দেশে প্রথমবার হতে যাচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগা শিশু আলাদা করার অস্ত্রোপচার

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৯ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রায় সাত মাস আগে কুড়িগ্রাম সদরের আলমগীর হোসেন রানা ও নাসরিন আক্তার দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে দুই যমজ কন্যাশিশু নুহা এবং নাবা। শিশু দুটির মাথা-হাত-পা সবই আলাদা হলেও মেরুদণ্ড ও হাড় জোড়া লাগা। চলতি মাসেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। দেশে এটাই হবে মেরুদণ্ড জোড়া লাগা কোনো শিশুর প্রথম অস্ত্রোপচার। শিশু দুটির চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন। বিএসএমএমইউ নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্ব বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা অংশ নেন।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে চলতি মাসের মাঝামাঝি শিশু দুটির প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার করা হবে।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘মেরুদন্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুর অপারেশনের জন্য তাদের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অপারেশনটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। তবে আমরা আশাবাদী, তাদেরকে সুস্থ করতে পারব।’

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়া লাগা এই নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এই শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকায় আসতে অনুরোধ করেন।

ডা. হোসেন বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে এ মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুই ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দুই ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েক মাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।’

শিশু দুটির মা নাসরিন আক্তার ঢাকা টাইমসকে জানান, ৯ বছর আগে তাদের পরিবারে জন্ম নেয় প্রথম ছেলে সন্তান। সে বর্তমানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। পরবর্তীতে তারা মেয়ে সন্তানের আশায় আবারও সন্তান নিলে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

তিনি সকলের কাছে দোয়া চান, যেন অন্যসব  শিশুর মতোই তার সন্তানও সুন্দর ও সুস্থ হয়ে উঠে।

নুহা-নাবা নামের যমজ শিশু দুটি বর্তমানে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন আছে। এতদিন তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসার পর তিনি যমজ দুই শিশুর চিকিৎসার খরচ বহন করবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দির আহমেদ।

(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এলএম/এফএ)