পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপহারের কৃত্রিম পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে কলেজছাত্র হিমেল

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৪৮

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল রাজশাহী বাঘা উপজেলার কলেজছাত্র হিমেলের (১৮), কিন্তু প্রায় আট মাস আগে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের রামদায়ের কোপে বাম পা হারান তিনি। এরপরেই জীবনের সবকিছু বদলে যায় তার।

দুঃসহ সেই স্মৃতিটা আজও টাটকা কিশোর হিমেলের কাছে। সেদিন ছিল ২০২২ সালের ১৮ মে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তার এবং তার বাবা মোকাররম হোসেনের উপর রামদা হাতে হামলা চালায় প্রতিবেশী জেনরাল নামক ব্যক্তি। বাঁচার জন্য বাবা-ছেলে দুজনে দৌড়ে পালাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে রামদার কোপে মারাত্মক জখম হয় তার বাম পা। এরপর কেটে ফেলতে হয় সেই পা। 

এত দিন ক্রাচে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল এই কলেজছাত্রের দূর্বিষহ জীবন। দেয়া হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড কেন্দ্রে (সিআরপি) তার কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে। প্রায় আট মাস পর দুই পায়ে হাঁটতে পেরে হিমেলের মুখজুড়ে উপচে পড়ছিল হাসির ঝিলিক। সেই হাসি নিয়ে বললেন, ‘যেন হারিয়ে যাওয়া পা আবার ফিরে পেলাম।’

হিমেলের জীবন বদলে দেওয়ার পেছনে ছিল বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আহমেদের অবদান।

দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবাগ্রহণের কারণে আর্থিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল পরিবারটি। আর তখনই পরিবারটির পাশে দাঁড়ান প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আহমেদ।

বুধবার দুপুরে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) উপস্থিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে পঙ্গু হিমেলের জন্য উপহার হিসেবে দেন একটি কৃত্রিম পা।

এসময় প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, আমার হিমেলরা আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে ছেলেটির একটি পা হারাতে হয় খবরটি শোনার পর থেকেই আমি তার পরিবারের সাথে কথা বলে তার খোঁজ খবর রেখেছি। তরুণ একটি ছেলে যে কিনা এখনো কলেজের গন্ডি পেরুতে পারেনি তার এমন অসামান্য ক্ষতি সত্যিই মেনে নেয়া কষ্টকর। দীর্ঘ চিকিৎসার পর আজকে ছেলেটির জন্য একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করেছি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিংবা সমাজের একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি হিসেবে। এ ধরনের সহযোগিতা এবারই প্রথম নয়। সমাজের সকলেরই উচিৎ এধরনের কাজে এগিয়ে আসা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছে সিআরপি। প্রতিদিন এ ধরনের প্রায় হাজার খানেক মানুষ এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা পরবর্তী সেবাগ্রহণের জন্য আসছে এটি সত্যিই দারুণ প্রশংসনীয়।

এ বিষয়ে হিমেলের বড়বোন পিংকি খাতুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রথম থেকেই মন্ত্রী মহোদয় আমার ভাই এবং আমার পরিবারের পাশে সার্বক্ষণিক একজন অভিভাবকের মতো দাঁড়িয়েছেন। আজ আমার ভাইটি তার দেয়া উপহার কৃত্রিম পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং হেঁটে বেরাচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না। তার কাছে আমি এবং আমার পুরো পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি সিআরপিকেও অনেক ধন্যবাদ তাদের ট্রিটমেন্টে আমার ভাই এখন নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/এলএ)