৭৩ টন চাল আত্মসাতে খাদ্য কর্মকর্তা বরখাস্ত, থানায় মামলা

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৫৬

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্যগুদামের বিপুল পরিমাণ চাল, গম ও ধান আত্মসাতের ঘটনায় গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে চরভদ্রাসন থানায় মামলায় হয়েছে। আসামি করা হয়েছে নিরাপত্তা প্রহরী রফিকুল ইসলামকেও।

তদন্ত কমিটি গুদামের ৭৩ টন চাল, সাড়ে তিন টন গম, ২০ টন ধান ও সাড়ে আট হাজার খালি বস্তা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। এর পরই মামলা করা হয়।   

এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রশিক্ষণে দেশের বাইরে থাকায় তার দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তারিকুজ্জামান। তিনি জানান, উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ঘটনায় মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপর দুইজন সদস্য হলেন চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম ও ঢাকা বিভাগীয় অফিসের একজন কর্মকর্তা। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তারিকুজ্জামান বলেন, রবিবার বিকালে তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম বাদি হয়ে চরভদ্রাসন থানায় সানোয়ার হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গুদামের ৭৩ টন চাল, সাড়ে ৩টন গম, ২০ টন ধান ও সাড়ে ৮ হাজার খালি বস্তার হিসাব পাওয়া যায়নি। অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিন্টু মন্ডল বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলাটি রাতে রুজু করা হবে।

প্রসঙ্গত, চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সানোয়ার হোসেন চাল, গম ও ধান আত্মসাত করার পর গত চার মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি কার্ডের চাল ও ডিলারদের ১৫ টাকা কার্ডের চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে উপজেলার হত দরিদ্ররা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদামের নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।

 

বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান, ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) মো. তারিকুজ্জামান, মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেন ও চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম উপস্থিত থেকে গুদামের নথিপত্র যাচাই পূর্বক গুদামটি সিলগালা করেন।

ওই দিনই গুদামের চাল আত্মসাতের ঘটনায় মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপর দুইজন সদস্য হলেন চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম ও ঢাকা বিভাগীয় অফিসের একজন কর্মকর্তা।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে উপজেলা ওসিএলএসডি সানোয়ার হোসেন গাঁ ঢাকা দেন। এখন পর্যন্ত তিনি লাপাত্তা। রোববার (২৭ নভেম্বর) থেকে ওই গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী রফিকুল ইসলামও লাপাত্তা হয়ে যান।

এর আগে চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ খান ওসিএলএসডি সানোয়ার হোসেনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/এআর)