অগ্নিকাণ্ডের অধিক ঝুঁকিতে রাজধানীর ১০৬৯ স্থাপনা

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২২, ২২:২২ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২, ২২:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটইমস

বিল্ডিং কোড না মেনে রাজধানীসহ সারাদেশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভবন। এর ফলে অগ্নি দুর্ঘটনাসহ নানা ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনগুলো। ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)-এর এক জরিপ বলছে, যথাযথ নিয়ম না মেনে নির্মাণ করায় সারাদেশে অন্তত তিন হাজার ৫১৮টি স্থাপনা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৮৩টি স্থাপনা রয়েছে রাজধানীতেই। রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে আবার এক হাজার ৬৯টি স্থাপনা রয়েছে অধিক ঝুঁকিতে। আর সারাদেশে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার সংখ্যা ১ হাজার ১৮৭টি।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ইসাব।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১ হাজার ১৮৭টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজার ৫১৮টি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতে রয়েছে ১ হাজার ৬৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২ হাজার ৫৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা। ঢাকায় এসব বহুতল ভবনের বিভিন্ন তলায় গড়ে উঠেছে অফিস, গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, মার্কেট ও শপিং মল। এরমধ্যে অনেকগুলোরই সংশ্লিষ্ট সংস্থার বৈধ অনুমোদন নেই। মানা হয় নাই বিল্ডিংকোড। কারখানায় ছোট ছোট কক্ষে বসানো হয়েছে ভারী ভারী যন্ত্রপাতি। অনেক অফিস ও কারখানায় আলাদা গুদাম না থাকায় ভবনের মধ্যেই বিভিন্ন তলায় মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখানে নেই ওঠা-নামার জন্য প্রশস্ত সিঁড়ি বা জরুরি বহির্গমনের আলাদা কোনো পথ।’

তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ হলো- নিয়ম না মেনে ভবন বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা, স্থাপনা নির্মাণ করার পর অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যেসব কারণে, সেগুলো নিরসনে কোনো ধরনের পরিকল্পনা না থাকা। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শুরুর পর থেকে কর্মরতদের কখনোই আগুন লাগলে কীভাবে তা প্রতিরোধ করতে হবে বা কোনো কোনো পদ্ধতিতে সহজেই অগ্নি দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব, তার সামান্যটুকু প্রশিক্ষণ প্রদান করে না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিয়মিত বিভিন্ন ভবনে অগ্নি মহড়া দিলেও এসব প্রতিষ্ঠান মালিকরা তেমন একটা গুরুত্ব দেন না।’
ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সারাদেশে মোট ৫ হাজার ৩৭৬টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৩ কোটি টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯৯৭ সালে ৫ হাজার ৮০২টি,  ১৯৯৮ সালে ৫ হাজার ৩টি, ১৯৯৯ সালে ৫ হাজার ২০৭টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। ২০০০ সালে ৫ হাজার ৩১৫টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ৯৭১টি, ২০০২ সালে ৫ হাজার ৪০৪টি, অপরদিকে ২০০৩ সালে তা বেড়ে গিয়ে ৬ হাজার ২৮৯টি, পরের বছর ২০০৪ সালে তা আরও বেড়ে গিয়ে ৭ হাজার ১৪০টিতে দাঁড়ায়। কিন্তু এর পরের বছর ২০০৫ সালে ৫ হাজার ৪৭৫টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এই ১০ বছরে অগ্নি দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি।
এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যে জহির উদ্দিন জানান, ২০০৬ সালে ৯ হাজার ৫৪২টি অগ্নি দুর্ঘটনায় আহত ৮৭৩ জন, নিহত ৯১ জন। ২০০৭ সালে ৯ হাজার ১৯৬টি অগ্নিকা-ে আহত হন ১ হাজার ৪৫৫ জন ও নিহত হন ১৬০ জন। ২০০৮ সালে ৯ হাজার ৩১০টি অগ্নিকা-ে নিহত হন ২২৯ জন, আহত হন ১ হাজার ৩৫৬ জন। ২০০৯ সালে ১২ হাজার ১৮২টি অগ্নিকা-ে নিহত হন ১১৮ জন। ২০১০ সালে ১৪ হাজার ৬৮২টি অগ্নিকা-ে প্রাণ হারান ৬৩ জন।
২০১১ সালে ১৫ হাজার ৮১৫টি অগ্নিকা-ে নিহত হন ৩৬৫ জন। ২০১২ সালে ১৭ হাজার ৫০৪টি অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২১০ জন। ২০১৩ সালে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৯১২। নিহত হন ১৬১ জন। ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ৮৩০টি অগ্নি দুর্ঘটনায় ৭০ জন প্রাণ হারান। ২০১৫ সালে ১৭ হাজার ৪৮৮টি অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬৮ জন। ২০১৬-তে ১৬ হাজার ৮৫৮টি অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫২ জন। ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা যান ৪৫ জন। ২০১৮-তে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৩০ জন। ২০১৯ সালে ১৮৫ জন নিহত ও ৫৭১ জন অগ্নি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। ২০২০ সালে অগ্নি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে ১৫৪ জন এবং আহত হয় ৩৮৬ জন। ২০২১ সালে অগ্নি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে ২১৯ জন এবং আহত হয় ৫৭৬ জন বলে জানান জহির উদ্দীন স্বপন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসাবের সেক্রেটারি জেনারেল মো. মাহমুদুর রশিদ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়াজ আলী চিশতী, পাবলিসিটি সেক্রেটারি মো. নজরুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) রেজাউল করীম এবং ইসাবের অফিস সেক্রেটারি শাহ নেওয়াজ রাজীব

ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/কেআর/ইএস