দামুড়হুদায় মাধ্যমিকে সাজানো নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি পাচ্ছেন সেই আলোচিতরা!

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৪:০৪ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৩:১৩

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ি-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারীদের শূন্যপদে অর্থের বিনিময়ে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি গত ২৮ জুন তারিখের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছিলেন। অথচ সেই চারজনের মধ্য থেকেই নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু, পরিচালনা পরিষদের (এসএমসি) সভাপতি সোহরাব হোসেন এবং সদস্য রাশেদীন আমীন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি ভিক্টোরিয়া জুবিলী (ভি,জে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেনের যোগসাজশে কথিত এই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, এ দুটি পদে সব আবেদনকারীকে ডাকা হয়নি। ডামি প্রার্থীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। যে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। এই নিয়োগ পরীক্ষাকে অবৈধ দাবি করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের আবেদন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের একজন রকিবুল হাসান। তিনি বলেন, তার অভিযোগ, সকল নিয়ম মেনে আবেদন করলেও নিয়োগ পরীক্ষার দিন তাকে ডাকা হয়নি।

গত ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে রকিবুল দাবি করেছেন, ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে গোপালপুর গ্রামের ফরজ আলীর ছেলে রিপন আলীকে নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ১০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলী (ভি জে) উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

রকিবুল বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের চারটি শূন্যপদে চারজনের কাছ থেকে ৪১ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়ার প্রক্রিয়ার অভিযোগে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। খবর প্রকাশের পর ডিজির প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরী পরীক্ষা গ্রহণের একদিন আগে ২৭ জুন তা স্থগিত ঘোষণা করেন। সে সময়ে যে চারজনের কাছ থেকে চাকরির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ শোনা গিয়েছিল, রিপন আলী তাদের একজন।’

এদিকে এই বিদ্যালয়ের এসএমসির সাবেক একজন সভাপতি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবারের কথিত নিয়োগ পরীক্ষায় আয়া পদে ছাগবার আলীর মেয়ে জুলেখা খাতুনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলাবাড়ী রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট, আয়া, নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এসব পদে ৪০ জন আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি সভাপতি গোপনে ৪১ লাখ টাকায় গোপালপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুর রাব্বিকে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, ফরজ আলীর ছেলে রিপন আলীকে নিরাপত্তা কর্মী, রামনগর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে ইয়াছিন আলীকে অফিস সহায়ক ও ছাগবার আলীর মেয়ে জুলেখা খাতুনকে আয়া পদের জন্য চূড়ান্ত করেন। এ ঘটনা এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে চাকরি প্রত্যাশীসহ অভিভাবক মহল ক্ষুব্ধ হন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজির প্রতিনিধি দিল আরা চৌধুরী ২৮ জুনের নিয়োগ পরীক্ষা ২৭ জুন স্থগিত ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন, পরবর্তীতে পুনঃনিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু, জেলা প্রশাসককে অবগত করানো ছাড়াই গোপনে দুটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

এদিকে, উদ্দেশ্য সফল করতে সংঘবদ্ধ চক্রটি এবার ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরীর পরিবর্তে ভিক্টোরিয়া জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেনকে মনোনীত করেন। এরপর সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন।

জানতে চাইলে বিলাল হোসেন বলেন,‘ এই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কতজন আবেদন করেছেন তাও জানি না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পত্রের আলোকে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান সরাসরি স্বীকার করেন,‘ অর্থ কেলেঙ্কারীর কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।’ এই কর্মকর্তা সরাসরি বলেন, এসএমসি সকলকে ম্যানেজ করেই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে। এখন আবার এসব প্রশ্ন ওঠছে কেন ?’

প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ও সভাপতি সোহরাব হোসেন অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবারের এই নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান তা অবগত নন বলে জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে একটি দরখাস্ত জমা পড়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :