শীতে সুস্থ থাকতে যে নিয়মে পানি পান করবেন

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৩১ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৩৪

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

শীতের আমেজ চারিদিকে। শিশির ভেজা ঘাস, শেষ রাতের ঠান্ডা বাতাস আর কুয়াশার আবেশ। শীতের নানা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলেও এসময় নিজের প্রতি খেয়াল রাখার কথা ভুলে যান অনেকে। শীতের সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করেন এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে আমাদের শরীরে তৈরি হতে থাকে পানিশূন্যতা। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক, পেশি ও জয়েন্টের উপকার হয়। পানি শরীরের কোষগুলোকে পুষ্টি শোষণ করতে ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে। শীতের দিনগুলোতে হালকা গরম পানি পানের গুরুত্ব আরো বেশি, কারণ সংক্রমণের তীব্রতা প্রতিরোধ হতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ঠান্ডা পানি পরিহার না করলে তীব্রতা বেড়ে মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি রয়েছে।

মানুষের শরীরের ৭০ ভাগই পানি। শরীরের যাবতীয় কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় পানির। পানি শরীরে ওজন ধরে রাখে, রক্ত ও লালা তৈরি করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, ত্বক ভালো রাখে। এছাড়াও করে আরও নানা উপকার। আর এ কারণেই প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পানি পান করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের সব ধরনের বিপাক বা মেটাবলিজমে পানি প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই মেটাবলিজম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের অঙ্গগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। পানি কিডনির মাধ্যমে আপনার শরীরের সব ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে দেয়। চিকিৎসকদের মতে, সারা দিনে অন্তত দু’লিটার পানি খাওয়া জরুরি। এতে শরীরের অন্দরের সজীবতা বজায় থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, সারা দিনে দু’লিটার পানি খাওয়া কিন্তু একান্ত জরুরি নয়। স্কটল্যান্ডের এবার্ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। তাদের মতে, দুই-আড়াই লিটার পানি পান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। তবে বাড়তি যে কোনও কিছুই অজান্তেই বিপদ ডেকে আনতে পারে।

গবেষণা জানাচ্ছে, প্রতি দিন প্রায় দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশো গ্রাম পানি এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যথেষ্ট। তবে কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণে পানি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শরীরের হাইড্রোজেন অণু জলের সংস্পর্শে এসে ‘ডিউটেরিয়াম’ নামক একটি উপাদানে রূপান্তরিত হয়। যা শরীরে ক্রিয়াকলাপ সচল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিউটোরিয়াম শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

তবে যারা খুব আর্দ্র আবহাওয়ায় বসবাস করেন, ক্রীড়াবিদ, অন্তঃসত্ত্বাকালীন অবস্থায় বেশি করে পানি খাওয়া প্রয়োজন। ২০-৩৫ বছর বয়সি পুরুষদের প্রতি দিন ৪.২ লিটার পানি খাওয়ার কথা বলা হয়। আর ২০-৪০ বছর বয়সি মহিলাদের ৩.৩ লিটার পানি খাওয়া জরুরি বলে মনে করা হয়। গবেষণা বলছে, সারা দিনে যে খাবারগুলো খাওয়া হয়, তাতেও পানির পরিমাণ কম থাকে না। তারও হিসাব রাখা জরুরি।

শীতকালে ঠান্ডা পানির চেয়ে গরম পানি পানের উপকারিতা বেশি। ঠান্ডা পানিতে উপকার তো নেই-ই, বরং ক্ষতি। শীতকালে সকালে উঠে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করলে অনেক সমস্যা থেকে মিলবে সমাধান। তবে শীতকালে পানি পান করার বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। জেনে নিন শীতে গরম পানি পানের যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে-

সকাল হলেই সবার আগে আমাদের যে কথাটা মনে পড়ে, তাহলে পেট সম্পূর্ণ রূপে পরিষ্কার করা। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, গ্যাস ও অম্বলের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য গরম পানি ওষুধের কাজ করে। খালি পেটে গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরের এই ধরনের অভ্যাসকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে।

আপনি যদি পেট খারাপের রোগী হন, তার মানে বুঝতে হবে আপনার হজম সম্পর্কিত সমস্যা আছে। এই রকম সমস্যা থাকলে, প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করে গরম পানি খেলে, আপনি এই সমস্যার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, আপনি সহজেই খাবার হজম করতে সক্ষম হবেন।

গরম পানি পানে ঘাম হয়, ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায় শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করার ক্ষেত্রে গরম পানি ওষুধের কাজ করে। সারা শরীরের ছড়িয়ে থাকা বিষাক্ত পদার্থে নির্গত করতে পারবেন গরম পানির সহায়তায়। হালকা গরম পানি পান করলে শরীরের রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

সকাল বেলা গরম পানি খেলে আপনার শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাটের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। খুব দ্রুত ঝরাতে পারবেন আপনার শরীরের বাড়তি ওজন।

কাশি থেকে মুক্তি পেতে হালকা গরম পানির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। শুধু কাশিই নয়, সর্দি, গলা ব্যথা ইত্যাদি দূর করতেও কাজ করে এই হালকা গরম পানি।

ঋতুস্রাবের দিন গুলোতেও পেটে ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গরম পানি খুবই উপকারী। এই সময়ে পেটে যে ক্র্যাম্স জমে তা গরম পানির সাহায্যে অনেকটাই কম হয়ে যায়।

মাথা ব্যথার সমস্যা থাকলেও গরম পানি পান আপনাকে সেই কষ্টের থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। গরম পানি মাংসপেশিতে জমে থাকা বেদনাও দূর করতে সাহায্য করে।

গলার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় এই গরম পানি। আপনার গলা শুকিয়ে আসলে পান করুন সামান্য গরম পানি, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাবেন।

ত্বক ভালো রাখতে হালকা গরম পানি পান করার জুড়ি নেই। কারণ এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে তুলতে পারে। নিয়মিত হালকা গরম পানি পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে চোখে পড়ার মতো। তাই প্রতিদিন সকালে উঠে হালকা গরম পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।

হালকা গরম পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক বা সাইনাস খুলতে সাহায্য করে, শ্বাসতন্ত্রের শ্লেষ্মা পাতলা করে ও শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে গরম পানি পান করলে উপসর্গের তীব্রতা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণে ঠান্ডা পানি পান করলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। শীতের শুরু থেকেই প্রতিদিন হালকা গরম পানি পান করলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত মারাত্মক পরিণতি প্রতিরোধ হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ নভেম্বর/আরজেড)