মাগুরায় প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হাসানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

আব্দুল আজিজ ,মাগুরা
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১৯:১২

মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউল হাসানের বিরুদ্ধে গত ৩০ অক্টোবর ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া ভাউচারে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ ২৬টি অভিযোগ মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহীদ ইসলাম মোহাম্মদ।

অভিযোগের অনুলিপি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্টমন্ত্রী, চেয়ারম্যান দুদক, জেলা প্রশাসক মাগুরার কার্যালয় , এমপি মাগুরা-১ ও ২ সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ।

অভিযোগগুলো, বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান ধ্বংস। এমপি-ডিসি মহোদয়ের নাম ভাঙানো। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা ব্যতীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট কোচিংয়ে সহায়তা। শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য সৃষ্টি।পুকুর ভরাট ও খনন বাবদ এবং স্কুল অঙ্গন ডেভেলপের জন্য পাওয়া সরকারি বরাদ্ধকৃত অর্থের তদারকি না করা। স্কুলের ১.৫ শতক জমি টাকার মাধ্যমে জনস্বার্থে ছেড়ে দেয়া ও বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে ৩ শতক জমি বাচ্চু নামে এক ব্যক্তিকে ভোগ করতে দেওয়া। যোগ্য ,সৎ ও প্রতিবাদী শিক্ষক কর্মচারীদেরকে বদলি ও নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে পেটানো। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিজি প্রতিনিধি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্য,বিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ নষ্ট করা। প্রত্যেক শ্রেণি শাখায় ৬০ জনের স্থলে ৮০ জন ভর্তি করা। ১৬টি শাখায় অবৈধ্য ভর্তির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ভর্তি বাণিজ্য। সরকারি কোয়ার্টারে না থাকা। যোগ্য, সৎ ও প্রতিবাদী শিক্ষক কর্মচারীদেরকে প্রধান শিক্ষক ও কেরানির কক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়া। ক্লাস না নেয়া ও ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে কিনা দেখভাল না করা। অকৃতকার্য শিক্ষর্থীদেরকে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে প্রমোশন বাণিজ্য। অফিস চালান মালি মিজানুরকে দিয়ে।

বিদ্যালয়ের অর্থ ভুয়া ভাউচারে খরচ। প্রতিদিন টিফিন না দেওয়া এবং নিম্নমানের অসাস্থ্যকর টিফিন ও জাঙ্ক ফুড দিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করা। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি/ ফ্ল্যাট ক্রয়, ব্যবসা ও আয়কর ফাঁকি। বিদ্যালয় পুকুর খানের মাটি নিজে যোগসাজকে বিক্রি করে নৈশ্যপ্রহরী জাকির হোসেনের এর উপর দায় চাপানো ।মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামে এক সহকারি শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় হয়রানি যিনি আদালত কর্তৃক নির্দেশ প্রমাণিত।প্রকাশ্য দিবালোক শিক্ষক –কর্মচারী, স্থানীয় জনগণ ও ছাত্রদের সম্মুখে শহীদ ইসলাম মোহাম্মদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও চেয়ার দিয়ে

মারমুখী হয়ে লাঞ্চিত করা ও বিদ্যালয়ে না এসে স্বাক্ষর করা। শ্রেণী শাখায় ৬০ জনের স্থলে ৮০ জন ভর্তির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানান, ডিসি মহোদয় এবং

অন্যান্য নেতাদের সুপারিশে আমাকে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা -২০১১ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী শুন্য আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, আসল ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ডিসি মহোদয় অপেক্ষমাণ তালিকায় যেগুলো টিক দিয়ে দেন আমি সেগুলোই ভর্তি করি।

কিন্তু ভর্তি নীতিমালা -২০১১ এর ৬.১ ধারা অনুযায়ী ভর্তি কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ষষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত অন্য শ্রেণিতে ভর্তির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি। কিন্তু সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা -২০১১ এর ৬.৩ ধারা দেখা যায় ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শুণ্য আসনের সংখ্যা উল্লেখপূর্বক ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করবেন।

এ ছাড়া ভর্তি কমিটি জাতীয়/স্থানীয় পত্রিকায়/ ওয়েবসাইট ইত্যাদিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেবে।

উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা করেন। মামলায় পরাজিত হয়ে বর্তমানে তিনি, জিয়াউল হাসান, অভিযুক্ত। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন,আমি উচ্চ আদালতে আপিল করব।

এ বিষয়ে মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক তাকে হুমকি দিয়েছে প্রয়োজনে আমি স্কুলের বিল্ডিংয়ে বিক্রয় করে আপনার নামে মামলা চালাবো। আর আপনার মামলা চালাতে হবে বাবার জমি বিক্রি করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউল হাসানের মতো ভয়ংকর মানুষ আর হতে পারে না। বদলি ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। তিনি আমাদের বস নন ,যেন যম। আমার নামে যত অভিযোগ সব ভুয়া, মিথ্যা, বানোয়াট। আমি যা করেছি, ডিসি মহাদয়ের অনুমতি সাপেক্ষেই করেছি। এমনটায় জানান প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউল হাসান।’

অভিযোগের বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রসাশক ড. মো. আশরাফুল আলমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি দৈনিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি কোনো অভিযোগ পায়নি। অপেক্ষামাণ তালিকা থেকে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অপেক্ষামাণ তালিকা থেকে কমিটি যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই ভর্তি করেছে।

শ্রেণিশাখায় ৬০ জনের স্থলে ৮০ জন ভর্তির বিষয়ে তিনি জানান,অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছেলে-মেয়ে আছে,অনেকের কোটা আছে, অনেকে বদলি হয়ে আসে।

(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :