ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ২২:১৪ | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৯

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে ছাত্র রাজনীতির মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজের সক্রিয়তার জানান দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। তদবির লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকবেন বলে সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর হতে পারে বলে জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, সংকটে দলের পাশে থাকা, বিতর্কমুক্ত নেতাদের বিবেচনায় রাখছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ বিবেচনায় নেতাকর্মীদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে প্রায় দুই ডজন পদপ্রত্যাশীর নাম।

বিশেষ করে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা তথা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের নজর কাড়তে প্রতিদিনই ধানমন্ডিতে সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজির হন পদপ্রত্যাশীরা। নিজের নামটা স্মরণ করিয়ে দিতে নেতাদের বাড়িতে গিয়ে সালাম দেয়া, দোয়া চাওয়া যেন নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কে পরিণত করেছেন। সকাল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজের প্রার্থিতার কথা জানান দেন রাত পর্যন্ত।

শুধু তাই নয়, কেউ কেউ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অনেক পদপ্রত্যাশী নেতা তাকে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজও পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন তিনি।

সরজমিন আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার পরেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ পদপ্রত্যাশীদের। নিজের অনুসারীদের নিয়ে শুভ কামনা জানিয়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে স্লোগান। ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশাপাশি নেতাদের বাড়ির সামনে বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার টানিয়ে নিজের প্রার্থিতার কথাও জানান দিচ্ছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন, সাদ বিন কাদের চৌধুরী, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, রাকিব হোসাইন, ইফতেখার আহমেদ চৌ. সজীব, সৈয়দ আরিফ হোসেন, নারী কোটায় তিলোত্তমা শিকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহম্মেদ রাসেল, মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, উপবিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, ক্রীড়া সম্পাদক মো. আল আমীন সিদ্দিক সুজন, কর্মসংস্থান বিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, উপগণশিক্ষা সম্পাদক সোলায়মান ইসলাম মুন্না, আপ্যায়ন সম্পাদক আশরাফুল আলম ফাহাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপসম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয় ও উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।

এছাড়া আরও আলোচনায় আছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, ধর্ম সম্পাদক তুহিন রেজা, পরিবেশ সম্পাদক শামীম পারভেজ, সাহিত্য সম্পাদক আহমেদ মনির তাঈফ।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতাকর্মীরা যাদেরকে এগিয়ে রাখছেন তাদের অনেকেই টিকবেন না। বয়সের ভার, পারিবারিক রাজনীতি ও বিভিন্ন বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে অনেকেই বাদ পড়ে যাবেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে করোনার মধ্যে ছাত্রলীগের হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সুযোগ করে দেন তাহলে এই সেবা নিয়মিত করতে চাই।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী পরিবারের সন্তান আমি। দলের জন্য ছাত্রলীগের জন্য সবসময় কাজ করেছি ভবিষ্যতেও করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেন তাহলে পালন করব।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নেত্রী যখন সময় দেবেন তখনই সম্মেলন হবে। যাকে ছাত্রলীগের জন্য যোগ্য নেতা মনে করেন তাকেই সংগঠনের জন্য নির্বাচিত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু ছাত্রলীগ নয় সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আওয়ামী লীগের নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের একটি অংশ।’

২০১৮ সালের মে মাসে ছাত্রলীগের ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। তবে মাত্র এক বছরের মাথায় অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন মাস পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

(ঢাকটাইমস/১৭নভেম্বর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :