গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণেও শেখ হাসিনা

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
| আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১৩:৫০ | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৭

রাজনৈতিক পর্যায়ে বুঝদার শ্রেণির অংশগ্রহণ চাইছি। যারা আজকের লেখাটি পড়বেন, পড়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কথা না বাড়িয়ে এগোনো যাক। একজন সাধারণ মানুষ হয়ে বলছি, গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ করেও শেখ হাসিনা নিজের জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে?

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনেকেই দিয়েছেন। মানুষ বোঝে যে, ‘এই ধরণের শাসনরীতি মূলত এমন একটি শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে অথবা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে।

প্রকারন্তরে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জনশ্রেণির সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র। অনেকেই আবার তালগোল পাকিয়ে আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত উক্তিকে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসাবে ধরে নিয়ে উদাহরণও দিয়ে বসে। অথচ, লিংকন ফলত গণতান্ত্রিক সরকারের যে ধর্ম, সেই রূপের ব্যাখা করতে যেয়ে বলেছিলেন যে, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।

চলুন, আব্রাহাম লিংকনের চিরন্তন উক্তিকে ঘিরে ব্যাখাকরত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকার উর্বর গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট ছুঁয়ে আচ্ছন্ন কিনা, তা প্রমাণ করে দিই।

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের তিনটি জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ভোটে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই ভোট নিয়ে একটি অংশের দাবি ছিল, ক্ষেত্রবিশেষ নিরপেক্ষভাবে তা হয়নি। কিন্তু জনশ্রেণির অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিরোধিতা কেহ করেনি। সবাই বলেছে, হ্যাঁ, মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেছে। তাহলে লিংকনের প্রথম শর্ত পূরণে তথা জনগনের অংশগ্রহণে ভোটগুলো হয়েছে, এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থাকতে পেরেছে। এখন বিচ্ছিন্ন বা জোরালো কোনো অনিয়ম বা ঝগড়াঝাটির দায় তো আওয়ামী লীগ নেবে না।

নির্বাচন করার দায়িত্ব শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের। আওয়ামী লীগ হলো অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা একটি দল। এখন নির্বাচন কমিশন কোনো টার্মে যদি সুন্দর নির্বাচন না করতে পারে, তার দায় আওয়ামী লীগ নিতে যাবে কেন? কিন্তু, এটা তো সত্যি ভোট প্রদানে বাংলাদেশের মানুষ থেকেছে এবং তারা গিয়েছে।

২০১৮ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো হয়েছে। নিবন্ধিত প্রায় সকল রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জনসাধারণও ভোট কেন্দ্রে যায়।

খুব স্পষ্ট করে বলা শ্রেয় যে, একটি গণতান্ত্রিক সরকার পেতে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল অতি অবশ্যই হস্তক্ষেপ করার বাস্তবতায় বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সামর্থ্যে থাকে না, যদি সেই রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠী অতি মাত্রায় তাঁদেরকে প্রত্যাশা না করে। তাহলে ফল দাঁড়াচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের প্রতি জনমানুষের আস্থা ছিল। সঙ্গত যুক্তিতে মানুষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে অতিমাত্রায় প্রত্যাশা করেছে এবং যা হবার হোক, আওয়ামী লীগকে চাই- এমন সাংস্কৃতিক মনবোধের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা হতাশও হয়নি। কাজেই গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে জনগণের অংশগ্রহণেই তা নিষ্পত্তি ছিল।

বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বাস্তুবতায় শ্রেষ্ঠ দল, তা মানতে কারও কি কোনো আপত্তি আছে? মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তা সুস্বীকৃত। ২০০৯ সালে যে সরকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, জনগোষ্ঠী একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল কিনা? এরপর দেশের মানুষ জেনে যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশে বিকল্প নেতা অন্য বলয় থেকে তৈরিও হয় নাই।

আব্রাহাম লিংকনের দ্বিতীয় শর্ত ফলত নির্বাচিত সরকার দলের ওপর বর্তায়। জনগণের দ্বারা বলতে কী বোঝায়? এক লাইনের সংজ্ঞায় জনগণের অংশগ্রহণ আবার জনগণের দ্বারা- একই ভূমিকায় দুই অর্থ তিনি দাঁড় করান নাই। অর্থাৎ জনগণের দ্বারা শাসনকর্ম চলতে হবে। সেই জনগনের ‘দ্বারা’ কিভাবে প্রমাণিত সত্য হিসাবে উপস্থাপিত হবে?

বঙ্গবন্ধু তনয়াকে দেখছেন তো অনেকদিনই হলো। চারবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। আপনারা কি লক্ষ্য করেন না যে, যখনই তিনি বিদেশ ভ্রমণ করে আসেন, বিদেশি রাষ্ট্রনায়ক বা স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে ফেরেন, তিনি আয়োজন করে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তার বিদেশ ভ্রমণের সফলতা, বাস্তবতা, ফলাফল নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। কেন তিনি এমন সংস্কৃতিকে ইন্ট্রুডিউস করেছেন? এমন তো না করলেও পারতেন। তিনি ফলত জানাতে চান, দেশ চলছে জনগণের দ্বারা। দেশ চলবেও জনগণের দ্বারা। তিনি কেবল দেশের উচ্চ বা শীর্ষজন প্রতিনিধি মাত্র। তিনি খুবই স্পষ্ট করে তখন বলতে থাকেন, আমরা কিভাবে এগোতে পারছি, কিভাবে পারবো, কী কী চুক্তি হলে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। মোদ্দকথা, বিদেশ ভ্রমণের টুকিটাকি তুলে ধরতে যেয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুরো বাংলাদেশের কৃষি, শিল্পখাতসহ অন্যান্য বিষয়ের হাল হকিকত ফলত জনগণকে জানিয়ে বলতে চান যে, আমি ঠিক পথে আছি কিনা!

নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, এই সকল সংবাদ সম্মেলন হওয়ার পরে তিনি কয়েকদিন অপেক্ষা করেন। দেখতে চান, জানতে চান, তাঁর কথার ওপর জনগণ খুশি আছে কিনা! কারণ, তিনি মনে-প্রাণে ধারণ করেন, বাংলাদেশ চলতে হবে জনগণের দ্বারা। কাজেই দেশবাসীকে বলতে চাইছি, প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন, তখন কী গেল ১৪ বছরে মানি না মানি না- এমন স্লোগানে বাংলাদেশকে দেখা গেছে?

শেখ হাসিনা হলো সেই গণতান্ত্রিক মন নিয়ে চলতে থাকা রাষ্ট্রনায়ক, যিনি জনগণের সিদ্ধান্তের বাইরে চলতে জানেনই না। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনশ্রেণির মত, যুক্তিকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি জানেন যে, দেশে ধর্মপ্রাণ সত্তার চেয়ে ধর্মান্ধ বেশি, তবু তিনি বলে থাকেন যে, ওদেরকে বোঝাও, যেন বিপথে না যেতে পারে। মাদ্রাসাশিক্ষাকেও গুরুত্ব দাও, দেখবে ওরাও একদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থাকবে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসবে, বাংলাদেশকেও।

আব্রাহাম লিংকনের শেষ যুক্তি হলো, জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক সরকারকে নিবেদিত থাকতে হবে। ১৪ নভেম্বর, ২০২২-এর তারিখটিই ধরি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইস্যু নিয়ে বক্তব্যকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেলেন যে, শেষমেশ তিনি বললেন, যে ৮ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তোমরা কথা বলছো, জনগণের কল্যাণে এই এই খাতে ব্যয় করেছি।

শেখ হাসিনা চরিত্রের এই জবাবদিহিতা তাঁকে মহান, শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়। জনগণের জন্য কাজ করতে থেকে উন্নয়নের অভিযাত্রায় থাকলেন প্রায় ১৪ বছর। ক্লান্ত হন না। চারপাশে একটু অযাচিত গুঞ্জনের সুর কানে এলেই জবাবদিহিতা করে নৈতিকতার একটা পথ দেখান। যে পথে আমি ও আপনি কেহ নেই। তিনিই এই পথের পথিক ও মালিক। বাংলাদেশ কিভাবে এগোবে গণতান্ত্রিক শেকড়কে আঁকড়ে ধরে, তা শেখ হাসিনাই দেখিয়েছেন।

শেখ হাসিনা, হয়েছিলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা। আজ পরিণত হয়ে গণতন্ত্রের নতুন নতুন রূপ হাজির করে বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ যা বলবে, তাই হতে হবে। তিনি বলতে পেরেছেন, হ্যাঁ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য- এমন শর্ত পূরণ করেই চলেছি। অধ্যাপক গেটেল বলেছিলেন, যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী তাই গণতন্ত্র। শেখ হাসিনা বলবেন হয়তো, দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার গোষ্ঠী যখন তোমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তখন গণতন্ত্রকে জনগণের কল্যাণের কোর্টে রেখে বল, চলো এগিয়ে যাই।

গণতন্ত্র একটি বৃক্ষের মত। অনেক ডালপালায় একটি শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে নিজেদের উপযোগী শাসন প্রত্যাশা করে তা ৩০ কিংবা ৩৫ রকমের শাখায় বিস্তৃত। বাংলাদেশের জনগণের এও বুঝতে হবে, গণতন্ত্র মানে শুধু ভোটতন্ত্র নয়।

নাগরিকশ্রেণি শুধুমাত্র পাঁচ বছর পর ভোট প্রদান করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করে বলবে, গণতান্ত্রিক দেশে আছি, গণতন্ত্র- এমন করে নয়। সরকারের জবাবদিহিতা থাকতে হবে, তা শুধু সংসদীয় গণতন্ত্রের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে আলোচনা করে নয়। সাধারণ মানুষের কাছেও সরকার প্রধানের মাসিক বার্তা থাকার মধ্য দিয়েও একধরণের গণতন্ত্রের বিকাশ। গণতন্ত্রের সাধারণ ও অসাধারণ শর্ত পূরণ করেই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, যা একদিন না একদিন পাঠ্য পুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করি।

শেখ হাসিনার মন পড়ে থাকে শাসনরীতির উচ্চস্থলে, যেখানে গণতন্ত্র তাঁর একমাত্র সঙ্গী। গড়পড়তা চিন্তা করে তাই জনশ্রেণির একাংশ সিদ্ধান্ত দিলেই চলবে না, বিদগ্ধশ্রেণি গবেষণা করবেই। শেখ হাসিনার মধ্যকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রমাণাদি নিয়ে তাঁরা কাজ করবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও শাসনরীতি পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত হয়ে ইতিহাসকেও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করার সুযোগ আছে।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলী​র সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :