বাসে ই-টিকিট: সুফল পাচ্ছে যাত্রীরা, ভাড়া নিয়ে বচসাও নেই

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১৮:১৪

মিরপুর অঞ্চল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী সব বাসে ই-টিকিটের সুফল পাচ্ছে যাত্রীরা। ভাড়া নিয়ে পরিবহন কর্মীদের সঙ্গে বচসার চিত্রও প্রায় নেই। তবে ই-টিকিট চালুর পরে বাসের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ বন্ধ হওয়ায় বাস কমার কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে সর্বক্ষেত্রে। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি ও হয়রানি রোধে রাজধানীর মিরপুর এলাকার সব গাড়িতে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

গত রবিবার এই পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করার ফলে একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বচসা-বিবাদও লাঘব হয়েছে। ফলে স্বস্তিতেই যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।

তবে কিছু অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। তারা বলছেন, ই-টিকিটিংয়ের কারণে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমছে। আবার নির্ধারিত ভাড়া দেওয়ার পর খুচরা টাকা ফেরত দিতে গিয়েও কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

পরিস্থান পরিবহনের যাত্রী মামুনুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ই-টিকিটিং পদ্ধতির আগে প্রায়েই গাড়ির স্টাফদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতো। সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতো তারা। এখন আর সেই সুযোগ নেই। গাড়িতে উঠলে সরকার নির্ধারিত টাকার পরিমানে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।’

মাছুদ হাসান নামে মিরপুরের আরেক যাত্রী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইটিকিট হওয়ায় যাত্রীদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। তবে খুচরা টাকার অংকে ভাড়া দিতে গেলে একটু ঝামেলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুচরা টাকা ফেরত দিচ্ছে না টিকিট চেকাররা। তারা খুচরা টাকা না থাকার কথা বলছে।’

ভাড়া আদায় করা বাসের সহকারী চালকরা বলছেন, ই-টিকিট যখন ছিল না তখন তারা ১২ টাকার ভাড়া এলে ভাংতি না থাকলে ২ টাকা কম নিতে পারতেন। এখন ইটিকিট হওয়ায় মালিকদের সম্পূর্ণ হিসাব দিতে হয়। যেকারণে টাকা কম রাখার সুযোগ নেই।

আবার নির্ধারিত টাকা রাখতে গিয়ে দুই থেকে পাঁচ টাকার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই অনেক সময় খুচরা না থাকার কারনে দুই এক টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয় না।

মিরপুর অঞ্চলের ৮টি কোম্পানির গাড়ি দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ই-টিকিটিং চালু করা হয়। পরীক্ষামূলক সেই ব্যবস্থাপনা গত ১৩ নভেম্বর থেকে মিরপুর অঞ্চল থেকে চলাচলকারী ৩০টি কোম্পানির সব বাসের ওপর কার্যকর করা হয়।

বাস মালিক ও শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য মতে, আগে চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থায় প্রতিদিন বাসপ্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বা এর কাছাকাছি মতো ভাড়া পেতেন মালিককরা। ই-টিকিটিংয়ে এখন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা বা এর কাছাকছি পাচ্ছেন তারা। আগে প্রতি ট্রিপে চালক, কন্ডাকটর ও হেলপার ৩৫০ টাকা করে পেতেন। এখন তিন ট্রিপে ১৬০০ থেকে ১৯০০ টাকা পাচ্ছেন তারা।

১২ নভেম্বর শনিবার রাজধানীর পরিবাগে ‘মিরপুরের সব গণপরিবহনে ই-টিকিটিং’ চালুর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযোগ পেয়ে আসছি। সেগুলো দূর করার পরিবহন মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। নানা সময়ে বাস কোম্পানিদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। ২১টি সার্কুলার দিয়েছি ও ৯টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয় জানিয়ে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ই-টিকিটিং তদারকরি জন্য পরিবহন মালিক সমিতি একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। দুজন কর্মকর্তা এটি সমন্বয় করবেন। এছাড়া তিনটি নম্বর দিয়ে হটলাইন করা হয়েছে। সেগুলি হলো ০১৬১৮৯৩৩৫৩১, ০১৬১৮৯৩৬১৮৫ এবং ০১৮৭০১৪৬৪২২।

তিনি বলেন, ‘এসব হটলাইনে অভিযোগ দেওয়া যাবে। সমিতির পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ জন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বিষয়টি দেখবেন। পাশাপাশি কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তারাও স্পেশাল চেকার রাখবেন।’

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘মিরপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৩০ কোম্পানির বাসে রবিবার থেকেই ই-টিকিটিং চালু হচ্ছে। আর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী সব কোম্পানির বাস ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে।’

‘এছাড়া আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরতলীতে (গাজীপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, মুন্সিগঞ্জ) চলাচলকারী ৩৭টি কোম্পানির বাসও ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবে তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট ৫ হাজার ৬৫০টি বাস চলাচল করছে। এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে চলে ৩ হাজার ১১৪টি এবং শহরতলীতে চলে ২ হাজার ৩৩৬টি।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :