খুচরা পর্যায়েও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম, প্রভাব পড়বে সব সেক্টরে

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার সপ্তাহ না পেরুতেই ১৯-২০ শতাংশ হারে গ্রাহক (ভোক্তা) পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই গণশুনানি শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিইআরসি। তার আগে সরকার বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম বাড়ালে বিইআরসির কিছু করার নেই বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন সংস্থাটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (বিপিডিবি) বেশ কয়েকটি কোম্পানি দাম বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বরাবর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিইআরসি।

জানা গেছে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পিডিবি আবেদন করেছে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এবং ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

বিদ্যুতের দাম দ্রুত না বাড়ালে আমাদের লোকসান গুণতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর আমরা গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। দ্রুত বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে আমাদের লোকসান গুণতে হবে। যার কারণে এই আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবাসিক বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বাকি গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।’

২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর আমরা গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ার পর বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।’

নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) এমডি জাকিউল ইসলাম জানান, আমাদের পক্ষ থেকে বিইআরসিতে পাঠানো প্রস্তাবে বিতরণের ব্যয় হিসাব করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যতটুকু বাড়ানোর প্রয়োজন, সেটুকুই করা হয়েছে।

১৬-১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমজাদ হোসেন।

পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন বিইআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। আমরা তা যাচাই-বাছাই করছি। যাচাই-বাছাই শেষে নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানি হবে। তারপর দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

‘বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে সরকার’ সেক্ষেত্রে আপনাদের এই আয়োজন কতটা ফলপ্রসূ হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যদি সরকার দাম বাড়িয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।

‘সরকার যদি দাম নির্ধারণ করে দেয় সেক্ষেত্রে আপনারা কেন কাজগুলো করছেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের তো এ বিষয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। আমরা আমাদের কাজ করছি।’

‘তাহলে আপনারা কি চাপমুক্ত হলেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর কোনো চাপ ছিল না এবং এখনও নেই। আমরা আমাদের কাজ করছি। এটা আমাদের নিয়মিত কাজ।’

সব সময় নয়- সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধি করবে। স্বাভাবিক সময়ে তো কাজটি আমাদেরই করতে হবে- যোগ করেন বিইআরসির এই কর্মকর্তা।

খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রভাব বিভিন্ন সেক্টরে পড়বে বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বিইআরসির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আপত্তি জানালেও দাম বাড়ানো হয়েছে। এই মুহূর্তে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ২১ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। এটি নিয়ে গ্রাহকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের পর ১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পুনর্র্নিধারণের ক্ষেত্রে বিইআরসির ৯০ দিন প্রয়োজন ছিল। এখন থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে সরকার। এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা করে বিইআরসি।

(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/এফএ)