দশ বছর আগেই হৃদরোগ আছে কিনা বোঝার উপায়

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৯

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

নীরব ঘাতক হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে প্রতি বছর এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। প্রায়শই হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গগুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাথমিক উপসর্গগুলো দেখে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা মতে, হৃদরোগের প্রাথমিক উপসর্গ খেয়াল না করলে তার ফলে কেবল মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকলেও অনেক জটিলতা নিয়ে বাঁচতে হয়।

যখন হৃদপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। অথবা রক্ত চলাচলের শিরা-উপশিরাগুলোতে কোনো ব্লক হলে। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ—এগুলি মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ।

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হয় না। সমস্যা হল কখনও কখনও বুকে কোনো ধরনের ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না তা খুব ভালো করে বোঝা যায় না। সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণগুলো- ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, বদহজমের সমস্যা,বুকে চাপ ধরা ভারী ভাব অনুভব করা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা।

সাধারণত হৃদরোগ সব সময়ে যে হঠাৎ হবে, এমনটা নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীরব ঘাতকের মতো হাজির হয় হৃদরোগ। কখনও কখনও বড় বিপদের আগে থেকেই সঙ্কেত দিতে থাকে শরীর। কিন্তু এই উপসর্গগুলো আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য রোগের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। কিছু ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকেও সেভাবে কোনও ব্যথাও অনুভব করেন না রোগী। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঘটে যায় বিপদ।

সম্প্রতি গবেষণায় চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদ্‌রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে দশ বছর আগেও। এমনই একটি লক্ষণ হল বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা পেকটোরিস।

অ্যানজাইনা পেকটোরিস হল করোনারি ধমনীর অসুখ। বুকে চাপ ধরা, ভারী লাগা, বুকে আঁটসাঁট লাগা বা ব্যথা এই সমস্যার লক্ষণ। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অ্যানজাইনা পেকটোরিস মূলত ৪ ধরনের। স্টেবল অ্যানজাইনা, আনস্টেবল অ্যানজাইনা, মাইক্রোভাসকুলার অ্যানজাইনা এবং ভাসোস্পাস্টিক অ্যানজাইনা। অনেক সময়ে মানুষ এই ব্যথাকে গ্যাসের সমস্যা বলে ভুল করেন। বুকের কোন ব্যথা গ্যাসের থেকে হচ্ছে আর কোনটি অ্যানজাইনা পেকটোরিস, তা বোঝা সম্ভব নয় সাধারণ মানুষের পক্ষে। তাই নিশ্চিত থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বিচক্ষণতার পরিচয়।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণাপত্রে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দশ বছর আগেই অ্যানজাইনা পেকটোরিস দেখা দিতে পারে। ২০০২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে এই গবেষণায়। বুকে ব্যথা বা হৃদ্‌যন্ত্রের রোগের কোনও পূর্ব ইতিহাস নেই, এমন ৫ লক্ষেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির তথ্য খতিয়ে দেখেন গবেষকরা।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রথম বার বুকে ব্যথা হওয়ার এক বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৫ শতাংশ। হাসপাতালে যাওয়ার পরেও পুরোপুরি দূর হয়নি ঝুঁকি। পরবর্তী দশ বছরেও থেকে গিয়েছে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। গবেষকদের মতে, যাদের অ্যানজাইনা পেকটোরিসের ইতিহাস রয়েছে কিংবা ডাক্তারি পরিভাষায় যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়।

 

বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা পেকটোরিস থেকে বাঁচবেন যেভাবে

অ্যানজাইনা পেকটোরিসকে হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাবস্থা বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হৃৎপিন্ডজনিত বুক ব্যথা। হৃৎপেশী যখন  অক্সিজেন সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন বুক নিষ্পেষিত হচ্ছে বা দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন মারাত্মক অস্বস্তি অনুভূত হলে সে ধরনের বুক ব্যথা হলো অ্যানজাইনা পেকটোরিস।

অ্যানজাইনা পেকটোরিসের লক্ষণগুলো হলো- বক্ষাস্থি বা স্টার্নাম পেছনে বুকে ব্যথা হওয়া। ব্যয়াম বা অন্য শারীরিক কাজে, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ভোজন, শীতকাল বা আতংকে বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা ৫-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। গলা, কাঁধ, চোয়াল, বাহু, পিঠ এমনকি দাঁতেও ছড়াতে পারে। অনেক সময় ব্যথা কোথেকে আসছে তাও বোঝা যায় না। বুকে জ্বালাপোড়া, চাপ, নিষ্পেষণ বা আড়ষ্টভাব সৃষ্টি হয়ে অস্বস্তির প্রকাশ ঘটায়। বুকে ব্যথা ছাড়াও হজমে গন্ডগোল ও বমি বমি ভাব হতে পারে। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া কিংবা দম ফুরিয়ে হাঁপানী দেখা দিতে পারে। অনেক রোগী টের পায় না, তবে কাঁধ ও বাহু ভারী হয়ে আসে। বুকে ব্যথার সাথে সাথে ঘাম হয়, মাথা ঝিমঝিম করে বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। রোগী চিন্তান্বিত থাকে, মাথা ঝুলে থাকে। সারাদিন দুর্বল ও পরিশ্রান্ত থাকে, সহজ কাজও কঠিন মনে হয়।

 

প্রতিরোধের উপায়


সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া এবং তা ধরে রাখাই হচ্ছে অ্যানজাইনা প্রতিরােধের প্রধান উপায় । এজন্যে কিছু বিষয় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা উচিত। কিছু বিষয় আছে যার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই, যেমন-বয়স, লিঙ্গভেদ, হৃদরোগে ও অ্যানজাইনার পারিবারিক ইতিহাস। যে সব বিষয় আমাদের নাগালে তার মধ্যে রয়েছে ও হাঁটা-চলা বা ব্যায়াম করা, স্থূলতা প্রতিরোধ করা, সুষম ও হৃদবান্ধব খাবার খাওয়া, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান ত্যাগ করা, মদপানের ধারে কাছে না যাওয়া, বছরে একবার সম্পূর্ণ শরীরের চেকআপ করিয়ে নেওয়া। বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসায় সফলতা পেতে আপনাকে ডাক্তারের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে এবং আপনি কি কি সমস্যা অনুভব করছেন তা ডাক্তারের কাছে খুলে বলতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০ নভেম্বর/আরজেড)