শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ‘সুপারফুড’ ডিম

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৩ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৪

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

শীতকালে শরীর সুস্থ রাখার জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরী। প্রতিদিনের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিনসের যোগান যদি ঠিকঠাক না থাকে তাহলেই সহজে বিভিন্ন রোগ জাঁকিয়ে ধরে শরীরকে। এমতাবস্থায় সুস্থ থাকতে বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন বিশেষ পরামর্শ। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজ নির্ভয়ে ২টি করে ডিম খাবার পাতে রাখতেই পারেন। শীতকালে শরীরের কী কী উপকার হয় ভাবতেও পারবেন না।

ডিমের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বরের আশঙ্কা বাড়ে। তাই শীত হচ্ছে সিদ্ধ ডিম নিয়মিত খাওয়ার মোক্ষম সময়। ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরিতে প্রোটিন ব্যবহার করে শরীর। যা পরে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। আর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।

বিভিন্ন ধরনের খাদ্যগুণ রয়েছে ডিমে। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজসহ সব উন্নত পুষ্টি উপাদান থাকায় ডিমের গুরুত্ব অনেক। পেশির গঠনের জন্য ডিম অত্যন্ত উপযোগী। পেশি সুস্থ সবল রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন শরীরে।  সুপারফুড ডিম মস্তিষ্কের টিস্যু গঠন ও মেধা বিকাশে সহায়তা করে।

সর্দিজ্বর থেকে বাঁচাতে অত্যন্ত উপকারী একটি খনিজ উপাদান দস্তা। যা ডিম থেকে পেতে পারেন। সর্দিজ্বরের বেশিরভাগ ওষুধে এই দস্তা থাকে। ভিটামিন বি সিক্স ও বি টুয়েলভ এই দুটি ভিটামিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে ডিমে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে জরুরি। সেদ্ধ ডিমের ৬০ শতাংশ ক্যালোরি আসে চর্বি থেকে। মোট ক্যালরি থাকে প্রায় ৮০ ভাগ। ফলে সকালে একটি মাত্র সেদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন শক্তি পাওয়া যায় এবং দুর্বলতা হ্রাস পায়।

শীতে সিদ্ধ ডিম বেশি খান। কারণ, শরীরের জন্য উপকারী মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি আছে সেদ্ধ ডিমে। এগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থান দখল করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে। ফলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। হার্টের জন্য উপকারী এই চর্বিগুলো ইনসুলিনও নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়বেটিসের জন্য এ ধরনের ফ্যাটগুলো খুবই উপকারী। সেদ্ধ ডিমের দুই তৃতীয়াংশই এ ধরণের উপকারী ফ্যাট দিয়ে গঠিত। সেদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। ব্রেকফাস্টে একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ৬ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়।

শীতকালে যেহেতু সূর্যের দেখা পাওয়া যায় কম তাই ডিম খেলে আপনি সেই উপকার পাবেন। প্রতিদিনের ভিটামিন ‘ডি’য়ের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারে একটি ডিম। সেদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁত শক্ত করে। ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরের হাড়ের কাঠামো মজবুত ও শক্ত হয় এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।

প্রতিদিন খাবার পাতে ডিম রাখেন তাহলে তা শরীরের অনেক উপকার করে। আমরা সকলেই জানি শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াটা হার্টের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোলেস্টেরলের মধ্যে আবার ভাল-খারাপের ভাগ আছে। যদি শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে চান তাহলে নির্ভয়ে প্রতিদিন ২ টো করে ডিম খান। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

স্বাস্থ্যকর মাত্রায় চর্বি থাকে ডিমে। তবে এটা আপনাকে মোটা বানাবে না। শীতকালে এই চর্বি শরীরের জন্য উপকারী। ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান হলো ভিটামিন এ। ভিটামিন এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে, কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে এবং রাতকানার ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন সকালে একটি সিদ্ধ ডিম খেলে খাবার তালিকায় ৭৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ যুক্ত হয়।

ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, বায়োটিন, থিয়ামিন এবং আরও অনেক উপযোগী উপাদান। এই সমস্ত উপাদান ত্বক, চুল এবং নখের যত্ন নেয়। তাই সুস্থ সবল থাকার পাশাপাশি চির যৌবন লাভের জন্য বিশেষত ত্বকের যত্নে, চুলের যত্নের কথা ভেবেও ডিম রাখুন ডায়েটে। যাদের নখ বিনা কারণেই ভেঙে যায় ডিম খেলে তাদের সেই সমস্যা দূর হতে পারে।

আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ারা ঘোরাঘুরি করছে। চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষতিকারক এই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াই শরীরের বেশিরভাগ রোগের পেছনে দায়ী। এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরে শক্ত-সামর্থ্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দরকার। তাছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডিম খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়। মস্তিষ্ক সচল রাখতে সহায়তা করে ডিম।

ডিম চোখের জন্যও ভীষণভাবে উপকারী। ইদানিং সারাদিন ফোন কিংবা ল্যাপটপ ঘেটে ঘেঁটে চোখের সমস্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ডিমের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। এগুলো চোখের জন্য উপকারী।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা খুব ভালো। প্রতিটি ডিমে দশমিক ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য দারুণ কার্যকরী। ডিমে থাকা পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়াম, বায়োটিনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে শরীরে ভালো পরিমাণে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়। এতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। সেই সঙ্গে হৃৎপিণ্ডও ভালো থাকে। এছাড়া এতে কম ক্যালরি থাকে এবং বহুমুখী পুষ্টি উপাদানের দিক থেকেও এটি বেশ সমৃদ্ধ।

ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দীর্ঘ গবেষণার পর জানিয়েছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা সিদ্ধ ডিম খেতেই পারেন। তবে সিদ্ধ করার আগে কয়েকটি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেদিন সকালে ডিম সিদ্ধ খাবেন তার আগের দিন রাত থেকে ডিম ভিনেগারে ডুবিয়ে রাখুন। সারারাত ভিনেগারে ভেজার পর, সকালে সেই ডিম সিদ্ধ করে নিন আর নির্দ্বিধায় খান ডিম সিদ্ধ।

 

যেভাবে ডিম খেলে পুষ্টিমান ঠিক থাকে

হাফ বয়েল: ডিমের বাইরের সাদা অংশ ভালোভাবে সিদ্ধ হবে এবং ভেতরের কুসুম আধাসিদ্ধ থাকবে, এমন ডিমকেই স্বাস্থ্যকর বলেন চিকিৎসকরা। আগুনের তাপ ডিমের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুদের মেরে কুসুমের সবটুকু পুষ্টিগুণকে ঠিক রাখে। লবণ পানিতে মিনিট পাঁচেক সিদ্ধ করলে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হাফ বয়েল ডিম মিলবে সহজেই।

ফুল বয়েল: একটি সিদ্ধ ডিম থেকে প্রায় ১২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়া ফুল বয়েলড ডিম শুধু খাওয়াসহ সালাদ বা স্যান্ডউইচের সঙ্গে খাওয়া যায়। ফুল বয়েল ডিম সহজে হজম হয়। লবণ পানিতে মিনিট দশেক সিদ্ধ করলেই তৈরি হয়ে যায় সিদ্ধ ডিম।

তেলহীন পোচ: তেলবিহীন উপায়ে যদি ডিম পোচ বানানো যায় তাহলে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুই-ই রক্ষা হয়। তবে তেলবিহীন উপায়ে পোচ তৈরি করা একটু কঠিন। প্রথমে ডিমটা সাবধানে ভেঙে নিন একটি বাটিতে। এমনভাবে ভাঙতে হবে যেন কুসুম আস্ত থাকে, ছড়িয়ে না পড়ে। এর উপর স্বাদ অনুযায়ী গোলমরিচ ও লবণ ছিটিয়ে দিন। এবার একটি পাত্রে ভিনেগার দিয়ে অল্প পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে সাবধানে ছেড়ে দিন এই ভাঙা ডিম। পোচ তৈরি হয়ে গেলে ঝাঁজর দিয়ে পানি ঝরিয়ে তুলে নিন। এমন পোচে তেল লাগে না বলে ডিমের সবটুকু পুষ্টিগুণ অটুট থাকে।

 

(ঢাকাটাইমস/২৬ নভেম্বর/আরজেড)