ঢাকা টাইমসকে ড. শামসুল আলম

জ্বালানি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট আড়াল করা হলো

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২২, ২২:০০

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

বিশেষ পরিস্থিতিতে গণশুনানি ছাড়া সরাসরি জ্বালানির দাম সমন্বয় করার বিধান রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২২ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম । এতোদিন ধরে গণশুনানির মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি।

এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘গণশুনানি বন্ধ করায় ভোক্তার সব অধিকার খর্ব হয়ে গেলো।‘ তিনি বলেন, ‘গণশুনানির বিধান থাকার পরও জ্বালানি সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এখন এসব (আইন সংশোধন) করে সমস্ত কিছু আড়ালে নিয়ে গেলো।’

একাধিকবার বিদ্যুৎসহ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বিষয়ক গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ড. শামসুল আলম আরও বলেন, ‘আমরা গণশুনানিতে বলেছি, ভর্তুকি বাড়ানো লাগবে না, মূল্য বৃদ্ধি করা লাগবে না। আমরা যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করেছি, এগুলো যদি প্রতিরোধ করা যায়- তাহলে অনেক টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা। গণশুনানি ছাড়াই জ্বালানির দাম সমন্বয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে এসব কিছু বলার সুযোগ রোহিত করা হলো। বিআরসিকে অকার্যকর করে যখন খুশি তখন রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেবে। রাত ১২টায় কার্যকর করবে। কারও কিছু বলার থাকবে না, জানার থাকবে না বা বোঝার অধিকারও থাকবে না।’

ভোক্তার অধিকার বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘অধিকার আর নেই। যেরকম হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, সেরকম করবে। তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা তো বিআরসির ছিল। বিআরসিকে তারা তা করতে দেয় নাই। বিআরসি কোনো গণশুনানি করতে পারেনি। বিআরসির ক্ষমতা খর্ব করে সরকার হুট করে তেলের দাম বাড়িয়ে রাত ১২টায় কার্যকর করে দিলো। এখন থেকে এমনই হবে। আইনের এ সংশোধনী ভোক্তার অধিকার খর্ব করলো।’

ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এমনিতেই নানা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ভোক্তার দুর্দশা বেড়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। গণশুনানি ভোক্তার এক ধরণের অধিকার। এই আইনের ফলে ভোক্তার সেই অধিকারের জায়গাটা আর থাকছে না। ভোক্তার সঙ্গে বা ভোক্তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা বা গণশুনানির আয়োজন না করেই সরকার চাইলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে সরকার। এতে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এতে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।’

প্রসঙ্গত, বিদ্যমান আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বিইআরসি ৯০ দিন সময় নিয়ে নির্ধারণ করে। এ সময়ের মধ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মতামত নেওয়া হয় ভোক্তা প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের। সেখানে জ্বালানি সেক্টরের অপচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি, অভিযোগ এবং করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে গণমানুষ মতামত দিয়ে থাকে গণশুনানিতে। এই আইনের সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করতে কোনো গণশুনানির প্রয়োজন পড়বে না।  

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/আরআর)