‘পুলিশ হেফাজতে ছাত্রদল নেতার মৃত্যু’

দুই ওসিসহ ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন গ্রহণের শুনানি আজ

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩১ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সাড়ে চার বছর আগে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগে রাজধানীর দুই থানার ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের ওপর শুনানি হবে আজ বৃহস্পতিবার। এদিন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ শুনানি হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক সৈয়দা হাফসা ঝুমা শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।’

এর আগে গত ১২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিহত মিলনের চাচা বিএনপি নেতা বি.এম. অলি উল্যাহ এ মামলার আবেদন করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান, রমনা মডেল থানার তৎকালীন ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম, ঘটনাকালীন সময়ে শাহবাগ থানায় দায়িত্বরত এসআই শাহরিয়ার রেজা, অমল কৃষ্ণ, সাইদুর রহমান মুন্সি ও সুজন কুমার রায়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৮ সালের ৬ মার্চ সকাল ১০টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার ও সাজার প্রতিবাদে জাকির হোসেন মিলন ও তার সহপাঠী আকরাম হোসেন ফরাজী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করার জন্য রওনা হন। মানববন্ধন শেষে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলসহ মৎস্য ভবনের কাছে পৌঁছালে মিলন, আকরামকে আসামিরাসহ আরও সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসার ও সদস্য মিলে আটক করে নির্যাতন করতে করতে রমনা মডেল থানায় নিয়ে যান। থানায় নিয়েও ওসিসহ অন্যরা তাদের নির্যাতন করেন। পরে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে তাদেরকে শাহবাগ থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে বি.এম. অলি উল্যাহ প্রথমে রমনা ও পরে শাহবাগ থানায় যান। থানার প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করলে জানান, তার অবস্থান বলা যাবে না।

বাদী খোঁজাখুঁজি করেও মিলনকে না পেয়ে পরে জানতে পারেন ৭ মার্চ তাকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। ওই আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানির দিন মিলন বাদীকে জানান, পুলিশ তাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পুলিশ তাকে ভ্যানে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, ডিবি কার্যালয়, শাহবাগ ও রমনা মডেল থানায় খোঁজাখুঁজি করেও মিলনের সন্ধান পাননি বাদী। পরে জানতে পারেন মিলন শাহবাগ থানার হেফাজতেই আছে। বাদী আসামিদের শত অনুনয়-বিনয় করেও সাক্ষাৎ পাননি।

আবেদনে আরও বলা হয়, রিমান্ড শেষে ১১ মার্চ মৃতপ্রায় অবস্থায় মিলনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। কেরানীগঞ্জ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে মিলনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে একজন ফোন দিয়ে মিলনের মৃত্যুর খবর জানান বাদীকে। তিনি ঢামেকে গিয়ে দেখতে পান, মিলনের মরদেহ মর্গের সামনে পড়ে আছে। শরীরে অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান বাদী।
বিলম্বে মামলা করার বিষয়ে বাদী বি.এম. অলি উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে ও বাদীর পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে বাদীকে পুলিশ তিন দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। মামলা করলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়।’

আসামিরা দীর্ঘদিন বাদী ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মামলা করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মানসিকভাবে সাহস সঞ্চয় করে পরিবারের সাথে পরামর্শ করে আদালতে মামলা করলেন বলে জানান বিএনপি নেতা বি.এম. অলি উল্যাহ।

(ঢাকাটাইমস/০৩নভেম্বর/এমআই/এফএ)