৩৬ বছর ধরে রাজাকারের নামে কলেজ!

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা
 | প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৫৪

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের একটি কলেজ আজও রাজাকারের নামে নামকরণ রয়ে গেছে। ৩৬ বছর আগে নির্মিত কলেজটি স্থানীয় এক রাজাকারের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বছরের পর বছর নামটি পরিবর্তনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও নামটি পরিবর্তন করা যায়নি। এতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওই কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। তাদের দাবি দ্রুত নামটির পরিবর্তন করা হক।

কলেজটির নাম ‘ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজ’। মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার ও শান্তি কমিটির পরিচালক। জব্বারের মদদে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট চালায় পাক বাহিনী । সেই আব্দুল জব্বারে নামে ১৯৮৬ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ধর্মপুর ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন নামকরণ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে ২০১৬ সাল থেকে কলেজের ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় সচেতন মহল নামটি পরিবর্তনে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও এখন পর্যন্ত নামটি পরিবর্তনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কলেজের পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কোনো ফলপ্রসূ ফলাফল পায়নি। বার বার শুধু আশ্বাস মিলেছে। কোনো দৈব্য শক্তির কারণে নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে।

ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিহাব মিয়া জানান, আমরা অনেক মিটিং মিছিল আন্দোলন সংগ্রাম করেছি কিন্তু রাজাকারে নামটি পরিবর্তন করতে পারিনি। কেন এবং কী কারণে কোন শক্তির বলে নামটি পরিবর্তন হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই। আমরা চাই এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করা হোক। কলেজের নামের সঙ্গে রাজাকারের নামটি আমরা উচ্চারণ করতে চাই না।

রুকু ইয়াছমীন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছে তাদের নামে আজও এই কলেজটি আছে এটা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়। এই কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন দ্রুত এই কলেজটি রাজাকারে নাম অপসারণ করে কলঙ্কমুক্ত করবেন।

স্থানীয় তাজুল ইসলাম নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দুঃখের সঙ্গে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। শান্তি কমিটির পরিচালকও ছিলেন। জব্বারে দ্বারা এই অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি একজন প্রবিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করছি মৃত্যুর আগেই যেন এই কলেজ থেকে আব্দুল জব্বারের পরিবর্তে অন্য কোন নাম দেখে যেতে পারি।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা রাজু মিয়া বলেন, দেশের জন্য মাটির জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের কারো নামে যদি এই কলেজটি হতো তাহলে শান্তি পেতাম। এই রাজাকার আব্দুল জব্বারের নামে ধরে কলেজটির নাম নিতে ঘৃণা হয়। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন শক্তির নামে অথবা স্থানীয় প্রসিদ্ধ কোন স্থানের নামে এই কলেজটির নামকরণ করা হোক।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কলেজটির নাম পরির্তনে চেষ্টা করে আসছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে ধরনা ধরেও আজ অবধি আশার আলো দেখতে পারিনি। আমি মনে করি প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা ঘাপটি মেরে বসে থাকা অপশক্তির কারনে আমাদের এই কলেজ থেকে রাজাকারে নামটি অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না। আমি আশা করব সরকার যেন এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করে আমাদেরকে অভিশাপ ও দায় মুক্ত করেন। এটা আমাদের এলাকার দাবি, আমি মনে করি এটা গাইবান্ধাবাসীরও দাবি।

জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, একজন চিহ্নিত রাজাকারে নামে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি কলেজ আছে এই খবরটি আমার জানা ছিল না। আমি অতি দ্রুত কলেজের গভর্নিং বডির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে রাজাকারের নামটি পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :