বিশেষ অভিযানে জঙ্গি ধরা পড়েনি

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫২ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০৩

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

শনিবার রাত ১১ টা ৪৮ মিনিট। রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো খোলা থাকলেও ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলো বিশেষ অভিযান চলার কারণে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ মডেল থানার প্রধান গেট বন্ধ করে ভেতরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন একজন পুলিশ সদস্য। থানার সামনে তখন ৯টি পুলিশের পিকআপভ্যান। ভেতরে ডিসি-এডিসির গাড়ি। থানা কম্পাউন্ডে সব পুলিশ সদস্যের বিশেষ অভিযানের বিষয়ে ব্রিফ করছিলেন ডিসি-এডিসি। রাত ১২টার পর থানা থেকে বিশেষ অভিযানে বের হন পুলিশ সদস্যরা। বিশেষ অভিযান ঘিরে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎকন্ঠা কাজ করায় সড়ক খালি হয়ে গিয়েছিল ১২টার আগেই। রাতের ঢাকায় নেমে এসেছিল নিস্তব্ধতা। এ ছিল বিশেষ অভিযানের থমথমে তৃতীয় রাত। আজ পঞ্চম দিনের মতো চলবে বিশেষ অভিযান।

শুধু শাহবাগ থানাই নয়, বিশেষ অভিযান কেন্দ্র করে রাজধানীর সব থানায়ই সতর্ক ছিল পুলিশ। গভীর রাতেও তৎপর ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জঙ্গি গ্রেপ্তারকে গুরুত্ব দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে একযোগে এই বিশেষ শুরু হলেও গতকাল রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো জঙ্গি গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত শনিবার রাতে জঙ্গি সন্দেহে মহাখালী এলাকার ‘ইনসাফ’ আবাসিক হোটেল ও দৈনিক বাংলা এলাকার ‘রহমানিয়া’ আবাসিক হোটেল ঘিরে অভিযান চালানো হলেও ফল হয়নি। সেখানে কোনো জঙ্গির অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ।

যদিও গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখার পাঠানো এক আদেশ অনুসারে, দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়। ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার কথা উল্লেখ করা হয় ওই আদেশে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মনজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, চলমান বিশেষ অভিযানে রবিবার পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৩৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি, মাদক কারবারি, সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধী রয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, গত ৫ দিনে বিএনপির ১০৩১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মেসে অভিযানকালে পুলিশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

তবে পুলিশ বলছে, বিশেষ অভিযানে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে। সে যে দলেরই হোক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কাউকে হয়রানি না করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বিশেষ অভিযানে অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যাদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত রয়েছেন।’

এদিকে জঙ্গিবাদ দমনে গঠিত পুলিশের বিশেষ ইউনিট অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সদর দপ্তরের  পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আসলাম খান গতকাল রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা জঙ্গি গ্রেপ্তারে সব সময়ই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। একজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের আগে কয়েক মাস ধরে কাজ করতে হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরতে এটিইউ কাজ করছে বলেও জানান এই পুলিশ সুপার। গত মাসে কয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও বিশেষ চলতি মাসে কোনো জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়নি বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে বিশেষ অভিযানের তৃতীয় দিন শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির সামনের সড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। ওই বাসভবনে কেউ ঢুকতে গেলেই পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়ছেন। এমনকি ওই রাতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের গাড়িও তল্লাশি করা হয়। এছাড়া আমিনবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নকে। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার রাতে বনানীর ইনসাফ আবাসিক হোটেলে অভিযানকালে রাজধানীর বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিক জানিয়েছিলেন, কয়েক দিন ধরে আমাদের কাছে তথ্য ছিল নাশকতার উদ্দেশ্যে জঙ্গিরা আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছে। যার ভিত্তিতে আজ সন্ধ্যা থেকে হোটেলের আশপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়।’ তবে অভিযান শেষে কোনো জঙ্গি ধরার তথ্য দিতে পারেনি বনানী থানার পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখার পাঠানো এক আদেশ অনুসারে, দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়।
ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বিবেচনায় এই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে ওই আদেশে জানানো হয়।

এ ছাড়াও মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এই অভিযান পরিচালনা করার কথা বলা হয় আদেশে।
আদেশ অনুযায়ী আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীরা লুকিয়ে থাকতে পারে এমন স্থানে বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও মাদক কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারসহ মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে এই অভিযানে।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শনিবার রাতে রাজধানীর আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন এলাকায় যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, তা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক।’

তিনি জানান, বিশেষ অভিযানে চার দিনে রাজধানী ঢাকা থেকে ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। পাশাপাশি কেউ যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি পুলিশকে সতর্কভাবে দেখভাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর)