তিন দশক অপেক্ষার অবসান: মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৬:৫৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

তিন দশকের অপেক্ষা, অবশেষে অবসান। মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবশেষে শপথ গ্রহণ করেছেন বিরোদী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। তিন দশক ধরে দেখে আসা স্বপ্ন পূরণ করা মোটেও সহজলভ্য ছিল না আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য। পাড়ি দিতে হয়েছে কণ্টাকীর্ণ বন্ধুর পথ। কখনো কখনো ছিটকে পড়েছেন রাজনীতি থেকে কখনো বা সমকামীতার অভিযোগে যেতে হয়েছে জেলে।

মালয়েশিয়ার সুলতান আব্দুল্লাহ, আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় দেশটির দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। শপথ গ্রহণ শেষে তিনি বলেন, আমি সম্পূর্ণ নম্রতা এবং আস্থার সঙ্গে আমার ওপর অর্পণ করা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিব।

প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ শেষে প্রথম টুইটে তিনি বলেন, আমি জনগণের ইচ্ছা এবং বিবেকের ভিত্তিতে দলের সঙ্গে এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে নেব।

গত শনিবার দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এতে প্রতিদ্বন্দ্বী মূলত দুই জোটের কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই নির্বাচনে দেশটি প্রথমবারের মতো ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পায়। নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট সর্বোচ্চ ৮২টি আসনে জয় পায়। আর মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) পেয়েছে ৭৩ আসন। কোনো দলই ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ১১২ আসন পায়নি।

অপরদিকে বর্তমানে ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাসিওনাল নির্বাচনে ৩০টি আসন পায়। কিন্তু তারা কোনো জোটকে সমর্থ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কোনো পক্ষই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে আরও জটিল হয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় মালয় শাসকদের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এমতাবস্তায় দেশটির সুলতানের ওপর রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানের দায়িত্ব পড়ে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বসে জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন সাংবিধানিক রাজা, বাদশাহ আল-সুলতান আবদুল্লাহ। বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতার সাথে কথা বলার পর আনোয়ারকে নিয়োগ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে আগের সরকারপ্রধানদের পরামর্শও নেন তিনি।

আনোয়ার একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ছে এবং একটি কঠোর নির্বাচনের পর দেশটি বিভক্ত হয়েছে যা আনোয়ারের প্রগতিশীল জোটকে মুহিউদ্দিনের বেশিরভাগ রক্ষণশীল জাতিগত-মালয়, মুসলিম জোটের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়।

রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে বাজার বেড়েছে। রিঙ্গিত মুদ্রা দুই সপ্তাহে তার সেরা দিন পোস্ট করেছে এবং ইক্যুইটি ৩ শতাংশ বেড়েছে। ৭৫ বছর বয়সী আনোয়ার বছরের পর বছর ধরে জয়ের খুব কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও বারবার প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ১৯৯০ এর দশকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।

সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় এক দশক জেলে কাটিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে একে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দরুণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ বলে অভিহিত করেছেন।

দায়িত্ব পাওয়ার পর আনোয়ারের সমর্থকরা আশা প্রকাশ করেছেন, তাদের সরকার মালয় জাতি, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং জাতিগত চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ঐতিহাসিক উত্তেজনা ফিরিয়ে আনবে।

আনোয়ার নির্বাচনের আগে একটি সাক্ষাত্কারে রয়টার্সকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি শাসন ও দুর্নীতি বিরোধী কাজে জোর দিতে এবং এই দেশকে বর্ণবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করতে চাইবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/ এসএটি)