স্বাধীনতাকে আজও আমরা অর্থবহ করে তুলতে পারিনি: বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল
প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২২, ২২:০৬ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ২২:০৯
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল বলেছেন, ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে, অনেক প্রাণের বিনিময়ে এই দেশটির স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে আমরা আজও পারিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘লিজা ললিতকলা একাডেমির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা, গুণীজন সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল এসব বলেন।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল বলেন, বাংলাদেশ একটি সফল রাষ্ট্রের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে অনেক প্রাণের বিনিময়ে এই দেশটির স্বাধীনতার অর্জন হয়েছিল। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে আমরা আজও পারিনি। দূর দুরান্তের অনেক গ্রাম জনপদ রয়েছে, সেখানে অনেক নারীদেরই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে যৌতুকের জন্য। দিন বদল হচ্ছে, আমাদের মানসিকতারও একটা পরিবর্তন এসেছে। আশা করি এমন একটা দিন আসবে সেই সময় হয়তো এই দেশের নারী সমাজকে উপঢৌকনের জন্য প্রাণ দিতে হবে না। নির্যাতনের শিকার হতে হবে না।
তিনি বলেন, পুরুষ শাসিত সমাজের আস্তে আস্তে অবসান হচ্ছে। আমাদের দেশের নারীরা অনেক অগ্রসর উন্নয়ন জীবনে এসে গেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। মেয়েরা অনেক স্বাবলম্বী হচ্ছে। কিন্তু পুরুষ মানুষকে এটা মনে রাখতে হবে, তার ঘরেও বোন আছে। তার একটা মেয়ে আছে, তার ঘরেও নারীদের অবস্থান আছে। আমার যতটুকু ধারণা বা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চ আদালতে বিচার করতে গিয়েও আমি যে সমস্ত বিষয়গুলো পাচ্ছি, তাতে যেন একটা পরিবর্তনের ধারা দেখা যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে দৈনিক ঢাকা টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ও দুদক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠন ‘রিপোর্টার এগেইনেস্ট করাপশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনটির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি এবং বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সভাপতি মিজান মালিকসহ তিনজনের হাতে গুণীজন সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল।
এ সময় মিজান মালিক বলেন, ২০০৫ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির যে অ্যাওয়ার্ড আমি পেয়েছিলাম, সেই রিপোর্টেও আমি দেখিয়েছিলাম- দেশের নির্যাতিত নারীরা কেন ন্যায় বিচার পান না। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে যারা নির্যাতিত হন, তারা শুধু ঘরে বা তার আশেপাশের মানুষ দ্বারা নির্যাতিত হন তাই নয়। তিনি (ভুক্তভোগী নারী) যখন মামলা চালান তখন তার মামলা যতগুলো মানুষ বা যে ঘাটে, যে শ্রেণির মানুষের কাছে যেতে হয়, সেখানেও তিনি দ্বিতীয় ধাপে অনেক ধরনের হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হন। মামলা করার পরও ফলাফল হচ্ছে ৯৬/৯৭ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। এখানে আপোষের একটা বিষয় থাকে।
মিজান মালিক বলেন, আমি অনুরোধ করব, যারা এই মামলাগুলো করেন, সত্যিকার অর্থে যদি কোন হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার হন আমাদের জানাবেন। আমি অনেকগুলো ঘটনার পর্যালোচনা করেছিলাম যে, মামলা করার পরে প্রথম ধাপে হয়তো ভুল বোঝাবুঝির কারণে তিনি একটি মামলা করেছেন। কিংবা কেউ হয়তো তাকে হ্যারেসমেন্ট করেছেন, সেই কারণে মামলায় গিয়েছেন। কিন্তু পরে যে হয়রানিগুলো হয় সেগুলো আসলে বর্ণনাতীত। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি, আপনাদের যদি কখনো মনে হয় কোন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার, করবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকবো এবং সত্যিকার অর্থে যিনি ভিকটিম তিনি যেন ন্যায় বিচার পান আমরা সেই চেষ্টা করব।
ক্র্যাবের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আজকে যাদের টাকা আছে অনেক সময় তারা বিচারটা পান। আর যাদের টাকা নেই তারা বিচার পান না। এই জায়গাটাই আমি অনুরোধ করব, যেন বিচারের জায়গাটা সুশাসন এবং ন্যায় বিচারের জায়গাটায় সমতা তৈরি হয়। বিচার প্রত্যাশীরা যেন সত্যিকার অর্থেই বিচার পান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লিজা ললিতকলা একাডেমীর সভাপতি এডভোকেট কাজী ফারুক আহমেদ, চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক জামাল রেজা প্রমুখ।
(ঢাকা টাইমস/ ২৪নভেম্বর/কেআর/আরআর)