‘পর্ন দেখিয়ে বলাৎকার, তারপর শিশু আরিফুজ্জামানকে হত্যা’

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:০৭ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:২৫

নিজস্ব প্রতিবেতক, দিনাজপুর

কম্পিউটারে পর্নোছবি দেখিয়ে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয় শিশু আরিফুজ্জামানকে। বিকৃত রুচির পরি সমাপ্তি করে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার পিতার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে কিলার শরিফুল ইসলাম (২২)। 

মুক্তিপণের দাবিতে দিনাজপুরের খানসামায় অপহরণের ৫৬ ঘণ্টা পর মাটিতে পুঁতে রাখা বস্তাবন্দি শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধারের পর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ এসব কথা জানান। 

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ জানান, অপহৃত শিশু রক্ষায় আমাদের জোর প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু, মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিপণ বাবদ প্রথম দফায় শিশুটির বাবার কাছে ৫৪০০ টাকাও বিকাশে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ৮ বছরের শিশু আরিফুজ্জামানের পিতা মো.আতিউর রহমান ২ ডিসেম্বর রাতে শিশু নিখোঁজ এর সাধারণ ডায়েরি করার পরেই আমরা মামলা নথিভুক্ত করে এঘটনায় সন্দেহভাজন তিন যুবকে আটক করি। আটককৃত কায়েমপুর মাস্টারপাড়া  গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৪), গফুর উদ্দীন শাহপাড়া গ্রামের  ওবায়দুরের ছেলে শামীম (২২) ও একই এলাকার মো. রিয়াজুলের ছেলে শাহিনুর।

অপহরণ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তারা অস্বীকৃতি জানালেও কৌশলে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড আপস) মো. আসলাম উদ্দিনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল), খোদাদাদ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল সার্কেল) মো রওশন আলীর সমন্বয়ে একটি টিম শিশুটি উদ্ধার পরিচালনা করে।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া একটায় খানসামা উপজেলার পাকেরহাটস্থ মহাসড়ক সংলগ্ন জিকরুলের মিলের পার্শ্বে নীলফামারী সদর থানার পুলিশের সাবেক গাড়ি চালক আব্দুস সালামের বাড়ির আঙ্গিনা খুঁড়ে বস্তাবন্ধী হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশু আরিফুজ্জামান বাড়ির অদূরে চেহেলগাজী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মাটিতে পুঁতে রাখা হাত-পা বাঁধা শিশু আরিফুজ্জামানের বস্তাবন্দি মরদেহটি মিলেছে কায়েমপুরস্থ তাদের বাড়ি থেকে কমপক্ষে সাত কিলো মিটার দূরে।

ঠাকুরগাঁও এ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করায় এ সময় বাড়ির মালিক নীলফামারী সদর থানার পুলিশের সাবেক গাড়ি চালক আব্দুস সালাম বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ঘরে বাড়িটিতে দুজন ভাড়াটিয়া রেখেছেন। তারমধ্যে এক ভাড়াটিয়া অপহরণকারি শরিফুল ইসলাম ৪০০ টাকা ভাড়ায় মেস হিসেবে একটি রুম নিয়ে ৩ মাস ধরে ছিলেন। অন্য রুমে এক বয়স্ক দম্পতি। শরিফুল যে সেখানে রুম ভাড়া নিয়েছিল তা জানত তার বাবা-মাসহ পরিবারের কেউ। সেখানে একটি রুম মেস হিসেবে ভাড়া নিয়ে একটি কম্পিউটার রেখেছিলেন। নিজে মাদ্রাসায় ফাজিল পাশ করার পর গ্রাফিক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাম্যমানে প্রশিক্ষক ছিলো শরিফুল। 

২ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৪টায় খানসামা উপজেলার ইউপি  ৪ নং খামার পাড়া ইউপির কায়েমপুর ডাক্তার পাড়া গ্রাম থেকে আরিফুজ্জামানকে ফুসলিয়ে নিজের বাই সাইকেলের ক্যারিয়ারে উঠিয়ে নিয়ে যায়,শরিফুল। ভাড়া মেসে নিয়ে কম্পিউটারে পর্ণ ছবি দেখিয়ে বলাৎকারের পর বিকেল ৫টায় হত্যা করে শিশু আরিফুজ্জামানকে।

হত্যার পর রাত সাড়ে ৮ টায় শিশুটির পিতা আতিউর রহমানের কাছে,মুক্তিপণ দাবি করে কিলার শরিফুল ইসলাম'(২২)।  কৃষক আতিউরের কাছে নগদ তেমন টাকা না থাকায় সন্তানকে বাঁচাতে প্রথম দফায় ৫ হাজার ৪০০ টাকা বিকাশ করে। বিকাশ থেকে ওই টাকা তুলে খোন্তি ক্রয় করে ভাড়া মেসের আঙ্গিনা খুঁড়ে হার-বাঁধা আরিফুরজ্জামানের মরদেহ বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে।

গ্রেপ্তারকৃত কিলার শরিফুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে জেনে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্যে আদালতের কাছে কিলার শরিফুলের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

 

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এআর)