মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী

একাত্তরের ডিসেম্বরের দিনগুলি বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আর তা বারবার ফিরে এসে জানান দেবে—শোষনের বিরুদ্ধে, হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙালি কখনো বিফল হয়নি।

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখ যুদ্ধের গতি বাড়ে। আর অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়ের পথে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে থাকে।

সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। আর এদিকে দেশ জুড়ে চলছিল প্রতিরোধ। প্রতিদিন মুক্তিবাহিনীর কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছিল পাকবাহিনী।

নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। আখাউড়া রেল স্টেশনে চলে সম্মুখযুদ্ধ। একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী।

বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মরণপন লড়াই করে অবরুদ্ধ দেশের অভ্যন্তরে অনেক মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করায় তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়।

এদিনে চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। তারা ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী।

এদিকে আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হনাদার বাহিনী পিছু হটে যায়। এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন লে. মাসুদ, সুবেদার খালেক, লে. মতিন, মেজর সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার।

বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্রকে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে ২ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের এক কর্মিসভায় বলেন, ‘সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে তারা (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

(ঢাকাটাইমস/০২ডিসেম্বর/ডিএম)