মেসির প্রতি বিধাতা এত নিষ্ঠুর হবেন?

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৫ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৩:০৮

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, ঢাকাটাইমস

চলতি বিশ্বকাপে ২২ নভেম্বর সৌদি আরবের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হেরে যাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন দলের  কিছু সমর্থক ‘যারা সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে যায় তারা নাকি বিশ্বকাপ জিততে এসেছে- এমন মন্তব্য করতে দেখা যায় । নিজ শহর মৌলভীবাজারে চলে আতশবাজিও । তাদের এমন অতিউৎসাহী  আচরণ আর  মন্তব্য দেখে ফুটবল সম্পর্কে তাদের 'পাণ্ডিত্য ' আমাকে 'মর্মাহত করে।

এ বিষয়ে  কিছু লিখার আগ্রহ হলেও  সময়ের ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

বাড়ি মনু নদীর তীরে এক অজোপাড়া গায়ে হওয়াতে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল। বাড়ির সামনের বিশাল চরে সেই ছেড়া কাপড় আর পরিত্যক্ত  বিভিন্ন পাটের দ্রব্য কেটে ফুটবল বানিয়ে আমাদের খেলাধুলা শুরু । একসময় নিজেদের মধ্যে  চাঁদা তুলে  দূরের শমসেরনগর বাজার থেকে ফুটবল  এনে পুরো এলাকা মিলে এক সঙ্গে খেলেছি। একই ফুটবল বার বার সেলাই দিয়ে উপস্থিত সময়ে মাঠে আসতেন এমন  সকলে মিলে একসঙ্গে মাঠে  নেমে পড়তাম। খেলেছি খালি পায়ে বুটজুতো জার্সি ছাড়াই।

ঢাকাইয়া ফুটবল লীগে মোহামেডান ক্লাবের সমর্থক ছিলাম । তখন আমাদের  গ্রামে কোনো  টেলিভিশন ছিল না। আমরা হলুদ কালারের ফিলিপস এক ব্যান্ডের রেডিওতে খেলার ধারাভাষ্য শুনতাম। ঢাকা লীগের ফাইনালে প্রায়ই আবাহনী মোহামেডান অথবা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ফাইনালে যেত। আবাহনী  মোহামেডানের খেলা হলে তো আর কথাই নেই। রেডিওর শ্রোতা শয়ের কাছাকাছি হয়ে যেত। হায়রে কী আনন্দ!

তথ্যানুসন্ধানে জানা  যায় আর্জেন্টাইন ফুটবলের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা।   ১৯৭৮ সালে  আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে  দিয়াগো ম্যারাডোনার আবির্ভাব। যেভাবে চলতি আসরে ফার্নান্দেজ অসাধারণ একটি গোল করে দর্শকদের নজর কেড়েছে।  সেই আসরে  চ্যাম্পিয়ন হয় মেরাডোনার দল। নিজে অবশ্য লাল কার্ড খেয়ে  সাইড লাইনে বসে থাকতে হয়। তখন বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার এত সমর্থক ছিল না। প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে কালো মানিক বা পেলের কথা উঠে আসায় অনেকেই ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক।

১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দল চ্যাম্পিয়ন হয়। সে বছর দিয়াগো ম্যারাডোনার ক্রীড়া নৈপুণ্য সারা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের মন জয় করে নেয় । আর আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়। যদিও তখন অনলাইনে সেই অনুসন্ধানের  সুযোগ ছিল না। খবরের কাগজের খেলার পাতাগুলোও ছিলো না এতো সমৃদ্ধ । অবশ্য বিশ্বকাপ শুরু হলে বিভিন্ন ক্রীড়া ম্যাগাজিন তারকা খেলোয়াড়দের পরিচিতি এবং বিভিন্ন দলের অতীত অবস্থান তুলে ধরতো।

এসব তথ্য উপাত্ত দেখে জেনেছিলাম বিশ্বকাপ ফুটবলের  প্রথম আসরে ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ ও ১৯ ৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়।  ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। সেবছর তাদের গোল মেশিন ছিল ক্যানিজিয়া। কিন্তু ফাইনালে খেলতে পারেননি এই তারকা খেলোয়াড়। আমার জ্ঞান মতে ইতালিতে সেই ফাইনালে  রেফারিদের ভূমিকাও ছিল জার্মানদের পক্ষপাতদুষ্ট।

২০১৪ সালে  ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে আর্জেনটাইরা । জার্মানির একজন বদলি খেলোয়াড় গুর্তেরেজ  অতিরিক্ত সময়ে গোল করে সেই ফাইনালের ইতি টানেন।

জানার বিশয় আর্জেন্টিনার বর্তমান ফুটবল  টিমটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে বিশ্বকাপে সৌদি আরবের সঙ্গে হারের পূর্বে ২০১৯ সাল থেকে টানা ৩৬ ম্যাচ তারা হারেনি।  যে রেকর্ড শুধু আছে ইতালির। ইতালি ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে আগেই রেকর্ড গড়েছিল।

আর সেই ৩৬ ম্যাচের একটি বিগত কোপা আমেরিকা ফাইনাল যেখানে তারা ব্রাজিলকে হারিয়েছে। সেই জয়ের নায়ক আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় মার্টিনেজ আছেন বিশ্বকাপ দলে।

ফুটবলে আরও জানার বিষয় ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে, রোনালদো, জার্মানির  ব্যাকেনবাওয়ার , লোথার ম্যাথিউস, ইতালির শিলাচ্চি রবার্তো ব্যাজিও, আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা, ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান বিশ্বকাপ হাতে নিতে পেরেছেন। নিজেদের দেশকে কাপ নিয়ে  দিয়েছেন।

সেদিক থেকে লিওনেল মেসি কী একেবারে শুন্য হাতে ফিরবেন? বিধাতা কি তার প্রতি এতো নিষ্টুর হবেন?

এ ছাড়া যে দলের আক্রমণ ভাগে আছেন দিবালা, ফার্নান্দেজ, ডি মারিয়া, মার্টিনেজ মেসির মতো ম্যাচ উইনার প্লেয়ার ।  লিওনেল মেসি এমন একজন  খেলোয়াড় যে প্রতিপক্ষের শারীরিক আঘাত থেকে  নিজেকে  নিরাপদ রেখেও একের পর এক গোল করতে পারেন, করাতেও পারেন । স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা আর ফ্রান্সের পিএসজির হয়ে  সহ-খেলোয়াড়দের  দিয়ে অনেক গোল করিয়েছেন মেসি।

বিশ্বকাপের চলতি আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ডিফেন্স ফুটবলের ম্যাজেশিয়ান মেসি । আমার ৯৯ ভাগ বিশ্বাস ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ হবে লিওনেল মেসির।

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/এআর)