গঠনতন্ত্রই নেই নিবন্ধন চাওয়া অনেক দলের

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২৮ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন যাচাই-বাছাই করছে নির্বাচন কমিশন  (ইসি)। আবেদনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ জমা দেননি চালানের টাকা। কারো পূর্ণাঙ্গ তালিকায় নেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ও পদ-পদবি। কোনো দলের নেই গঠনতন্ত্র। আবার কোনো দলের নিবন্ধনের ন্যূনতম শর্ত পূরণের দালিলিক প্রমাণ নেই। অনেকের ঘাটতি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রেও। অন্যদিকে প্রাথমিক আবেদনে যেসব দলের তথ্য রয়েছে তা সঠিক কি না সেগুলো এখনও যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি।

এমনই অবস্থা নতুন নিবন্ধন চাওয়া ৯৩টি রাজনৈতিক দলের।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ নিবন্ধন পাওয়া ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত মেনে চলছে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা দলগুলো শর্ত মেনেছে কি না এখন চলছে সেসব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। আর নিবন্ধিত হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠির জবাব দিয়েছেন। অন্যরাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জবাব দেবেন।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম আইনে যুক্ত করা হয় ২০০৮ সালে। কোনো দল ইসিতে নিবন্ধিত না হলে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই নিবন্ধন পেতে আইনে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়। আবার নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্ধারিত কিছু শর্ত পালন করার বিধান আছে। এগুলো না মানলে ইসি ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, আবেদনে পূরণ করতে হবে অন্তত ৯ ধরনের তথ্য। সঙ্গে দিতে হবে ১০ ধরনের দলিলপত্র। এসব যাচাই-বাছাই শেষে তবেই দলের নিবন্ধন দেবে ইসি। কোন কোন দল নিবন্ধন পাবে তা জানা যাবে আগামী বছরের এপ্রিল কিংবা মে মাসের মধ্যে।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত ইসি সচিবালয়ের একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে উপস্থাপনের পর কমিশন দেখবে।

বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ৯৩টি আবেদন পর্যালোচনা শেষে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ইসির বিবেচনার জন্য উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। আমরা নির্ধারিত চেক লিস্টের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত দলিলাদির বিষয় তুলে ধরবো। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।

বাছাই কমিটির সদস্যসচিব ও ইসির উপ-সচিব আব্দুল হালিম খান গণমাধ্যমকে জানান, দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র যথাযথ রয়েছে কি না গুছিয়ে নিচ্ছেন। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব দলের আবেদন অযোগ্য হবে তাও জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে বিধি অনুযায়ী সঠিকতা যাচাই, আপত্তি-নিষ্পত্তি, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, ত্রুটি সংশোধনে ১৫ দিন সময় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর যোগ্য থাকলে নিবন্ধন সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।

এদিকে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলছে কি না, তা যাচাইয়ে ইসির বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জবাব দেবে বলে জানা গেছে। নিবন্ধিত দলগুলোর থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেয়া চিঠির জবাব ৩০ কার্যদিবসের (২৪ নভেম্বর) মধ্যে বলা হয়েছিল।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করছে কি না, সে তথ্য চেয়ে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর কমিশন সেগুলো যাচাই করে দেখবে।

ইসির চিঠির বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ঢাকাটাইমসকে জানান, ইসি থেকে দেওয়া এ সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা সে চিঠির জবাব দেবো।

এ বিষয়ে বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম টিপু ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে মাঠে আছি। ইসির চিঠি নিয়ে এই মুহূর্তে ভাবছি না। আগে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে আসুক।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। ভোটের ছয়মাস আগেই রোডম্যাপ অনুযায়ী নতুন দলগুলোর নিবন্ধনের কাজ শেষ করবে ইসি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সাল থেকে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর এক যুগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছে। শর্ত পূরণে ব্যর্থ এবং আদালতের নির্দেশে ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা'র নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বর্তমানে ইসির অধীনে ৩৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/এআর)