চলনবিলে হলুদের সঙ্গে শিশুদের মিতালি

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩৯

প্রকৃতির সাজে সেজেছে সিংড়ার চলনবিল। যে দিকেই চোখ যায় শুধু কাঁচা হলদে ফুল। দেখে মন ভরে যায়। এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের খেলা। অপরুপ সাজ আর পাখ-পাখালির ডানা মেলে উড়া-উড়ির দৃশ্যে এক অন্যরকম চলনবিল। তার মাঝে শিশু-কিশোর সহ সব বয়সী নারী-পুরুষের মুঠোফোনে সেলফি তোলার ধুম। নাটোরের সিংড়ার চলনবিলে এমনই মনোরম দৃশ্য এখন চোখে পড়ে। চলনবিল যেন তার যৌবন ফিরে পেয়েছে।

সরেজমিনে সিংড়ার চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মৎস্য ও শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল জুড়ে সবুজের বুকে হলুদ ফুল দোল খাচ্ছে। সেই ফুলের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই শীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিষ্টি মিষ্টি রোদে সব বয়সী নারী-পুরুষেরা চলনবিলের সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলছেন। অনেকেই সেলফি তুলে তাদের পরিবারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন। আর শিশু-কিশোররা হলুদ ফুলে মিতালি করছে। এ যেন এক অপরুপ সাজে চলনবিল! সেই সঙ্গে বোরো জমিতে এ বছর বাড়তি রবিশস্য চাষাবাদ ও ভালো দাম থাকায় চলনবিলের কৃষক আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।

চলনবিলের ডহবাড়ি এলাকায় ডুবন্ত সড়কের পাশে সরিষা ক্ষেতে দাঁড়িয়ে কথা হয় কৃষক এমাজ উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি এ বছর বোরো ধান চাষাবাদের আগে ৩০ বিঘা জমিতে স্বল্প মেয়াদি টরি-৭ সরিষা চাষ করেছেন। আর ভালো ফলনের আশাও করছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এক ইঞ্চিও জায়গা ফাঁকা রাখা যাবে না এবং সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি এক ফসলি জমিতে ত্রি-ফসলি চাষাবাদের চিন্তা করছেন।

দক্ষিণ দমদমা-জোলারবাতা এলাকার কৃষক বাবলু ব্যাপারী তার ৫০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনিও বোরোর আগে বাড়তি উপার্জনের আশায় স্বল্প মেয়াদি সরিষা চাষ করেছেন। তার প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ, সেচ, সার ও বীজ বপন বাবদ ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মণ সরিষার ফলন হবে। আর বর্তমানে তেলের চাহিদা থাকায় প্রতি মণ সরিষার দাম ৪ হাজার টাকা। আশা করছেন বেশ লাভবান হবেন। তাছাড়া বোরো চাষের আগে সরিষা চাষাবাদের ফলে ওই জমিতে বোরো ধান চাষে সার কম লাগে। এবং সরিষা চাষাবাদের ফলে জমি পতিত পড়ে না থাকায় কোনো আগাছা গজাতে পারে না। এই জমিতে বোরো ধান আবাদে আর আগাছা পরিষ্কার করতে বাড়তি টাকা গুণতে হবে না বলে জানান তিনি। আর কৃষি কার্যালয় থেকে এবছর উদ্বুদ্ধ করায় চলনবিলে এতো সরিষা চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর সিংড়ার চলনবিলে ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যেখানে গত বছর ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। আর আগাম বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা চাষাবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী হাসান ইমাম বলেন, চলনবিলে সরিষা ফুলে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির মতো দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এ যেন এক ব্যতিক্রম সাঁজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, এবছর কৃষি বিভাগের প্রতি একটা নির্দেশনা ছিল আমাদের বিদেশ থেকে যে তেল আমদানি করতে হয়। সেই আমদানি নির্ভরলসতা কমিয়ে দেশে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সে লক্ষে লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, হাট সভা ও কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না। এর মধ্যেদিয়ে ৭ হাজার ৫০০ জন কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে সার ও সরিষা বীজ প্রদান করেছি। প্রনোদনা ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার-বীজ দেয়া হয়েছে। আর এ বছর আগাম বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধি ও দাম বেশি থাকায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :