জঙ্গি ছিনতাই: নেতৃত্বে আনসার আল ইসলামের সামরিক প্রধান মশিউর

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২২, ০২:০৩ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেন মশিউর রহমান ওরফে আইমান। এই আইমান বর্তমানে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্বে আছেন। মূলত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, রবিবার দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অপারেশনে প্রায় ১২ জন অংশ নেয়। যারা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তারাই আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের মুখে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি হলেন- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব সাজিদ। শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকের মাধবপুর গ্রামে। সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারীর ভেটোশ্বর গ্রামে। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপর রাজধানী ও দেশের প্রতিটি সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে বসেই আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ছক হয়েছিল। কারাগারের জঙ্গিদের সঙ্গে বাইরে থাকা জঙ্গিদের ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়।

এদিকে আনসার আল ইসলামের সামরিক প্রধান মশিউর রহমান ২০১৬ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছাড়েন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান সোমবার বলেন, দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া নেতৃত্ব দেননি। তবে তিনি মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তবে নামটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, দেশের প্রত্যেকটি পয়েন্টে আমরা সতর্ক করে দিয়েছি। তারা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে, তারা যাতে কোনোভাবে বের হতে না পারে; সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকগলে কেউ যাতে বের হতে না পারে, আমরা সতর্ক আছি। পুলিশ প্রধান একটি ঘোষণা দিয়েছেন ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের মুখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একই দিন (রবিবার) রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের নামে মামলা করে পুলিশ। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা এই মামলায় পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিসহ দশজনের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিটিটিসি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে  সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে সেটাও আমরা আমাদের গোয়েন্দা মাধ্যমে অবগত হয়েছি। পরিকল্পনা ও অপারেশনে কারা কারা ছিল ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

এদিকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এসএস/এলএ)