প্রদীপ-চুমকি কে কোন কারাগারে? জেনে নিন তাদের বৃত্তান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫০

প্রতাপশালী ওসি থেকে খুনের মামলায় প্রাণে দণ্ডিত আসামি। ‘পাহাড়সম’ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে দুদকের মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। একই মামলায় ২১ বছরের সাজা নিয়ে স্ত্রী চুমকি কারণও কারাগারে।

কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর ‘সিনে’ আসা বরখাস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ। সিনহা হত্যা মামলায় আদালতের দেওয়া প্রাণদণ্ড নিয়ে নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে টেকনাফের বহুল আলোচিত সাবেক ওসি প্রদীপ।

বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-৪ এ বন্দি প্রদীপ কুমার দাশ। আর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি।

প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশের চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন অপকর্ম করে স্ত্রী-সন্তানের জন্য গড়েছিলেন সম্পদের পাহাড়। সেসব সম্পদ দিয়েছিলেন স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। কিন্তু অবৈধ সম্পদ রক্ষা করতে পারেননি এই দম্পতি।

অভিযোগ আছে, প্রদীপ এক সময় অস্ত্রের মুখে নিরাপরাধ মানুষকে তাড়া করতেন। যাকে খুশি তাকে তুলে এনে নির্যাতন, আটকে রাখার মতো নিপীড়নমূলক কাজ ছিল তার স্বভাবজাত। ধরে এনে অর্থের বিনিময়ে আবার ছেড়েও দিতেন। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি দখল করে তাড়িয়েছেন তাদেরকেও।

তবে প্রদীপের এতসব অপকর্ম প্রকাশ্যে আসেনি কখনো। উল্টো টেকনাফ অঞ্চলে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতিও বাগিয়ে নিয়েছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ধরা পড়ে যান প্রদীপ কুমার দাশ।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি পার্ট-৪ সেলে প্রাণদণ্ড নিয়ে বন্দি প্রদীপ কুমার আর সব সাধারণ ফাঁসির আসামির মতোই সেখানে আছেন। পাননি কোনো ধরনের ডিভিশন। এর আগে প্রদীপ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার ও কক্সবাজারের কারাগারে ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিমপুর কারাগারের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগার দেশের একমাত্র সেল সিস্টেম কারাগার। সরকারি দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ফাঁসির আসামিদের দেখভাল করা হয়। প্রদীপের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তিনি অন্যান্য সাধারণ ফাঁসির আসামির মতোই আছেন। নির্ধারিত পোশাক পরিয়ে তাকে সেলে রাখা হয়েছে। অন্যরা যেমন আছেন তিনিও তাই থাকবেন। কারাগারের ঊধ্বর্তনরা সপ্তাহে একদিন তার খোঁজখবর নেন। তবে শারীরিকভাবে তিনি (প্রদীপ) সুস্থ আছেন।’

প্রদীপের সঙ্গে তার পরিবারের কেউ দেখা করতে আসে কি না প্রশ্নের জবাবে জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার স্বজনরা মাঝে মধ্যে দেখা করতে আসেন। তবে এখন সেটা কম। উনি (প্রদীপ) সপ্তাহে একদিন দশমিনিট করে স্বজন এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন; আর সেটা তিনি করেন।’

অন্যদিকে দুদকের মামলায় রায়ের পর থেকে কারাগারে প্রদীপ পত্নী চুমকি কারণ। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। সাধারণ কয়েদিদের মতোই তাকে সেখানে থাকতে হচ্ছে।

কারাগারটির একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেনস, ‘তিনি (চুমকি) অন্য সাধারণ কয়েদিদের মতোই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। পরিবার থেকে এখন আর কেউ দেখা করতে আসে না। মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথা বলেন। স্বামীর কারণে আজ তাকে জেলহাজতে থাকছে হচ্ছে; এ জন্য তার মধ্যে অনুশোচনাও দেখা গেছে।’

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত।

কক্সবাজারের র্যা ব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়। তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ সাতজনসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

সিনহা হত্যায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। তবে এ মামলা থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

এদিকে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক আগে থেকে তদন্ত করছিল। প্রদীপ গ্রেপ্তারের পর ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক একটি মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যবসাসহ সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

১৯৯৫ সালে মাত্র দুই হাজার ২৫০ টাকা বেসিক বেতনে পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ, যা সাকল্যে তার মাসিক বেতন ৪ হাজার ৪৮০ টাকা। প্রদীপকে গ্রেপ্তারের পরই আত্মগোপনে চলে যান তার স্ত্রী। তখন খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তথ্য ছিল না তিনি কোথায় আছেন। পরে এবছরের ২৩ মে চুমকি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

এরপর থেকে কারাগারেই আছেন তিনি। ২৭ জুলাই দুদকের মামলায় আদালত প্রদীপকে ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে প্রদীপের ঘুষের টাকায় চুমকির নামে নেওয়া কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় প্রদীপ ও চুমকি—দুজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/এসএস/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :