ঋণ পরিশোধের সব পরিকল্পনাই আছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২২, ২১:৪০ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ২১:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঋণ পরিশোধের সব পরিকল্পনাই করা আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা যত ঋণ নেই, সময় মতো সব পরিশোধ করি। একমাত্র বাংলাদেশ কোনোদিন ডিফল্টার হয়নি।

এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস না, পাঁচ মাসের আমদানি করা যাবে জানিয়ে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকাল তিনটার দিকে সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এসময় স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ইকবাল আর্সলান এবং মহাসচিব এম এ আজিজ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাচিপের জনসভায় উপস্তিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও ।

বিদেশি ঋণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঋণ পরিশোধের সব পরিকল্পনাই করা আছে। আমরা যত ঋণ নেই, সময় মতো সব পরিশোধ করি। একমাত্র বাংলাদেশ কোনোদিন ডিফল্টার হয়নি। যত সমস্যা হোক, ঋণ বিতরণে এবং ঋণ পরিশোধ সবসময় ধরে রাখি।

তিনি আরও বলেন, একটি দেশের আমদানি নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ রিজার্ভ দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি আছে।

‘কিছুদিন থেকে শুনলাম আমাদের দেশের সবাই রিজার্ভ সম্পর্কে এবং অর্থনীতি সম্পর্কে ভীষণভাবে পারদর্শী হয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে চায়ের দোকানে রিজার্ভ নিয়ে কথা। সেখানে আমার কথা হচ্ছে জাতির পিতা তো যাত্রা শুরু করেছেন শূন্য রিজার্ভ নিয়ে। তিনি এই দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন। এখন সবাই রিজার্ভ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে’—যোগ করেন শেখ হাসিনা।

বক্তব্যে সরকারপ্রধান জানান, তার সরকারই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে তুলেছিল। এরপর করোনার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে রিজার্ভ কমেছে। করোনাকালে আমদানি-রপ্তানি, হুন্ডি, বিদেশ যাওয়া বন্ধ থাকায় দেশের বাড়ে। কিন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পরে রিজার্ভ কমে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রিজার্ভ রাখা লাগে কীসের জন্য? যদি কোনো দৈব-দুর্বিপাক হয়, আমার তিন মাসের খাবার যেন আমি আমদানি করতে পারি। আমাদের খরচ হচ্ছে রিজার্ভ। এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস না আমরা পাঁচ মাসের আমদানি করতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের টাকাকেই বরং ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে চোরের হাতে তুলে দেয়ার উপক্রম হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর কেবল বাংলাদেশে নয়, দেশে দেশেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেরই রিজার্ভ কমে গেছে। আমরা শ্রীলঙ্কাকে কিছু সহযোগিতা করেছি, আরও অনেক দেশ কিন্তু ওই সহযোগিতার পর আমাকে অনুরোধ করেছে। আমি নাম বলতে চাই না, কিন্তু আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি যে আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। কারণ, এখন যেটুকু রিজার্ভ তা আমার দেশের জন্য প্রয়োজন, সেটা আমাকে রাখতে হবে।’

দেশের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃতীয়বারে মতো সরকারে। ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।

দেশের মানুষকে এক ইঞ্চি জমি ফেলে না রেখে উৎপাদন করার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, নিজেরটা নিজে করে খান, নিজে সাশ্রয় করেন, নিজের খাদ্য নিজে যোগান দেন। আমরা কিন্তু তা করতে পারি। কারণ বাংলাদেশ মানুষ তা পারে।’

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে এলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, দেশের মানুষের কাজ বেড়েছে।  রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়েছে তাই ভোগ্যপণ্য কিনতে বাড়তি খরচ হচ্ছে।

বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, টিকা  আবিস্কার করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা টিকা চেয়েছি।

‘আমরা খুব বেশি নিয়মে যাইনি। যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে প্লেন পাঠিয়ে কোটি টাকা খরচ করে আমরা কিন্তু টিকা নিয়ে এসেছি। মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। দেশের মানুষের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় টিকা পৌঁছে দেওয়া এবং চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সেবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। এগুলোর জন্য তো টাকা খরচ হয়েছে। এখনো অনেক দেশ টিকা পায়নি।’

দেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা।

বক্তব্যে ৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড ও খুনিদের পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, কখনো কোনো হত্যাকাণ্ড হলে আমার কাছে যখন বিচারের দাবি করে, তখন আমার মনে হয়- আমার বাবা-মা-ভাইদের হত্যার বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা ভোট দিয়েছেন বলেই এই হত্যাকা-ের বিচার করতে পেরেছি। এখনও কিছু খুনির শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। একজন খুনি আমেরিকায়, আরেকজন কানডায়, দুইজন পাকিস্তানে। আরকেজনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকা একজন খুনিকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার আচরণই এরকম। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে, তাদের ধরে এনে যেভাবেই হোক শাস্তি নিশ্চিত করবো। এটাই আমি চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের পরই ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগানও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা হয়। জাতির পিতার করে দেওয়া সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোটের অধিকার ছিল না। জিয়াউর রহমান তাদের ভোটের অধিকার ও রাজনীতি করার সুযোগ দেন। জাতির পিতার হত্যাকারীদেরও বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও প্রতি জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বলে, আমরা নাকি কিছুই করিনি। ষড়ঋতুর দেশ তো! যা করি, সব ভুলে যায়। তাই মানুষকে জানানো দরকার। ভুলে যাতে না যায়, সেজন্য যা করেছি তা মাঝেমধ্যে তুলে ধরি।

ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/আরআর/ইএস