শীতে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি বুঝবেন যে লক্ষণ দেখে

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪৪ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:১৪

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

শীতের ঠান্ডা বাতাসের আমেজ শুরু হয়েছে। শীতের মৌসুমে দিন ছোট। আর রাত দীর্ঘ হয়। ফলে এই সময় সূর্যের আলো খুব কম সময়ের জন্যই পাওয়া যায়। সূর্য থেকেই মেলে শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি। পৃথিবীর প্রায় এক বিলিয়ন লোকের মধ্যে ভিটামিন ডির অভাব লক্ষ্য করা যায়।

দেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিটামিন 'ডি' একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড বা স্টেরয়েড হরমোন। এর কাজ হচ্ছে– দেহের অন্ত্র (ইনটেসটাইন) থেকে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। এটি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, নানা মরসুমি সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায় ভিটামিন ডি। শুধু তা-ই নয়, হাড় এবং দাঁত মজবুত রাখতে ভিটামিন ডি-র জুড়ি মেলা ভার।

বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ডি এমন একটি পুষ্টিগুণ, যা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পুরোপুরি আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না। গবেষকরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রয়োজনের শতকরা ৩০ ভাগ শুধু তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে। বাকি ৭০ ভাগ তৈরির জন্য আমরা পুরোপুরি সূর্যালোকের ওপর নির্ভরশীল। আর এ কারণেই বেশির ভাগ মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে নানা রোগের শিকার হচ্ছেন।

ভিটামিন ডি হাড়ের ত্বক সংক্রান্ত সংক্রমণ এমনকি, ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতেও উপকারী। শরীরের পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ সব সময়ে পর্যাপ্ত থাকে না। বিভিন্ন কারণে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি তৈরি হয়। শরীরের বেশ কয়েকটি লক্ষণ তা জানান দেয়।

 

ওজন বেড়ে যাওয়া

হু হু করে ওজন বাড়ার একটি বড় কারণ কিন্তু হতে পারে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি। শরীরের পরিমাণ মতো ভিটামিন ডি-র অভাব ঘটলে বাড়তে পারে ওজন।

 

চুল পড়া

মূলত পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবেই চুল পড়ে। কিন্তু চুল পড়ার আরও একটি কারণ হল ভিটামিন ডি-র ঘাটতি। ভিটমামিন ডি চুল ভাল রাখতে ব্যাপক সাহায্য করে। ফলে শরীরে ভিটামিন ডি যদি কোনও কারণে কমে যায়, তার একটি লক্ষণ হতে পারে চুল ঝরা।

 

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

ভিটামিন ডি শরীরের যে কোনও ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন ধরে যদি কোনও ক্ষতস্থান না শুকায়, তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

 

মানসিক অবসাদ

গবেষণা বলছে, ভিটামিন ডি শরীরের পাশাপাশি মনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে শীতকালে যখন সূর্যের আলো কম থাকে, তখন মানসিক অবসাদ যেন আরও চেপে বসে। এর কারণ সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি সরাসরি পাওয়া যায় না, বা খুবই কম পাওয়া যায়।

 

পিঠে ব্যথা

শুধু বয়স্করা নন, পিঠের ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন নতুন প্রজন্মও। অনেকেই এর কারণ হিসাবে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে বসে কাজ করাকে ধরে নেন। তবে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলেও হতে পারে পিঠে ব্যথা।

 

যেসব খাবারে আছে ভিটামিন ডি

বর্তমানে ভিটামিন ডি-এর অভাবে দেশের বহু মানুষের ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, হৃদরোগ, হতাশা ও ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে। হতাশা, স্নায়বিক দুর্বলতার মতো রোগ দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর মূল কারণ ভিটামিন ডি-এর অভাব। গবেষকরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-

 

বিভিন্ন ধরনের মাছ

বিভিন্ন মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যামন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সার্ডিন, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। দৈনিক ভিটামিন ডি’র চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে একটি টুনা মাছের স্যান্ডউইচ বা তিন আউন্স ওজনের একটি স্যামন মাছের টুকরো থেকে।

 

ডিম

ডিমে অল্প পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

 

দুধ

দুধ খুব বেশি ভিটামিন ‘ডি’ প্রদান করে না। তবে এটিকে ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে পরিণত করা যায়। কিছু দেশে গরুর দুধকে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। এক কাপ দুধে প্রায় ১২৫ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস দুধ।

 

কমলার জুস

ভিটামিন ডির জন্য কমলার জুস খেতে পারেন। ভালো মানের কমলার জুস প্যাকেটেও পাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে প্যাকেটের গায়ে দেখে নিন, কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি।

 

সোয়া মিল্ক

সোয়া মিল্ক খাবারে রয়েছে অনেক প্রোটিন। তাই এই খাবার যে কোনও মানুষ খেতে পারেন। এই প্রোটিন শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত সোয়া মিল্ক খেলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কমে। এছাড়া আপনি টোফু খেতে পারেন। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।

 

মাশরুম

মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এই মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। পরটোবেললো মাশরুম সূর্যের আলোয় বড় হয়, এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি। নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন।

 

লিভার বা যকৃৎ

রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

 

গরুর মাংস

গরুর মাংসের লিভারে রয়েছে ভিটামিন ডি। ছাড়া দুধ থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন।

 

চিংড়ি মাছে

চিংড়ি মাছেও ভালো পরিমাণে থাকে ভিটামিন ডি। চিংড়ি মাছ হল দারুণ এক খাদ্য। এই খাদ্যটির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণে প্রোটিন। এবার দেখা গিয়েছে যে চিংড়িতে রয়েছে অনেকটা ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন শরীর ঠিক করতে পারে।

 

পনির

পনির বা চিজেও ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে প্রচুর লবণ দেয়া পনির এড়ানোই ভালো।

 

সাপ্লিমেন্টারি

উচ্চমাত্রার ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত।

 

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। সূর্যের কড়া আলোতে না গিয়ে হালকা রোদ গায়ে লাগান। ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণের জন্য হালকা রোদে সামান্য ব্যায়ামও করতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদ সবচেয়ে ভালো। এই সময় সূর্যের যে আলো আসে, সেটি ভালো। সব ঋতুতেই যদি আমরা কিছুক্ষণ রোদে বসি, পাঁচ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত সপ্তাহে দুবার, তাহলে উপকৃত হওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৯ নভেম্বর/আরজেড)