কী চমক দেখাবেন রওশন এরশাদ?

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪১ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৬:৩৯

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে আজ দুপুরে দেশে ফিরছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদপত্মী রওশন এরশাদ। তাকে শাহজালাল বিমান বন্দরে সংবর্ধনা দেওয়াসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন রওশনপন্থীরা। ৪-৫ হাজার লোক সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিমান বন্দর থেকে গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেল পর্যন্ত সড়ক দ্বীপসহ রাস্তার দুপাশে লাগানো হচ্ছে রং-বেরংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন।

তবে রওশনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদেরের অনুসারীরা বা বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকছেন না বলে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

রওশনপন্থীরা বলছেন, বিমানবন্দরে নেমে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রওশন যে বক্তব্য দেবেন, তাতে চমক থাকছে। আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিএম কাদের যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, রংপুরের বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমানকেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন। আর এর মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিক ঐক্যের ডাক দেবেন রওশন এরশাদ। এই আহ্বানে জিএম কাদের সাড়া দিয়ে রওশনের নেতৃত্বে দল পরিচালনায় এগিয়ে আসবেন বলে তারা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেরার আগেই জিএম কাদেরের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের বিষয়ে রওশনের একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়েছে। জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়া দলের বেশিরভাগ নেতার সঙ্গেই এ বিষয়ে কথা হয়েছে রওশনের। উভয় পক্ষের আলোচনায় গুরুত্ব পায় জিএম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বিরোধী দলীয় নেতা ও চিফ হুইপের পদ, বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের দলে ফেরানোসহ দল পরিচালনার বেশকিছু বিষয়। এসব বিষয়ে আশ্বাস পেয়েই রওশন ফিরছেন দেশে।

সূত্র বলছে, যেহেতু জিএম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে রওশন এরশাদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা করবেন। জিএম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে জিএম কাদেরই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিরোধী দলীয় নেতা ও চিফ হুইপ পদে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। বহিষ্কৃতদের মধ্যে যারা রওশনপন্থী নেতাকর্মী, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। এসব শর্তেই দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে রাজি হন রওশন। এছাড়া আরও কয়েকটি শর্ত মেনে নেওয়ার পরই জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের আপাতত সুরাহা হয়।

জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে রওশন এরশাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নামবেন। সঙ্গে থাকবেন তার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ, ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও সাদের স্ত্রী মাহিমা সাদ। বিমান বন্দরের নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভিআইপি লাউঞ্জ গেইটে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। সেখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করবেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিশ্ব পরিস্থিতি, দেশীয় রাজনীতি, দলে চলমান অস্থিরতা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছানো ‘বিভ্রান্ত তথ্যের’ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি। অসাধুচক্রের দুর্নীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনগণের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র’ প্রসঙ্গে নিজ অবস্থান স্পষ্ট করবেন রওশন এরশাদ।

রওশনকে আনতে থাইল্যান্ডে গেছেন তার মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ। তিনি রওশনকে নিয়ে দেশে ফিরবেন। গতকাল রাতে ঢাকা টাইমসকে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রওশন দেশে ফিরে বিমান বন্দরে নেমেই তার বক্তব্যে বিভক্ত জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দেবেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে, তার নির্দেশনায় জাতীয় পার্টি পরিচালিত হবে। জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের বিকল্প নেই। তার নেতৃত্বেই দল আবার সুসংগঠিত হবে, পূর্বের চেয়েও শক্তিশালী হবে। দলে প্রকৃত এরশাদপ্রেমীরা জায়গা পাবেন।’

একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদ দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিতে একটি ছায়া পরিষদও গঠন করেছেন। যাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্সহ, এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদসহ দুই ডজন নেতাকে। তাদের বেশিরভাগই দল থেকে বহিষ্কৃত। আর রওশন এরশাদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বগ্রহণের পর দলীয় গঠনতন্ত্রে দেওয়া ক্ষমতা বলে মহাসচিব পদে পরিবর্তন এনে নিজের মনোভূত কাউকে এই পদের দায়িত্ব দিতে পারেন।

এদিকে জিএম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেই রওশনের দেশে ফেরা নিয়ে রাজনীতির ভিন্ন অংকও কষছেন কেউ কেউ। জিএম কাদেরপন্থীদের মধ্যেও চলছে নানা কথাবার্তা। নানা জল্পনা। কী চমক দেখাবেন রওশন, তা নিয়েও চলছে চুলচেড়া হিসাব-নিকাশ। জিএম কাদেরপন্থী কয়েকজন নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, তারা রওশনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। রওশনের ফেরা, সংবর্ধনা নেওয়াসহ রওশন অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে তাদের কড়া নজর রয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই বৈঠক করেছেন তারা। রওশন ফেরার পরও তাদের বৈঠক রয়েছে।

অন্যদিকে রওশন এরশাদ ও তার দেবর জিএম কাদেরের মধ্যে চাপা দ্বন্দ্ব কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে এসেছে। দল থেকে একে একে রওশনপন্থীদের বহিষ্কার করেন জিএম কাদের। রওশন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বহিষ্কার করা নেতাকর্মীদের দলে ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠান। কিন্তু রওশন নিজে গণমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি কথা না বলায় তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। আর ওই সন্দেহকে প্রকট করে তোলেন জিএম কাদেরের অনুসারী নেতারা। জিএম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু একাধিকবার ঢাকা টাইমসকে বলেন, রওশনকে ব্যাংককে জিম্মি করে একটি চক্র এসব করাচ্ছে।

রওশন এরশাদকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএমএম আলম, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, এমএ গোফরান, নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান টিটুসহ বহিষ্কৃত অন্য নেতারা।

তবে রওশন এরশাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়া বা জিএম কাদেরের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের সমঝোতা হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে জিএম কাদেরের প্রেস উইংয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সমঝোতার বিষয়টি জানা নেই। যদি সমঝোতা হতো, তাহলে জাতীয় পার্টির কোনো না কোনো নেতা রওশন এরশাদকে রিসিভ করতে বিমান বন্দরে যেতেন।’  

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যান রওশন এরশাদ। চিকিৎসা নিয়ে গত ২৫ জুন দেশে ফিরে বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর আবার ৫ জুলাই ব্যাংককে যান তিনি।  

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এফএ)