পদ্মা সেতুর নাট খুলে টিকটক: সিআইডির তদন্তে অভিযুক্ত হচ্ছেন বায়েজিদ ও তার বন্ধু

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৫০ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুর রেলিং থেকে নাট-বল্টু খুলে টিকটকে ভিডিও বায়েজিদ তালহার সিআইডির করা মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। বায়েজিদের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট এলেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে। এই মামলায় বায়েজিদ ও ভিডিও ধারণে তার সহযোগী কায়সার মামুন অভিযুক্ত হচ্ছেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরের দিন চলতি বছরের ২৬ জুন সেতুর রেলিং থেকে নাট-বল্টু খুলে টিকটকে ভিডিও দেন বায়েজিদ। ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ঢাকার মালিবাগ থেকে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন বায়েজিদ।

গ্রেপ্তারের পর ২৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করে। মামলাটির তদন্তভারও পায় পুলিশের এই অপরাধ তদন্ত বিভাগ। সাতদিনের হেফাজতে নিয়ে বায়েজিদকে তারা জিজ্ঞাসাবাদও করে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ‘নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করতেই’ বায়েজিদ ও তার বন্ধু মিলে এই ভিডিও করেছিলেন। তাদের দুইজনকেই অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। বায়েজিদ বর্তমানে শরীয়তপুর কারাগারে বন্দি। তার বন্ধু কায়সার মামুন পালিয়ে কাতারে অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। কায়সারের বাড়ি সাভারের নালিয়াসুর মুশুরিখোলা গ্রামে।

কী হয়েছিল সেদিন:

গত ২৫ জুন উদ্বোধন হয় পদ্মা সেতু। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বায়েজিদ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতু উদ্বোধনের পরদিন বায়েজিদ প্রাইভেট কারে তার বন্ধু কায়সারকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। তারা সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় টিকটক ভিডিও করার জন্য সেতুর ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী জায়গায় নামেন।

৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন, তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহো।’

নাট হাতে নিয়ে বায়েজিদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের...পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’ ওই সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’

বায়েজিদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তার নামে নিবন্ধন করা সেই গাড়িটিও জব্দ করে সিআইডি। ওই গাড়িতে করেই পদ্মা সেতু ঘুরতে যান বায়েজিদ।

বায়েজিদ ঢাকা কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে পড়াশোনা করেছেন। তার এক ভাই রাজস্ব কর্মকর্তা, আরেক ভাই ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। তার এমন কাণ্ডের পর বায়েজিদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর লাউকাঠি ইউনিয়নের তেলিখালীতে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী হামলা চালায়। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, বায়েজিদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সিআইডি যা বলছে:

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পদ্মা সেতু নিয়ে নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করতেই বায়েজিদ ও তার বন্ধু মিলে ভিডিও করেছিলেন। তবে বায়েজিদের রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততার তথ্য মেলেনি।

তদন্তে জড়িত এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেপ্তারের পর যে ইলেকট্রিকস ডিভাইস (মোবাইল) উদ্ধার করেছিলাম সেগুলো ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। এখনও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে আসেনি। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেলেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’

মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলা তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে। দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এসএস/ডিএম)