পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন জসিম

দিনমজুর কৃষক বাবার ছেলে জসিম মাতুব্বর। জন্মের পর থেকেই তার নেই দুটি হাত। এমন অবস্থায় দারিদ্রের কারণে জীবনসংগ্রামের কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন। বাবার সংসারের সহযোগিতা করতে ছোট্ট বেলা থেকেই মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেন। শুধু পা দিয়েই সেই কাজ শিখেছেন জসিম। কাজের পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন পড়ালেখাও। অদম্য এই মেধাবী এবার দিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষা। শুধু তাই নয়- জসিম খেলতে পারেন ক্রিকেট ও গাইতে পারেন ভাল মুরশিদী গান। তার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও। জসিম লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চান।

জসিম ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের উত্তরপাড়ার দরিদ্র কৃষক হানিফ মাতুব্বর ও গৃহিণী তছিরন বেগমের ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জসিম সবার বড়। যেকারণে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও শত প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে সফল হয়ে পরিবারের বড় হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে নিতে চান তিনি। 

জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবন সংগ্রামী জসিম দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লিখে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এর আগে জসিম পা দিয়ে লিখে উপজেলার কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পাস করে। বর্তমানে জসিম ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখার শিক্ষার্থী জসিম। এবার ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

অদম্য মেধাবী জসিম বলেন, এবার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে বলে আশাবাদী। আমি নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র মা-বাবার সংসারের হাল ধরতে চাই। তাই প্রতিবন্ধী জসিম  স্বাবলম্বী হওয়ার সংগ্রামে নেমেছি।

তিনি বলেন, নগরকান্দা বাজারে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছি। তাছাড়া সংসারেরও কিছু খরচ আমি চালাই। আমি লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চাই।

জসিমের প্রতিবেশীরা জানায়, পা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে মোবাইলের সার্ভিসিংয়ের কাজ করে এলাকায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে জসিম। তাছাড়া গত বছর তাকে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে আনারস বিক্রি করতে দেখা গেছে।

তারা জানায়, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার দুর্বার বাসনায় শত বাধা উপেক্ষা করে অসম্ভবকে সম্ভব করার দৃঢ প্রত্যয় প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে শুধু ইচ্ছাশক্তি দিয়েই এই পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে জসিম।

জসিমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, আমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। তার একটি হাতও নেই। স্বাভাবিক চলাফেরাও ঠিকমত করতে পারে না। তবে জসিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে সবার চেয়ে বেশি মেধাবী। কোনো কাজেই সে পিছিয়ে থাকেনি। বিশেষ করে পড়ালেখার প্রতি অনেক মনোযোগ তার। পা দিয়েই জসিম লেখালেখিসহ সব কাজ করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ি ও ফসলি জমিসহ সম্পত্তি বলতে মাত্র আট শতাংশ। অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে পয়সা রোজগার করে সাত সদস্যের সংসার চালিয়ে আসছি। অনেক সময় সন্তানদের মুখে ঠিকমত দুই বেলা ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয়। অভাবের এই সংসারে অতি কষ্টে লেখাপড়া করছে আমার ছেলে প্রতিবন্ধী জসিম। আমার ছেলে জসিমের অনেক স্বপ্ন। সে লেখাপড়া করে আর সবার মত সরকারি চাকরি করতে চায়। তার মনের আশা যাতে পূরণ হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জসিমের দিনমজুর কৃষক বাবা।

(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/এলএ)