পথের বাধা পেরিয়ে রাজশাহীর সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:০১

রাজশাহী ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে পথের নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজশাহীর সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। শনিবার রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার বিকালে রাজশাহী পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে পথে পথে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে রাজশাহী রেল স্টেশনেও চলছে তল্লাশি। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করছে পুলিশ। আবার অনেককেই রাজশাহী শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এই অবস্থা চালাচ্ছে পুলিশ বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। শুক্রবার সন্ধ্যায়ও সমাবেশস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি নেতাকর্মীদের।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ঢাকা টাইমসকে জানান, পুলিশি বাধা এবং হয়রানি উপেক্ষা করে এরই মধ্যে লাখো নেতাকর্মী রাজশাহী শহরে প্রবেশ করেছেন। এরই মধ্যে অনেকেই রাজশাহী ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বাধা দিয়ে হয়রানি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাগম ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, ঈদগাহ মাঠে নেতাকর্মীদের থাকার জন্য তাঁবু টানানোর ব্যবস্থা করা হলেও পুলিশ প্রথম দিকে তাতেও বাধা দেয়। ফলে অনেক নেতাকর্মীকে রাতে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হয় বলেও জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশস্থলের আশপাশে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সমাবেশের দিন সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় নেতাকর্মীরা ভীড় করেছেন পাশের ঈদগাহ মাঠে। তারা মাঠের একপাশে অবস্থান নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অদূরে জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করছেন ডেকোরেশনের কর্মীরা।

বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ স্থানে পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় নেতাকর্মীরা এক-দুদিন আগেই সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হন। সেখানে রাত্রিযাপন করে সমাবেশ শেষ করে ফিরে যান।  

কিন্তু রাজশাহীর ক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হতে পারছেন না। গত বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ যা স্থানীয়ভাবে ‘মাদ্রাসা মাঠ’ নামে পরিচিত সেখানে গণসমাবেশে অনুমতি দেওয়া হলেও; শনিবারের আগে জমায়েত হওয়া যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে।

ফলে নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাদ্রাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। মাদ্রাসা মাঠ আর ঈদগাহ ময়দানের মাঝখানে একটি পুকুর আর একটি ভবন রয়েছে। 

বিএনপি নেতারা জানান, সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দুদিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত বিশালকার এ মাঠটি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক তাবু। হাজার হাজার নেতাকর্মী সেখানেই অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবারই মাঠটি ভরে গেছে তাবুতে।

শুক্রবার সকাল থেকে নেতাকর্মীদের জন্য মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সবজি, খিচুড়িসহ নানা রকমের খাবার রান্না করা হচ্ছে। মিছিল, স্লোগান, আলোচনা, আড্ডার পাশাপাশি সেখানেই খাবার খেয়ে নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।  

সরেজমিন শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়।

প্রতিটি ক্যাম্পেই আলাদা আলাদাভাবে বড় বড় ডেকচিতে রান্না হচ্ছে। ৩০ থেকে ৪০টি চুলায় রান্নার কাজ চলছে। একসঙ্গে রান্না, খাওয়া ও আড্ডা দেওয়াসহ সব মিলিয়ে সেখানে এখন উৎসবমুখর বনভোজনের পরিবেশ বিরাজ করছে।  জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা মিলে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করছেন। ছাত্রদলের নেতারা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ঈদগাহ মাঠে এসে পৌঁছান।

বিএনপির গণসমাবেশ সমন্বয় কমিটির আপ্যায়ন উপ-কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাফিকুল ইসলাম শাফিক বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বিশ্রামের জন্য ২০০ বেশি তাবু টাঙ্গানো হয়েছে। এ ছাড়া তাদের খাওয়ানের জন্য প্রায় ৪০টি চুলায় রান্না হচ্ছে।’

মাঠে অবস্থানরত বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, ধর্মঘটের মধ্যে আসতে অসুবিধা হবে বলে তারা আগে আগেই সমাবেশে চলে এসেছেন। সমাবেশ শেষ করে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন।    

(ঢাকাটাইমস/০২ডিসেম্বর/আরকেএইচ/কেএম)