হয়তো আমি কোনোদিন মা হতে পারতাম না: ফারিণ

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৫২

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত শুক্রবার (২ডিসেম্বর) রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উপর থেকে নিচে নামার সময় গুরুতর আহত হন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার ওই ঘটনায় একটি রড তার পায়ে ঢুকে মারাত্মক জখম হন অভিনেত্রী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়।

সেই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশাল একটি পোস্ট দিয়েছেন ফারিণ। জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এমনও হতে পারতো যে তিনি কোনোদিন মা হতে পারতেন না। ঘটনার জন্য তিনি শপিং মল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন।

ফেসবুকে যা লিখেছেন তাসনিয়া ফারিণ

‘গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আশে পাশে যমুনা ফিউচার পার্কের 1st floor থেকে ground floor এ নামার সময় গেট দিয়ে ঢুকেই যে মেইন escalator টা সেটায় আমার দুর্ঘটনা ঘটে। সিঁড়ির নিচে যে অ্যালুমিনিয়ামের নাকি স্টিলের সেটা জানি না, সে পাত খুলে বের হয়ে ধারালো কোনা আমার পায়ে আঘাত করে।’

‘আমি সিঁড়ির ডান পাশে ছিলাম। আর ওইটা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কলিসন হয় আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় অনেকটুকু আর পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায় ও ডিপ কাট হয় যেটা পরবর্তীতে টের পাই। কিন্তু ঐ মুহূর্তের শুধু একটা ইমেজ আমার মাথায় ঘুরে ফিরে বারবার আসছে তা হলো কিছু বোঝার আগে সবাই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল আর আমি দেখলাম ডান পা স্ক্র্যাচ করে পায়ের পাশ দিয়ে মাঝখান হয়ে বাম পায়ের উপরের দিকে একটা পাত ঢুকে যাচ্ছে আর চলন্ত সিঁড়িটিও আমাকে আরো সেদিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।’

‘যদি গতকাল fraction of second এর মধ্যে আমাকে আমার ভাই পেছন থেকে টান দিয়ে না সরাত বা আমার বাবা যদি আমাদের দুই জনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিত আমি জানি না আজকে এই status লেখার জন্য আমি বেঁচে থাকতাম কিনা। হয়তো থাকতাম তবে আমার পা থাকত না বা আমি কখনো মা হতে পারতাম না।’

‘সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা হয়তো লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি নিচে নেমে দাঁড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের কিছুই আমার মনে নেই। সম্বিত ফেরার পর দেখি আমার হাঁটুর উপর থেকে প্যান্ট ছেড়া এবং পুরো পা ঝা ঝা করছে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।’

‘মজার ব্যাপার হলো, আমার এই ঘটনাকে আমি এক্সিডেন্ট মানতে নারাজ। কারণ আমার এই ঘটনা ঘটার কমপক্ষে পনের মিনিট আগে আরেক ব্যক্তির সাথে একই ঘটনা ঘটে। তার পায়ের মাংস ভেদ করে ওই পাতের কোনা ঢুকে যায়। উনি নিজে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে লোকজন নাকি সাবধান করছিলেন এবং দায়িত্ববান কাউকে খুঁজছিলেন। শেষে কাউকে না পেয়ে help desk এ যান এবং এরমধ্যে আমার এই ঘটনা ঘটে, সাথে আরো একজন ভুক্তোভোগীকে খুঁজে পাই।’

‘আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে ফাইনালি একজন স্টাফ আসে এবং অনেকবার বলার পর ম্যানেজার কল করে। ততক্ষণে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যাচ্ছে আর ব্যথার চেয়ে বেশি ফিল হচ্ছিল হিউমিলিয়েশন। ওখানে কোনো scene create করার চেয়ে আমার মনে হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায় এটার solution করা দরকার। তাই আমি বলার পর দুইজন কর্মচারী আমাদের তিনজন আহত ব্যক্তি ও তাদের সাথে যারা ছিল সবাইকে বেসমেন্ট ১-এ নিয়ে যায়।’

‘আমাদের ধারণা ছিল, নিশ্চয়ই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্চর্য বিষয় হলো, এতবড় মলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স অথবা first responder তো দুরে থাক একটা first aid box নেই!! একটা first aid box! পনের বিশ মিনিট তারা শুধু এই ফার্মেসি সেই ফার্মেসি ফোন করল। কেউ নাকি দোকান ছেড়ে আসতে পারবে না। অবশেষে আধাঘণ্টা পর একজন আসে, আর ওই দুই ব্যক্তির চিকিৎসা করে। কিন্তু ফিমেল ডক্টর ছাড়া আমার চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে আমার ভাইকে পাঠালাম একটা ট্রাউজার কিনে আনার জন্য।’

‘যমুনা ফিউচার পার্কের কর্তৃপক্ষের মতে, এই দুর্ঘটনা নাকি বেশি লোক ওঠার কারণে হয়েছে! তার মানে কি আপনারা আগে থেকেই জানতেন? নাকি ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে আগে থেকেই এই অবস্থায় ছিল তা আপনারা টেরই পাননি? আর একজনের সাথে এটা হওয়ার পরও কেন কোনো অ্যাকশন নেননি আপনারা?’

‘এস্কেলেটরের দায়িত্বে থাকা কাউকে ডাকতে বললে বলে সে আসেনি। আর আমার এই পরিস্থিতিতে তারা আমাকে চা কফি অফার করে যেখানে আমার বসার মত পরিস্থিতিতে নেই। যা হোক, কাপড় বদলে আমাদের গাড়ি করে এভারকেয়ারের ইমার্জেন্সিতে যাই। ড্রেসিং, স্টিচিং, এক্স-রে, ইনজেকশনের পর রাত ১২টায় ছাড়া পাই।’

‘তাদের একজন কর্মকর্তা হসপিটাল পর্যন্ত আসে আমরা বলার কারণে এবং বিলের প্রসঙ্গ উঠতে বলে ‘আমি কেন দিব?’ আপনাদের দুই চার টাকার আমার দরকারও নাই, বাট মানবিকতাও নাই?! যেখানে আপনারা নিজে দোষ স্বীকার করেছেন এবং আপনার কাছে কোনো ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত আমি চাইনি। একটা সামান্য ইমারজেন্সির বিল দেয়ার মানসিকতা আপনাদের নেই? উনাদের মতে, এটার বিচার হচ্ছে তারা অভ্যন্তরীণভাবে সুষ্ঠ(!) তদন্ত করবেন।’

‘আজকে আমার বা অন্য কারো প্রাণ গেলেও তাদের কিছুই আশে যেত না। আমার সারারাত ঘুম হয়নি। মেন্টালি ট্রমাটাইজড। আমার ভাই যদি আমার পেছনে আজকে না থাকত বা আমাকে ধরতে যদি একটু দেরি করে ফেলত তারপর কি হত আমি চিন্তাও করতে চাই না। আল্লাহ যাতে কাউকে জীবনে এই পরিস্থিতিতে না ফেলে। আর আপনারা লিফট বা এসকেলেটর যাই ব্যবহার করেন না কেন নিজের সাবধানতা অবলম্বন করবেন।’

‘আমি শারীরিকভাবে সুস্থ আছি। ডক্টর পাঁচ দিন বেড রেস্ট আর এন্টিবায়োটিক দিয়েছে। বোন ইনজুরি হয়নি। বসতে পারছি না আর ডান দিকে কাত হয়ে শুতে হচ্ছে। তবে মানসিক এই ট্রমা কি আদৌ কোনোদিন কাটবে কিনা জানি না। সবচেয়ে বেশি ফিল হচ্ছে হতাশা। মরে গেলেই মানুষ কোনো বিচার পায় না। আমি তো বেঁচে আছি আমার আর কি বিচার হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/এজে)