‘পরাশক্তিরা যখন যুদ্ধরত, মানবিক বাংলাদেশ তখন লাখো শরণার্থী আশ্রয় দিচ্ছে’

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২০:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘কোভিড উত্তর পৃথিবীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যখন যুদ্ধ করে এবং সেখানে পরাশক্তিগুলো যখন সেই যুদ্ধের খেলায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে- সেই সময় বাংলাদেশ মিয়ানমারের লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে। বিষয়টি ছোট নয়, শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যখন যুদ্ধ বাঁধিয়ে সারা পৃথিবীকে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ফেলে দেয়, বাংলাদেশ তখন লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়, খাদ্য দেয়, বস্ত্র দেয়, বাসস্থান দেয়। তাহলে কী পরাশক্তির ওইসব রাষ্ট্র অনুকরণীয়?  নাকি মানবিক, গণতান্ত্রিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় হবার কথা।’

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট (আইডিইএ) আয়োজিত ‘ইউনি-সানাবিল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এবং অ্যাকাডেমিক বুক ডিস্ট্রিবিউশন ফেস্ট-২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য। 

এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা ধনতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী সমাজ হতে চাইনি। আমরা একটি মানবিক, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, চমৎকার গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সম্মিলনের বাংলাদেশ হতে চেয়েছিলাম। এটিই ছিল আমাদের আকাঙক্ষা। সুতরাং আমাদের সন্তানেরা উপযুক্ত হয়ে দেশ বদলে ফেলবে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। কারণ আমরা মাঝে মাঝে সামরিক শাসন, অপসংস্কৃতি, ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ- এসবের মধ্যে পড়ে যাই। কিন্তু এসব অপসংস্কৃতি ও অশুভর বিপরীতে দাঁড়িয়ে শুদ্ধতা, সংস্কৃতি, সৃজনশীলতায় স্বপ্নবাজ তরুণদের দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আমরা কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমি কখনোই তাদের দলে না যারা সব সময় হতাশার কথা বলে। আমি আশাবাদী মানুষ। কারণ আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুনত্ব আছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আছে। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র গেরিলাযুদ্ধে মুক্তি কামনায় যে দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ দেয়। একটি স্বাধীন ভূখণ্ড নির্মাণের জন্য কিছু না পাওয়ার কথা জেনেও লাফিয়ে লাফিয়ে প্রাণ দেয়। দু লক্ষ মা-বোন দেশের মানচিত্র পরিবর্তনের জন্য নির্যাতনের শিকার হন, সেই দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা বিষণ্নতা অথবা না পাওয়ার ব্যর্থতার গল্প আসবে এটাই অভাবনীয়। আমাদের ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ যে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। দেশে যতবার অগণতান্ত্রিক শাসন এসেছে, ততবার মানুষ তার প্রতিরোধ করেছে। রাস্তায় নেমেছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মুক্তবুদ্ধির সমাজ গড়ার জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কৃষ্টির পুনরুত্থান ঘটিয়ে সে অগণতান্ত্রিক পন্থাকে রুদ্ধ করেছে। এটিই বাংলাদেশ। অসীম সম্ভাবনার একটি দেশ।’

যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও আইডিইএর প্রধান উপদেষ্টা মো. হামিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মাজিদ, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক পারভেজ নাদির রেজা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষার্থীকে সামাজিক এই সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি ও বই উপহার দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/এলএ)