ঋণ কেলেঙ্কারির রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২২, ২২:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকিং বিভাগকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বৈঠকে।

এছাড়াও জঙ্গিরা যেন কারও সহায়তা ও অর্থ না পায় এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

ব্যাংক খাত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইনডাইরেক্ট আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনকে। চারদিকে এতো কথাবার্তা উঠছে, আসল সিনারিওটা কী সেটা শিগগির দেখে অবহিত করবেন আমাদের।’

তিনি জানান, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে বলে জানানো হয়। সংকট যেন না হয়, এ জন্য আমদানি ও উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকবে। এতে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে।

বৈশ্বিক সংকট নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০২৩ সালে কঠিন সময় যাবে। আন্তজার্তিকভাবে এটা বলা হয়েছে। চীনে ও রাশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। এ জন্য সংকট আসবে।

দেশে জ্বালানি সংকট আছে। ব্রুনাই থেকে আগামী বছর সিএনজি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি আরও জানান, খাদ্য, সার ও জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভোগ্যপণ্য, ফল, এসব ক্ষেত্রে খরচ কমাতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া প্রকল্প করা যাবে না। বিদেশি সাহায্য বা ঋণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হবে, সেগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। নিজেদের খরচের প্রকল্পে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বৈঠকে।

খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত সব জমি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উৎপাদন বাড়লে আমদানি কমবে বলে জানানো হয় বৈঠকে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ১০ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এ ছাড়া রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব।

তিনি বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। সংকট যেন না হয়, এ জন্য আমদানি ও উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকবে। এতে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যাতে অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে, আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে দেশ না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্কবার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। 

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, সেভাবে মানুষকে সঙ্গে নিজে কাজ করতে হবে। 

উন্নত দেশগুলোর রিজার্ভের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে দু-একটি দেশ হয়তো খুব লাভবান, কিন্তু বেশিরভাগ দেশ একেবারে...যারা উন্নত দেশ তারাও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এখন ব্যয় সীমিত করা দরকার, সাশ্রয়ী হওয়া দরকার। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রিজার্ভ যেটা হচ্ছে আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের পাঁচ-ছয় মাসের হিসাব আছে। তারপরও এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে।  

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের নিজেদেরও সাশ্রয়ী হওয়া এই কারণে দরকার, আবার আমি বলছি যে, আমরা ভবিষ্যতে যাতে সমস্যায় না পড়ি। কাজেই এখন থেকে আমাদের সেই ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে দরকার।  এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

সরকারি কর্মচারীদের আর আলাদা করে সম্পদের হিসাব দিতে হবে না। প্রতিবছর রিটার্ন দাখিলের সময় যে এক পৃষ্ঠায় সম্পদের বিবরণী দিতে হয়, তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করলেই হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, এনবিআর, আমি এবং জনপ্রশাসন সচিব বসেছিলাম। বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিয়েছি, সম্পদের হিসাব আর আলাদা করে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতি বছর আমরা যে রিটার্ন দেই, সেখানে একটি পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পত্তির হিসাব দিতে হয়, ওই পৃষ্ঠা জনপ্রশাসনকে দিয়ে দেব। 

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/আরকেএইচ/ইএস)