মানিকগঞ্জের শিশু রায়হানের বিরল রোগ সারাতে ২২ কোটির ইঞ্জেকশন, কী অবস্থা তার?

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জন্ম থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু রায়হান। দুই বছর বয়স হলেও কথা বলতে বা বসতেও পারত না সে। কারণ সে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ)-তে আক্রান্ত। সে যে বেঁচে থাকবে সেই আশাই ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবার।

কিন্তু সহজে হাল ছাড়তে চাননি দেশের চিকিৎসকরা। রায়হানকে সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নেন তারা। তাদের জন্যই এখন অল্প অল্প কথা বলতে পারছে শিশু রায়হান। সেই সঙ্গে একটু নড়াচড়া করতে এবং কোনোকিছুর ‘সাপোর্ট’ পেয়ে বসতেও পারছে।

কারণ, চিকিৎসকরা রায়হানের জন্য ব্যবস্থা করে ‘জিন থেরাপি’। বিশ্বব্যাপী একটি প্রকল্পে তার জন্য ২২ কোটি টাকা দামের ‘জিন থেরাপি ইঞ্জেকশন’-এর ব্যবস্থা করা হয়। বিনামূল্যে এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাকে। তারপর একমাস পরে বদল আসছে রায়হানের জীবনে।

মানিকগঞ্জ বাড়ি শিশু রায়হানের। গত ২৪ অক্টোবর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স’ হাসপাতালে জিন থেরাপি দেওয়া হয় তাকে। তারপর বাড়ি ফিরে গিয়েছিল রায়হান। প্রায় একমাস পর আবার তাকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। সেখানে তার কিছু টেস্ট করা হয়।

একই সঙ্গে কিছু ‘থেরাপির’ কথা বলা হয়েছে। বাড়িতে কী করে এই থেরাপি দিতে হবে তা শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে রায়হানের মা রিনা আক্তারকে। হাসপাতালের চিকিৎসক জোবাইদা পারভিনের আশা, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়ার পরে নিজেই হাঁটতে পারবে রায়হান।

মানিকগঞ্জের নবগ্রামের রফিকুল ইসলাম এবং রিনা আক্তারের বিয়ের প্রায় ৯ বছর পর জন্ম হয় রায়হানের। জন্মের ৯ মাস পরেও সে যখন কথা বলতে এবং হাত-পা নাড়তে পারত না, তখন তাকে আনা হয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। সেখানেই জানা যায় বিরল রোগে আক্রান্ত রায়হান।

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি মূলত জেনেটিক কারণে হয়। জন্মগত এই রোগের কারণে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স’-এর চিকিৎসক জোবাইদা জানান, নোভার্টিস নামে একটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি তাদের সিএসআর ক্যাম্পেনের জন্য ‘ওনাসেমনোজিন অ্যাবেপারভোভেক’ নামে বহুমূল্য ওষুধটি দেয়। লটারির মাধ্যমে মাসে দুজনকে বেছে নেয় তারা। লটারিতে নাম ওঠে রায়হানের।

জোবাইদা বলেন, ‘এখন এই ওষুধ এবং চিকিৎসার ফলে রায়হানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আগে সে মাত্র একটি বা দুটি শব্দ বলতে পারত। এখন সে একটা বাক্যও বলতে পারছে। রায়হান ঠিকমত বসতে এবং কথাও বলতে পারবে।’ তবে কতদিনে সে ঠিকমত হাঁটতে পারবে তা এখনই বলতে পারছেন না তিনি।

এদিকে, ছেলে ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠায় খুশি রায়হানের মা রিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার খুব ভাগ্য ভালো যে বিনা পয়সায় এত টাকা দামের ওষুধ পেয়েছি। রায়হান সুস্থ হয়ে উঠছে। সে আস্তে আস্তে হাঁটতেও পারবে। আমার সন্তান সুস্থ থাকবে, এর বেশি আর কিছু চাই না।’

(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/এজে)