শুদ্ধি অভিযান সময়ের দাবি

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১০:০৬

অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ

খালেদা জিয়া কি তবে আবার জেলে যাবেন? দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে বেগম খালেদা জিয়া নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন।সন্তান তারেক রহমান পরিবার পরিজন নিয়ে লন্ডনে আছেন।  সেখান থেকে দলকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।  সুখেই আছেন তারা।  কিন্তু দলের কর্মীরা হয়তো তেমন সুবিধা করতে পারছেন না।  সেজন্য তারা আন্দোলন করতে চাইছে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার জন্য।  সরকার আন্দোলনের সুযোগ দিয়ে আবার কঠোর অবস্থানে কেন যাচ্ছেন বোধগম্য নয়।  তেমনি শান্তি ও অহিংস আন্দোলনের পরিবর্তে বিরোধীদল সহিংসতার আভাস দিচ্ছেন সেটাও বোধগম্য নয়। 

আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি।  ২৯০ বছর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ২৩ বছর পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশি সামরিক শাসকের সঙ্গে সংঘাত করে বেঁচে আছি।  এভাবে আর কতকাল আমাদের লড়াই করতে হবে?

সারা পৃথিবীতে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন হোক আমাদের সকলের কাম্য।  কিন্তু নতুন করে বিএনপি বায়না ধরেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে।  আর সেই সরকার আনতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা অপপ্রচার করে আসছে।  বাংলাদেশের অবস্থা আমি বলছি না খুব ভালো।  তবে সেটাকে উন্নত করতে বিরোধীদলের গঠনমূলক রাজনীতি আমাদের সকলের কাম্য।  আমরা এরই মাঝে আভাস পেয়েছি সরকার নিজেদের দলে শুদ্ধি অভিযান চালাবে।  ফলে দুর্নীতি , নিপীড়ন, নির্যাতন থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবে।  তাতে করে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা উঁচুমাত্রায় পৌঁছে যাবে। 

সরকার নানা ভাবে সফল।  সুতরাং আগামী নির্বাচনে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত।  কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও রাজনীতি সেই বিজয়ের পথে নির্বাচনের আগে থেকেই কাটা ছড়াচ্ছে।  সরকারকে বিব্রত করে, অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যারা ক্ষমতায় যেতে ষড়যন্ত্র করছেন তাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবধান বাণী: খালেদাকে আবার জেলে যেতে হবে।  ওরকম সাবধান বাণী কিন্তু তিনি নিজদলের কর্মী নেতাদেরকেও দিয়েছেন।  জনগণ তাকিয়ে আছে যোগ্যদের পদায়ন, মনোনয়ন ও সম্মানিত করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং সেজন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। জনগণের আশা তারা সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় দেখতে পাবে।

একটি সাধারণ অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে- আমলাদের আধিপত্য।  সরকার সেখানে কি করবে আমরা জানি না- তবে পদ না থাকা সত্ত্বেও সেখানে গণ পদোন্নতি হচ্ছে।  অন্যদিকে চাকুরীর আশায় লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী আবেদনের পর আবেদন করে চলেছেন।  তাদের জন্য সরকার কি ভাবছে সেটা স্পষ্ট নয়।  আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হাল যেমন নড়বড়ে তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।  আমাদের যোগাযোগ খাতে বা বিদ্যুৎ খাতে অনেক উন্নয়ন হলেও শিক্ষা খুবই অবহেলিত। সেখানে প্ৰয়োজন অতিরিক্ত বাজেট।  তাতে করে কর্মসংস্থান হবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব হবে।

শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার পরিধি বৃদ্ধির পক্ষে সুন্দর যুক্তি দিচ্ছিলেন।  আমার কাছে ওনার সেই বক্তব্য ভালো লেগেছে।  অনুষ্ঠানটি ছিল মাননীয় উপাচার্যের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান।  শিক্ষার বিকাশে, নতুনত্ব আনতে আমি ২০১০ সালে একটি নৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।  সারা বিশ্ব আজ নৈতিক শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের নীতিবিদ্যার অধ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে।  কিন্তু আমাদের বিভাগ, কলা অনুষদ এবং একাডেমিক কাউন্সিল সেটা পাস করলেও সিন্ডিকেট সেটিকে অনুমোদন দেয়নি।  অথচ এমন কিছু অপ্রচলিত বিষয়ের প্রসার ঘটানো হয়েছে যা প্রতিদিনের সমালোচনায় স্থান পাচ্ছে। 

এরকম পরিস্থিতিতে আবার একটি চেষ্টা আমি করতে চাই।  নীতিবিদ্যার ব্যাপকতাকে বিবেচনা করে পরিকল্পনা, প্রশাসন, শিক্ষা, আইন, উন্নয়ন, রাজনীতি, পলিসি, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সুষমবন্টন, মানবাধিকার, স্বাধীনতা বিষয়ের একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তাবনা গ্রন্থিত করেছি।  সেটির নাম নির্ধারণ করেছি- শেখ রাসেল সেন্টার ফর এথিক্স এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স।  শেখ রাসেল নামটি বঙ্গবন্ধু রেখেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলে রেখে।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রায় শিশু রাসেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন।  বঙ্গবন্ধু নাকি বঙ্গমাতাকেদার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে শোনাতেন।  এখন আমরা একটি যুদ্ধ দেখছি এবং তার ভয়াবহতাও দেখছি।  আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শান্তির পক্ষে জাতিসংঘে জোরালো যুক্তি ও ভাষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশকে তিনি শান্তির বাংলাদেশ বানাতে চান।  সেই সময় কেন খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে? খালেদা জিয়া কি তবে শান্তির বাংলাদেশ চান না? তিনি তো ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কেন তিনি দেশের জন্য না ভেবে ক্ষমতার কথা ভাবছেন? তিনি কতবার প্রধানমন্ত্রী হলে শান্ত হবে জানতে পারি কি?

এটি একবিংশ শতাব্দী।  আজকের তরুণরা ভিন্নভাবে সবকিছুকে দেখে।  তারা বিশৃঙ্খলা চায় না।  সুতরাং- শান্তির রাজনীতি যেন আমাদের পাথেয় হয়।

দুর্নীতিকে, আমলাতন্ত্রকে, মোকাবেলা না করে উন্নয়ন, শান্তি অর্জন সম্ভব হবে কি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- সবকিছু ঢেলে সাজাবার প্রয়োজন। সবখানে অয্যোগ লোকে ভরে গেছে।  শুধু  খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে দেয়া  সম্ভব হবে কি? লিটমাস টেস্ট হিসেবে গাইবান্ধা নির্বাচনকে জনগণ নিয়েছে।  পেশি শক্তি ও টাকার খেলায় আজও মানুষের মুক্তি বন্দিশালায়।  বঙ্গবন্ধু সেই বন্দিশালা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।  ভারত থেকে পাকিস্তান, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি।  কিন্তু দেশ এখনো কলোনি ও বাজার উভয় রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু সেখান থেকে আমাদের মুক্ত করেছিলেন।  কিন্তু আমার আবার ১৫ আগস্ট থেকে বন্দি আছি।  সেই মুক্তির স্বাধ যেন জাতি আপনার হাত থেকে জনগণ পায় যেভাবে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন।  আমাদের কষ্ট হচ্ছে সংসার চালাতে।  অপরদিকে প্রতিদিন রাজপথে নতুন নতুন মডেলের গাড়ি নামছে।  সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে।  দুর্বৃত্তরা এখন বুক ফুলিয়ে চলছে।  কেবল খালেদা জিয়াকে জেলে নিলেই সমাধান হবে কি? আপনার আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।  অয্যোগদের বিদায় দিন- দল থেকে , সরকার থেকে, সমাজ থেকে।  বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমলাতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  আর সেজন্য শিক্ষায় মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। 

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড- সেটা এখন যাদের হাতে তাদের যোগ্যতা নিয়ে সমাজে সমুসা সিঙ্গাড়া খেতে খেতে হাসাহাসি চলে। সেখানে চোরেরা দাপটে চলে।  জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেয়ার প্রয়োজন পড়লে দ্বিধা করা ভুল হবে। 

মানুষ যোগ্য ব্যক্তির শাসন চায়। সেজন্য শুদ্ধি অভিযান সময়ের দাবি। আপনি বাংলাদেশকে র‌্যাংকিংয়ে উন্নত করে মধ্যে আয়ের দেশ বানিয়েছেন, আজকের তরুণদের আশা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র‌্যাংকিয়ে উন্নত করতে ভালো মানের শিক্ষক , উচ্চমানের উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।  প্ৰয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক-উপাচার্য আনলে জনগণ আশার আলো দেখবে।  আপনি কি তরুণদের কথা শুনবেন কি? আমাদের কেউ কেউ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার করছেন।  এভাবে শিক্ষার উন্নয়ন কোথাও সম্ভব হয়েছে কি?

লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়