শিশুশ্রম মুক্ত হচ্ছে কেরাণীগঞ্জ

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

 

২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম নিরসনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরি জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি নিয়ে অংশীজন সভা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৮’ অর্জনে ইউনিসেফ বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সভা হয়।

 

সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে পাঁচটি কৌশলগত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, স্থান ও খাতভিত্তিক পরিকল্পনায় এরই মধ্যে রাজধানীর অদূরের কেরানীগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রথম মডেল শিশুশ্রমমুক্ত জেলা গড়ে তোলার কাজ চলছে।

 

দেশের ১৬টি মন্ত্রণালয়সহ উন্নয়ন সংস্থার অংশগ্রহণে সোমবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মশালা। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোছাঃ হাজেরা খাতুন বলেন, গত কয়েক দশকে শিশুশ্রম নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। তা সত্বেও  দেশের ৫-১৭ বছরের শিশুদের ৬.৮ শতাংশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমে জড়িত। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে শিশুদের সহিংসতা, অধিকার হরণ ও নির্যাতন থেকে সুরক্ষায় এই পরিকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।   

 

এসময় ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা প্রধান নেটালি ম্যাককাওলি বলেন, শিশু শ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া শিশুদের রেকর্ড রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিত ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

 

ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাপক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও সহিংসতা প্রতিরোধে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এলিজা কল্পনা বলেন,  এসডিজি ৮ এর অধীনে এ বছরেই ইউনিসেফ বাংলাদেশ,  শ্রম অধিদপ্তরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ওই ৫ম বৈশ্বিক সভায় এই দুই সংস্থাকে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করে ইউনিসেফ। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই কর্মশালা। আমরা চাই শিশুশ্রমকে বিদায় জানিয়ে একটি শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা করতে। এটা হবে এমন একটি পদ্ধতি যা সরকার নিজেই তৈরি করবে এবং তা হবে টেকসই ও  মাননসই। 

 

বক্তব্যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব তৌফিকুল আরিফ শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনাকে আরো বিশদ ভাবে বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলতে পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভাগ করে আরো সুস্পষ্ট করা উচিত। এরই মধ্যে দুই বছর চলে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কার্যক্রম মূল্যায়নের আহ্বান জানান তিনি।   

 

এর আগে কর্মশালার প্রথম পর্বে কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরেন আইসিআইডিআইএন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। উপস্থাপনায় তিনি জানান, দুইটি পৃথক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে শিশুশ্রম ৫০ শতাংশ কমেছে। এখন আমাদের বাধ্যমূলক কাজ থেকে শিশু শ্রম অপসারণ করতে হবে। এখন যারা শিশুশ্রমে জড়িত তাদের ডিজিটাল কার্ডে অধীনে আনা হলে সহজেই তাদের পুণর্বাসনের কাজ সহজ হবে। আর যেহেতু জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ৯৫ শতাংশ অর্থই এরইমধ্যে সংস্থান হয়ে গেছে সেজন্য পুরো পরিকল্পনাটাই বাস্তবায়ন যোগ্য। তবে এক্ষেত্রে অংশীজনদের স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ করতে হবে।   

 

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ বিটিজিডব্লিউএল সভাপতি জেড এম কামরুল আলম, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব জুলিয়া জেসমিন, শ্রম অধিদপ্তর পরিচালক আবু আসিফ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে ৫টি গ্রুপে ভাগ হয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/কেএম)