গ্রাহক পর্যায়েও বাড়বে বিদ্যুতের দাম

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৫৬

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সার স্থলে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এই দাম বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলো শিগগির কমিশনের কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে খুলনা বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। যদিও গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইকারিতে যেহেতু দাম বেড়েছে সেহেতু খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়বে- এটা স্বাভাবিক। বিতরণ কোম্পানিগুলো লসে বিক্রি করবে না। হয়তোবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ হতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। তবে আর্থিক এই সংকটের মধ্যে এক লাফে ২০ শতাংশ বাড়ানো ঠিক হয়নি।

সোমবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর কথা জানায় কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য আবু ফারুক, সদস্য মকবুল ই ইলাহী, সদস্য বজলুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা তা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যাচাই-বাছাই করে দেখবে।’

সোমবার সচিবালয়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সারা পৃথিবীতেই বিদ্যুৎ-জ্বালানির প্রাইস অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। দাম বাড়বে কি না, সেটাও নির্ভর করছে মাঠ পর্যায়ের তথ্যেরভিত্তিতে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিইআরসি তাদের মতো করে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে তারা ঘোষণা দিয়েও দাম বাড়ায়নি। সবকিছু তারা যাচাই-বাছাই করেই করেছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে কতটুকু প্রভাবে পড়বে এখন তো বলতে পারছি না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে চাই। দামের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করতে চাই। এখন যেটা হয়েছে, সেটা হয়তো হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে বিইআরসি এটা বাড়ানোর (গ্রাহক পর্যায়ে) বিবেচনা করবে।’

এদিকে খুচরা পর্যায়ে  বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) হাজির হয় বিতরণ কোম্পানি। গ্রাহকপর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রথম প্রস্তাব দেয় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। খুলনা বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম গ্রাহকপর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যে জমা দেওয়া আবেদনে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত পাইকারি দাম বাড়াতে খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রির প্রভাব বিবেচনা করে এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

তবে কমিশনের সদস্য আবু ফারুক এখনও প্রস্তাবটি বিইআরসিতে পৌঁছায়নি বলে জানান।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা এখনও আবেদন করিনি। কিন্তু আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তিকতা ঠিক আছে কিনা বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে সবকিছুরই দাম বেড়েছে, মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমি বলব- এটা সরকারের ইচ্ছে। সরকার কিন্তু ভর্তুকি দিচ্ছে এটা ঠিক। চাইলে আরও কয়েকদিন একটু বেশি দিতে পারত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রশ্ন করতে পারি এটা নিয়ে যে, কেন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য শুধু তেল বা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হলো। কেন দেশের গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দেশের গ্যাস উৎপাদন বাড়লে এখন এতটা চাপে পড়তে হতো না। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম বাড়লে প্রয়োজনের জন্য কিনতেই হবে বেশি দামে হলেও। এখন সরকার চাইলে আরেকটু বেশি ভর্তুকি দিতে পারে। আবার সমন্বয় করতে চেয়েছে তাই করেছে। এটার যৌক্তিকতা নিয়ে আমার কোনো কথা নেই।’

পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে এখন ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়বে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে যেহেতু দাম বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেবে এটা স্বাভাবিক। হয়তো বা তারা যত টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করবে, ততটুকু না বাড়লেও কিছুটা হলেও দাম বাড়বে। বিপণন কোম্পানিগুলো তো আর লসে বিক্রি করবে না। হয়তোবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ হতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেহেতু সমগ্র বিশ্বে সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে সে হিসেবে সরকার বিদ্যুতের দাম যদি কিছুটা বাড়ায়- তা জনগণের সামর্থে্যর মধ্যে থাকতে হবে। এখন এক লাফে ২০ শতাংশ বাড়ানো ঠিক হয়নি। এটা ধাপেধাপে বাড়াতে পারত। এর প্রভাব সব কিছুর ওপরেই পড়বে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা বেশি।’

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই দাম বাড়বে। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোতো লসে বিক্রি করবে না। এরা প্রস্তাব করবে। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া বর্তমানে আমাদের সবকিছুর দাম বাড়ার মধ্যে এক লাফে এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি। এর জন্য আনুষাঙ্গিক সবকিছুরই দাম বাড়বে।’

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর বিদ্যুতের পাইকারি দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও সোমবার সেই দামই বাড়ানোর ঘোষণা দিলো কমিশন। তারও আগে গত ১৮ মে কোম্পানিগুলোর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রস্তাবিত দামের ওপর গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী ওইদিন ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নয়বার। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ ২০২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম।

(ঢাকটাইমস/২২নভেম্বর/এফএ)