ঈমানদারের জন্যে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা ফরজ

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১৫ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৮

ইসলাম ডেস্ক,ঢাকা টাইমস

মহান আল্লাহতায়ালা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। বিশ্বজাহানের সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন তিনি। আল্লাহতায়ালা আসমান, জমিন, গ্রহ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, মানুষ, জিন, প্রাণি, উদ্ভিদসহ যা কিছু আছে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিতেই রয়েছে নিপুণ শৈল্পিকতার ছোঁয়া। তাঁর অণু থেকে অণু পরিমাণ সৃষ্টিতেও রয়েছে সূক্ষ্ম শিল্পের ছাপ। এই পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র এবং বিশ্ব—সব কিছুই আবর্তিত হয় এক সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে। আর সব সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে নিখুঁত সামঞ্জস্যতা, যা মহান আল্লাহতায়ালারই সৃষ্টি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ৭)

আল্লাহতায়ালা বলেন, পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবর্তীণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়, তিনি হলেন যাঁর রয়েছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই। তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে। তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনেরও তারা মালিক নয়। (সুরা : ফুরকান, আয়াত: ১-৩)

আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই। নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহতায়ালা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে। (সুরা : বাকারা, আয়াত: ১৬৩-১৬৪)

মহান আল্লাহই গোটা সৃষ্টির রিযিকদাতা। তিনিই বিশ্বের সব প্রাণীকে রিযিক দান করেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আর ভূপৃষ্ঠে যত প্রাণী বিচরণ করে তাদের সবারই রিযিক আল্লাহ দিয়ে থাকেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত-৬)।

আল্লাহই মানুষের জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কীরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে নির্জীব করবেন, পরে আবার জীবন্ত করবেন। অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৮)।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। ’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)

মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি দিয়েছেন অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর। ’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬৪)

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান” [সূরা বাক্বারাহ (২):২৫৫]

সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে আল্লাহর একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন অগণিত নবী ও রাসূল (আ:)। জগতের মহান প্রভু, রাব্বুল আলামীনের প্রতিনিধি বা খলীফা হয়ে বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য এসেছিলেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন নবী (আ:), আবার কেউ বা আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল (আ:)। আল্লাহ ও রাসুল নাম দুটি, তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ ও রিসালতের একে অপরের পরিপূরক।

কোনো ঈমানদারের জন্যে যেমন আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ, তেমনি তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহকারে শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাঁর আনুগত্য করা সমভাবে অত্যাবশ্যক।

মুসলমান হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হলো ঈমান। আল্লাহ এক, তাঁর কোনোই অংশীদার নেই। আর হজরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তাওহিদ মানে আল্লাহর একত্ববাদ। এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও মুখে স্বীকার করা এবং আল্লাহকেই একমাত্র মাবুদ হিসেবে মেনে নেওয়া প্রত্যেকের জন্য ফরজ।

হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শুরু করে, নূহ, ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা ও মুহাম্মদ (আলাইহিমুস সালাম) সহ সব নবী রাসুলগণ – তারা হলেন পুতঃপবিত্র আত্মা, দূরদর্শী জ্ঞানী, সত্যবাদি, সঠিকভাবে আমানতের সাথে দাওয়াত দানকারী, পরিপক্ক ও পরিশোধিত ব্যক্তিবর্গ- তারা সকলে আল্লাহর একত্ববাদ এবং আল্লাহ ছাড়া যে কোন ইলাহ নেই এ ব্যাপারে একমত ।

আল্লাহতায়ালা বলেন, আপনার পূর্বে আমি যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর। (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত ২৫)

আল্লাহতায়ালা নূহ (আঃ) সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সুরা : আ’রাফ, আয়াত ৫৯)

আল্লাহতায়ালা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে বলেন, তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা : মায়েদা, আয়াত ৭২)

আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর জাতিকে বলার নির্দেশ দিয়েছেন, বলুনঃ আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে? (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত ১০৮)

অতএব জ্ঞানীদের কর্তব্য হলো আম্বিয়া কিরামদেরকে অনুসরণ করা, আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করা এবং প্রতিপালক ও ইলাহ হিসেবে তাঁর উপর ঈমান আনা। যাতে তারা দুনিয়া ও আখেতারে সফলতা ও শান্তি লাভ করতে পারে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সুরা : নাহল, আয়াত ৯৭)

ঈমানের সাথে সৎ কাজের প্রতিদান হলো এ পৃথিবীতে উত্তম জীবন লাভ। উত্তম জীবনের অর্থ এ নয় যে খুব সম্পদশালী হবেন, কখনো কখনো সম্পদশালী হতে পারেন, আবার নাও হতে পারেন। কেউ অঢেল ধন সম্পদ ছাড়াও উত্তম জীবন পেতে পারে। কেননা জীবনকে উত্তম করতে ধন সম্পদ ছাড়াও অনেক কিছু আছে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক, তাঁর উপর আত্মবিশ্বাস ও ভরসা করা, তাঁর পর্যবেক্ষণ, হেফাযত ও সন্তুষ্টিতে নিজেকে নিরাপদ ও শান্ত মনে করা। এমনিভাবে উত্তম জীবনের অন্তর্ভুক্ত হলো সুস্বাস্থ, শান্তি, পরিতুষ্টি, গৃহে প্রশান্তি, অন্তরের ভালবাসা। এতে আরো রয়েছে, সৎ কাজের দ্বারা তৃপ্তি লাভ করা এবং ব্যক্তির অন্তরে ও জীবনে এর প্রভাব। ধন সম্পদ জীবন সৌন্দর্যের একটি উপাদান মাত্র। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। (সুরা : কাহাফ, আয়াত ৪৬)
অন্তর যখন আল্লাহ্র নিকট যা অধিক মহান, পুতঃপবিত্র ও স্থায়ী তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তখন উত্তম জীবনের ও শান্তির অন্য অর্থ দেখতে পাবে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। (সুরা : আন’আম, আয়াত ১২৫)

যে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী, যার কোন শরিক নেই, তার অন্তরকে আল্লাহতায়ালা প্রশস্ততা, আরাম ও প্রশান্তির দ্বারা ভরে দেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তার অন্তরকে সংকীর্ণ, অস্থির, উদ্বিগ্ন ও জটিল করে দেন।
একত্ববাদের অর্থ হলো এক আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা, আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করা এবং অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করা। আল্লাহর বাণী ‘আমরা কেবল আপনার ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই’-এর দাবি এটাই, যা আয়াতকে আল্লাহ ‘উম্মুল কোরআন’ খ্যাত সুরা ফাতিহার মধ্যভাগে এনেছেন।

ইবাদতে মৌলিকভাবে দুটি উপাদান থাকতে হয়। উপাস্যের জন্য উপাসকের সর্বোচ্চ বিনয় এবং তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। আর ইবাদতই বান্দাকে সৃষ্টির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর নিষ্কলুষ ইবাদত, যেখানে অন্যের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে পৃথিবীর সব নবী-রাসুল নিজ সম্প্রদায়কে একত্ববাদের আহ্বান জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৯)

একই সঙ্গে তাঁরা তাদের তাগুতের ইবাদত ও আনুগত্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চাই সেটা যে নামেই হোক এবং যে আকৃতিতেই হোক। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতের বর্জন করার নির্দেশ দিতে আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)
সব প্রকার ইবাদতে আল্লাহকে একক গণ্য করা। যেমন সালাত, সিয়াম, হজ্ব, যাকাত, যবেহ-কুরবানি, নযর-নিয়াজ, রুকূ-সিজদা, ভয়-ভীতি, আশা-ভরসা ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহর জন্যই হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা ফাতেহা, আয়াত-৪)। অতএব আমরা আমাদের প্রকৃত মাবুদের কাছেই সব বিপদ-আপদ থেকে আশ্রয় চাইব। একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব।

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুত হতে নিরাপদ থাকবে।’ (সুরা নাহল, আয়াত -৩৬)। অতএব শুধু আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না।

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৩৬)। আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬)।

মহান আল্লাহ জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতের মধ্যে শিরকমিশ্রিত হলে ইবাদত বাতিল হয়ে যায়। যেমন পবিত্রতার মধ্যে অপবিত্র মিশ্রিত হলে সেটি বাতিল বলে গণ্য হয়। আর শিরককারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশীস্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না, তবে এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১১৬)।

আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে (অন্য কাউকে) শরিক করবে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (সুরা মায়েদাহ, আয়াত-৭২)। অতএব শুধু আল্লাহর উদ্দেশেই ইবাদত করা ঈমানের দাবি। পক্ষান্তরে শিরকমিশ্রিত ইবাদত করলে ঈমানে ঘাটতি পড়বে।

ইসলামের আগমন হয়েছে মানুষ ও মানবতাকে মুক্তি দিতে। আর ইসলাম তা করেছে নিখাদ একত্ববাদের মাধ্যমে। একত্ববাদের দাবিই হলো মানুষ কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তিনি ছাড়া সবার আনুগত্য থেকে মুক্ত থাকবে। সে মানুষ, প্রাণী, বস্তু, শক্তি, প্রবৃত্তি—সব কিছুর আনুগত্য ত্যাগ করবে। বহু মানুষ বলে, মন যা চায় করো। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মানুষ পৃথিবীতে যা কিছুর ইবাদত করে তার মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রবৃত্তি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) খ্রিস্টান শাসকদেরসহ অন্যান্য আহলে কিতাব আমিরের কাছে পাঠানো চিঠি নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে শেষ করতেন। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন! হে কিতাবিরা, এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক না বানাই আর আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো, অবশ্যই আমরা মুসলিম।’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ৬৪)

ইসলাম ও ইসলামী জীবনের মূলভিত্তি একত্ববাদের চারটি দাবি আছে। সুরা আনআমের চার আয়াতে আল্লাহ সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তা হলো—
১. আল্লাহ ছাড়া কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করা : আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬৪)

২. অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ না করা : আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? তিনিই আহার্য দান করেন, তাঁকে কেউ আহার্য দান করে না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪)

৩. অন্য কাউকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ না করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তবে কি আমি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সালিস (বিচারকারী) মানব—যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১৪)

৪. কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা : আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত্গুলোর প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)

যখন মানুষ এসব বিষয় জ্ঞান, অবস্থা ও বাস্তবায়নের বিবেচনায় নিজের ভেতর ধারণ করে, তখনই প্রকৃতার্থে তাকে একত্ববাদের অনুসারী বলা যায়। এই একত্ববাদই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রাণশক্তি।

আল্লাহতায়ালার নামগুলো যেভাবে  কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করা, অর্থ বুঝে মুখস্থ করে আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে ঈমান বাড়বে এবং জান্নাত লাভ করা যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার এক কম একশটি অর্থাৎ নিরানববইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করবে (অর্থ বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি এগুলোর হিফাজত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বেজোড়। তিনি বেজোড় পছন্দ করেন।’

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি যেভাবে কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করতে হবে। কারো সাথে তাঁর সাদৃশ্য করা যাবে না। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা আশশূরা, আয়াত-১১)। আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছনে পড়ো না।’ (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩৬)। আয়াতটিতে আল্লাহর অবস্থা কেমন তা বর্ণনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।  কোরআন এবং সহিহ হাদিসে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করতে বলা হয়েছে। মানবজীবনে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হবে ও ইহকাল-পরকাল সুখময় হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮ নভেম্বর/আরজেড)