সালথায় ওএমএসের চাল লুটপাটের অভিযোগ ডিলারদের বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৪৪

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের সালথায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ওএমএসের চাল  লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। গত পৌনে ৩ মাসে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় বরাদ্দের সিংহভাগ চাল খোলাবাজার ও কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শতশত সুবিধাভোগীরা।

সালথা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে তিন মাসের জন্য দুই জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, মো. হেমায়েত হোসেন ও পবিত্র কুমার মণ্ডল। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার জন্য তাদের নিয়মিত বরাদ্দ দেয়া হয় দুই মেট্রিক টন করে চাল। এসব বরাদ্দকৃত চাল তারা ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে চাল ৪০০ জন দরিদ্রের কাছে বিক্রি করবেন।

সালথা বাজারের ভাওয়াল রোডে ডিলার হেমায়েত হোসেনের চাল বিক্রয় কেন্দ্র এবং একই বাজারের পুরুরা রোড়ে পবিত্র কুমার মণ্ডলের চাল বিক্রয় কেন্দ্র। এই দুটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন উপজেলার ভাওয়াল, গট্টি, মাঝারদিয়া, সোনাপুর, রামকান্তুপুর, যদুনন্দী, বল্লভদী ও আটঘর (৮টি) ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের কাছে চাল বিক্রি করার কথা।

কিন্তু অভিযোগ আছে, দুই ডিলারই প্রতিদিন শুধু ভাওয়াল ইউনিয়নের ৮০ থেকে ১০০ জন হতদরিদ্রের কাছে চাল বিক্রি করে কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রথমে সরকার বরাদ্দকৃত বাকি সব চাল নকল টিপসই ও অন্যের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে ভুয়া তালিকা তৈরি করে সব চাল বিক্রি দেখান ডিলাররা। পরে বেশি দামে এসব চাল খোলা বাজার ও কালো বাজারে বিক্রি করে দেন। গত পৌনে তিন মাস এভাবেই ওএমএসের চাল বিক্রি করে আসছে অভিযুক্ত দুই ডিলার। এদিকে হেমায়েত হোসেন সার ও টিবিসিরও ডিলার। প্রশ্ন উঠেছে এক ব্যক্তি কিভাবে একাধিক ডিলারের দায়িত্ব পান।

 

সম্প্রতি কয়েকদিন চাল বিক্রির ওই দুটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রয় কেন্দ্র দুটিতে চাল বিক্রির সময় নেই ডিলার বা ট্যাগ অফিসার। তাদের অনুপস্থিতিতেই চাল বিক্রি করছেন ডিলারের লোকজন। কেন্দ্রের সামনে সুবিধাভোগীদের কোনো লাইনও নেই। দুই একজন এসে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি আর টিপসই দিয়ে চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাওয়াল পুর্বপাড়ার জুলিখা বেগম নামে এক নারীর কাছে এক সাথে ৩০ কেজি চাল বিক্রি করতে দেখা যায়। রবিবার সকাল ১১ টার দিকে ভাওয়াল রোডের হেমায়েতের বিক্রয় কেন্দ্রে দুইজন নারী চাল কিনতে যান। তবে কেন্দ্রে চাল নেই বলে তাদের জানানো হয়।

 

ওই দুই ভুক্তভোগী ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামের রহিমা বেগম ও হেনারা বেগম বলেন, আমরা ৫ কেজি চাউল কিনতে আসছি। এখন বাজে ১১টা। ওনারা বলছে চাউল শেষ। দেড় বছরের বাচ্চা নিয়ে এসেছি। চাউল না পেয়ে ফিরে যেতে হবে। আগামীকাল সকালে আসতে বলেছে। অপরদিকে পুরুরা রোডে পবিত্র কুমার মণ্ডলের বিক্রয় কেন্দ্রে চাল কিনতে আসা দুলাল কাজী বলেন, আগেও আমি চাল কিনেছি তবে তখন ৫টা পর্যন্ত চাউল কিনতে পারছি। এখনতো দেখি ১২ বাজার আগেই দোকান বন্ধ করে দেয়।

উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের হতদরিদ্ররা অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ করে যদুনন্দী, বল্লভদী, সোনাপুর, মাঝারদিয়া ও আটঘর ইউনিয়নের দরিদ্রদের সালথা বাজারে গিয়ে চাল কিনে আনা অসম্ভব। কারণ ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সালথা বাজারে গিয়ে মাত্র পাঁচ কেজি চাল কিনে আনতে গিয়ে যে টাকা ভাড়া বাবদ খরচ হবে ও সময় লস হবে তাতে কেউ পুষাবে না। তাই আমরা ওএমএসের চাল কিনতে যাই না।

উপজেলার গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু বলেন, ওএমএসের চাল বিক্রি বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমার ইউনিয়ন থেকে কেউ এ চাল কিনতে যায় কি না তাও বলতে পারবো না। আটঘট ইউপ চেয়ারম্যান শহিদুল হাসান খান সোহাগ ও মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আফছার উদ্দীনও একই কথা বলেন।

 

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলার হেমায়েত হোসেন বলেন, মুলত পৌর এলাকায় ওএমএসের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু আমি তদবীর করে ডিলার নিয়োগ পেয়েছি। উপজেলার যে কেউ আমার এখান থেকে ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি কিনতে পারবে। আমি চাল বিক্রি কোনো ধরণের অনিয়ম করিনি। নিয়মমত চাল বিক্রি করছি। অন্যদিকে এ বিষয় আরেক ডিলার পবিত্র কুমার মণ্ডলের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সালথা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বুলেট বৈরাগী বলেন, ডিলার যদি প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে হতো তাহলে জনগনের জন্য সুবিধা হতো। যেহেতু নিতিনির্ধারনী পর্যায় থেকে উপজেলায় ২ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে আমাদের কিছু করার নেই। ডিলারের বিরুদ্ধে কালোবাজার বা খোলা বাজারে চাউল বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনও এমন কোন অভিযোগ পাইনি। আমাদের দুইজন তদারকি কর্মকর্তা সব সময় উপস্থিত থাকেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, এক ব্যক্তি পাঁচ কেজির উপরে চাল কিনতে পারবে না। আর এই চাল কালো বাজার বা খোলা বাজারে বিক্রি করার নিয়ম নেই। ডিলার ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিক্রি করতে হবে। এসব নিয়ম যদি না নেমে চাল বিক্রি করা হয়ে থাকে, তাহলে প্রমাণ পেলে ডিলারদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন শাহিন বলেন, ওএমএসের চাল বিক্রিতে অনিয়মের বিষয়ে আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এআর)