ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তি দেয় পুঁইশাক

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৩৩ | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪৫

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক। বাজারে সারা বছরই কমবেশি পুঁইশাক পাওয়া যায়। ইলিশ-পুঁই ও চিংড়ি-পুঁই অনেকের অতি প্রিয় খাবার। নানা ধরনের ভিটামিনসমৃদ্ধ এই শাক এক দিকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

পুঁইশাক লতাজাতীয় উদ্ভিদ। পুঁই শাকের বৈজ্ঞানিক নাম বাসেলা অ্যালবা। পুঁইগাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে পুঁইশাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটি নরম বহু শাখাযুক্ত উদ্ভিদ। এর মাংসল লতা দ্রুত বাড়ে, দৈর্ঘ্যে ১০ মিটারও হতে দেখা যায়। পুঁইয়ের মোটা, রসাল, হরতন আকৃতির পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে। পাতা মসৃণ, খানিকটা পিচ্ছিল ভাব আছে। এই শাক দুই ধরনের। একটি সবুজ পাতা ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটি সবুজ পাতা কিন্তু কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের, যা লাল পুঁই হিসেবে পরিচিত।

পুঁইশাকের আদি নিবাস পারস্য অর্থাত্‍ বর্তমান ইরানে। সেখানে এর তত্‍কালীন নাম ছিল এসপানাক। সাত দশকের শুরুর দিকে নেপালের রাজা উপহার হিসেবে পুঁইশাক চীনে পাঠান! চীনে একে ডাকা হতো 'হার্ব অব পারসিয়া'! চীনে আগমনের পর থেকেই পুঁইশাকের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়।

এগারো দশকের শুরুর দিকে মুসলমানরা স্পেনে পুঁইশাক পাতা নিয়ে আসে এবং সেখানে তা খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়তা পায়। ব্রিটিশদের কাছে পুঁইশাক স্প্যানিশ শাক হিসেবে পরিচিতি পায়। ষোলো দশকের শুরুতে ইতালিতে পুঁইশাক পাতার ঔষধি ব্যবহার প্রচলিত হয়। উনিশ শতকের শুরুতে আমেরিকায় প্রথম পুঁইশাক বানিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই পুঁইশাক বানিজ্যিকভাবে চাষ হয়।

অন্যান্য শাকের মতো এতে অনেক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা ও ক্যালসিয়াম আছে। আমিষের পরিমাণও বেশি। এ ছাড়া এর মধ্যে আঁশের পরিমাণও অনেক। প্রতি ১০০ গ্রাম টাটকা পুঁই পাতায় রয়েছে - খাদ্যশক্তি- ১৯ কিলোক্যালরি শর্করা- ৩.৪ গ্রাম চর্বি- ০.৩ গ্রাম আমিষ- ১.৮ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ২.২ গ্রাম ভিটামিন এ- ৪০০ আইইউ থায়ামিন- ০.০৫ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.১৫৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.২৪ মিলিগ্রাম ফোলেট- ১৪০ আইইউ ভিটামিন সি- ১০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ১০৯ মিলিগ্রাম আয়রন- ১.২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ৬৫ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.৭৩৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ৫২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ৫১০ মিলিগ্রাম জিংক- ০.৪৩ মিলিগ্রাম পুষ্টিগুণ ছাড়াও পুঁইশাকে রয়েছে কার্যকরি আরো অনেক গুণ! চলুন জেনে নেই পুঁইশাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

পুঁইশাকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার কারণে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট খাবার বলা যায়। এছাড়াও পুঁইশাক খাওয়ার কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা থাকে স্বাভাবিক এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। পুঁইশাকে বিদ্যমান উপাদানগুলো ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শরীরকে ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

চোখকে ছানি পড়া থেকে রক্ষা করে

পুঁইশাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ফলে এটি চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। পুঁইশাকে আয়রন, ভিটামিন এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন উপাদান চোখের সমস্যার প্রকোপ কমায়। বয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখতে, তাদের চোখের ছানির সমস্যা দূর করতে পুঁইশাক খুবই উপকারী একটি উপাদান। শরীরকে সুস্থ, সবল, সতেজ রাখতে পুঁইশাক প্রতিদিনের খাবারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ভিটামিন ‘সি’ এবং আয়রন সমৃদ্ধ পুঁইশাক শরীরের বিপাক ক্রিয়া সহজে সম্পন্ন করে ক্যালরির ক্ষয় করে। ক্যালরি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে ওজন কমে। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা নিয়মিত পুঁইশাক খেতে পারেন। এতে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত স্থুলতা কমবে। আর আপনার ফিগারকে স্লিম এবং সুন্দর করে তুলবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। পুঁইশাক খেলে মলত্যাগ করা সহজ হয়। এতে বিদ্যমান উপাদান শরীরের অন্ত্রনালীকে পরিষ্কার রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য যখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন নিয়মিত ১০০ গ্রাম পুঁইশাকের সঙ্গে ১০০ গ্রাম পানি মিশিয়ে খান। এতে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত অসুস্থতা থেকে।

শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়

পুঁইশাক নিয়মিত গ্রহণ করার ফলে শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আয়রন, জিংক, ফলিক এসিড, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মত উপাদান পুঁইশাকে বিদ্যমান থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ফলে এসব উপাদান শুক্রাণুকে সুস্থ, সবল রাখতে খুব সাহায্য করে।

চর্মরোগ থেকে ত্বককে রক্ষা করে

পুঁইশাকে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান। যা ত্বকের কুঁচকানো ভাব এবং বয়সের ছাপ দূর করে। এছাড়াও ত্বকের উপর বিষাক্ত উপাদান জমতে বাধা প্রদান করে এবং ত্বকের ভেতরের টিস্যুকে সুস্থ এবং মজবুত করে তোলে। নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার ফলে ত্বক হয়ে উঠে মসৃণ এবং উজ্জ্বল।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

ফ্ল্যাভোনয়েডস সমৃদ্ধ পুঁইশাক খাওয়ার ফলে, নারীদের জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় ৪০ শতাংশের উপরে। এছাড়াও পুঁইশাকে ক্লোরোফিল, খনিজ লবণ, ভিটামিন, ফ্যাটি এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার প্রভৃতি উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান টিউমার সংগঠনে বাধা প্রদান করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিকারী মলিকিউস কমিয়ে দিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি নিরসন করে। তাই নিয়মিত পুঁইশাক খেতে চেষ্টা করুন।

সংক্রমণ হলে

অতিরিক্ত ঠান্ডায় নাক ও গলায় সংক্রমণ হলে পুঁই পাতার রস করে চিনি মিশিয়ে খেলে দ্রুত উপশম হয়। পাইলস, ফেস্টুলা, হেমোরয়েড ইত্যাদি বিভিন্ন পায়ুপথের রোগে পুঁইশাক উপকারী। এছাড়া পুঁইশাকের রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাত পেয়ে ফুলে গেলে সেখানে পুঁইগাছের শেকড় বেটে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়। যাঁদের প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথা থাকে, নিয়মিত পুঁইশাক খেলে তাঁরা উপকার পাবেন খুব দ্রুত। তাই পরিবারের সবার স্বাস্থ্যসচেতনতায় খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন পুঁইশাক।

(ঢাকাটাইমস/৭ ডিসেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :