তিনি বলেন, ‘আগে ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসায় বাবা-মা স্ত্রীসহ পুরো পরিবারকে নিয়েই থাকতাম। আর এখন বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে আসছি। একটা সাবলেট রুম নিয়ে আমি আর আমার বৌ থাকি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হাবিবুর রহমান। রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। যাতায়াত করেন নিজস্ব মোটরবাইকে। শ্যামলী বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে মতিঝিলের যাত্রী খুঁজতে দেখা যায় তাকে। চালচলন এবং পোশাকাশাক দেখে বুঝতে আর বাকি থাকে না পেশা হিসেবে ক্ষ্যাপের বাইক চালানোর নতুন এই পথকে পার্টটাইম হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘ভাই এটা আমার পার্টটাইম কাজ। একটা বেসরকারি অফিসে ফুলটাইম চাকরি করছি। যে বেতন পেতাম তাতে হেসে-খেলে চলে যেত। কিন্তু সবকিছু দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও জমানো টাকা থেকে খরচ করে সবকিছু মেকআপ করতাম। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? জ্বালানির দাম বাড়ার পর থেকে অফিসে যাওয়ার সময় একজন যাত্রী নিয়ে যাই আবার আসার সময় একজন নিয়ে আসি। তাতে বাজার খরচ মেকআপ না হলেও অন্তত বাইকের তেল খরচটা হয়ে যায়।’

মোটরবাইকে যাত্রী পরিবহন করেন গাজীপুরের ইসমাইল হোসেন। ঢাকার কাজীপাড়ার মেসে থাকেন তিনি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৮শ থেকে ১ হাজার আয় হয়। এই টাকা দিয়েই নিজের খরচ এবং বাড়িতে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণসহ লেখাপড়ার জোগান দিই। আগে সাচ্ছন্দ্যে চলতে পারলেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পর থেকে অনেকটা কষ্ট করেই চলতে হয়। এ জন্য এখন মাঝে মাঝে অতিরিক্ত সময় রাইড শেয়ার করি। সকালে অনেক সময়ই নাস্তা হিসেবে কলা রুটি খেয়েই মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ি।’

আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লাভস্ফীতির ফলেই মানুষের এই নাভিশ্বাস বলে মনে করেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছেন। এটাকে লাভস্ফীতি বলা যায়।’

অনেকের আয় কমে গেছে জানিয়ে ক্র্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার নিজের বাসায়ও ১৫ দিনের বাজার খরচে ফুরিয়ে গেছে পুরো মাসের বাজেট। আমি নিজেও খাবার কমিয়ে দিয়েছি স্ত্রীকে বলেছি খাবার কমাতে।’

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো পণ্যের দাম ১০০ ভাগ থেকে বেড়ে ২০০ ভাগ পর্যন্ত হয়েছে। দাম বাড়ার পর বাজারে এখন শিম ১৩০ টাকা, বরবটি ৬০, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৯০ টাকা, গোল বেগুন ১২০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, কচুরলতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ ৩৮০ টাকা, শোল মাছ ৬১০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০ টাকা, পাঙাশ ২২০ টাকা, কই মাছ ২৮০ টাকা।

অন্যদিকে, মোটা চাল ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, বুটের ডাল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, রসুন ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা, আদা ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, চিনি ৯৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, আটা ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৬২ টাকা, ময়দা ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা, লবণ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭৮ টাকা। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি মুরগি ২১০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা কেজি, গরুর গোস্ত ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫০ টাকা।

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :