ঘুষ দিয়ে উপহারের ঘর পেলেন সচ্ছল ব্যক্তিরা!

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৪৮ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০৪

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ঘুষ দিয়ে সচ্ছল পরিবারের লোকজন উপহারের ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের অভিযোগ, ঘরপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ কে এম শাহ আলম মোল্লা। ভূমি রেজিস্ট্রি বাবদ নিয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহ আলম।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সোনামুখী পূর্বপাড়ায় ৩৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর বুঝিয়ে না দিলেও বেশিরভাগ ঘর রয়েছে সচ্ছল ব্যক্তিদের দখলে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এখানে ১৭টি ঘর পেয়েছেন সচ্ছল ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে রয়েছেন দুলাল হোসেন ও হাফিজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি। তাদের চরাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ বিঘা করে জমি ও নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। শুধু তাই নয়, হাফিজুর রহমানের নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে।

 

অন্য জেলা ও উপজেলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা উপহারের এ ঘর পেয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নাজমুল, ধুনটের শিল্পী খাতুন ও গোপালনগর এলাকার রত্না খাতুনসহ অন্য উপজেলার ছয়জন এ ঘর পেয়েছেন। স্থানীয় তিনজন কাঁচামাল ব্যবসায়ীও ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন।

 

সোনামুখী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন শাহেনা খাতুন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্বামী হাসেম আলীর একটি মুরগির ফার্ম ছাড়াও এক বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। ওই ফার্মে তিনি কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।

 

সোনামুখী পূর্বপাড়ার গৃহহীন ছোনেকা খাতুন বলেন, তার নিজস্ব কোনো থাকার জায়গা নেই। তিনি সরকারি একটি ঘরের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাকে ঘর দেওয়া হয়নি। অথচ যাদের থাকার জায়গা রয়েছে তারা ঘর পেয়েছেন।

চালিতাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বারী জানান, তিনি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘খ’ শ্রেণির উপকারভোগী হিসেবে ঘর পেয়েছেন। এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরে সপরিবারে বসবাসের ১০ দিনের মাথায় মেঝে ফেটে চৌচির হয়়ে যাওয়ায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দ্রুত মেরামত করে দিলেও দেওয়ালের পলেস্তারা হাতের স্পর্শে ঝরে পড়ছে।

সোনামুখী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘বাংলা ড্রেজার ব্যবসায়ী বাবু নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘরপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এলাকার অসহায় মানুষদের মূল্যায়ন না করে কাজীপুরের বাইরের কিছু মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, এই ঘর বাবদ তিনি নগদ ৪২ হাজার ও মেঝেতে বালু ভরাট বাবদ তিন হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছিলেন। তার পরিবারের একাধিক সদস্য শ্রমও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ওয়্যারিং বাবদ তার তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

 

এ বিষয়ে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল বলেন, ‘উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার নিজস্ব লোক দিয়ে এ তালিকা তৈরি করেছিলেন। ফলে টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিরা উপহারের ঘর পেয়েছেন। এটা দুঃখজনক।’

 

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ কে এম শাহ আলম মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গৃহহীনদের তালিকা এর আগের ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সময় সেটা যোজন-বিয়োজন করায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কোনো লেনদেন হয়নি।

 

এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই দাবি করে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার  বলেন, কাজটি আগের ইউএনওর সময় করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

 (ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এআর)