শীতে ঘাড়ের ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তির উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৪ | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৯

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। কনকনে শীতের সঙ্গে আছে হিমালয়ের দিক থেকে আসা শীতল সমীরণ। সেই সঙ্গে ব্যাপক হারে নেমে গেছে বাতাসের আর্দ্রতা। সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহে শুরু হবে হাড় কাঁপানো শীত। শীতের এ সময়ে অনেকেরই পেশিতে টান ধরে। বিশেষ করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখা যায়, ঘাড় পুরো আটকে গিয়েছে। প্রচণ্ড ব্যথা! এর প্রধান কারণ শীতকালে শরীরে পানির মাত্রা কমে যাওয়া। একে এই সময়ে পানি পান করা যদি কম হয়। তার উপর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকার ফলে শরীরে পানির মাত্রা কমে যায়। শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পেশি নমনীয়তা কমে যায়। আর তাতেই টান ধরে পেশিতে।

মানুষের মাথার সঙ্গে শরীরের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ঘাড়। তাই ঘাড়ের মাংসপেশি ও হাড়ের সুস্থতার ওপর পুরো দেহের স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভরশীল। ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। বহু মানুষ এই সমস্যার সঙ্গে প্রতিদিনই জীবনযাপন করেন। শীতের দিনে ঘাড়ের ব্যথার সমস্যা অন্যান্য ঋতুর তুলনায় আরও বাড়়ে। এই সময়টায় এই মানুষগুলোর এদিক-ওদিক ঘাড় ঘোরাতে পারেন না। ফলে কাজ করতে, পাশে তাকাতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়।

ব্যায়ামের অভাব, হাড় ক্ষয়, ক্যালসিয়ামের অভাব, বেশি উঁচু বা বেশি নিচু বালিশে ঘুমানোসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের ঘাড়ে ব্যথা বা টান লাগার মতো সমস্যা হতে পারে। ঘাড়ের মাংসপেশি ও সারভাইকাল কশেরুকার সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কিছু সহজ ব্যায়াম অল্প সময়ে করে নেওয়া যায়, যেগুলো যোগব্যায়ামের সূক্ষ্ম ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। এই অভ্যাস সহজে ঘাড়ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘাড়ে ব্যথার মূল কারণ হল আমাদের জীবনযাপন। আমরা বেশিরভাগ মানুষই এখন কম্পিউটারে কাজ করি। কম্পিটউটারে কাজ করার সময় আমরা কোনওরকম নিয়ম মানি না। যেভাবে খুশি বসে, শুয়ে কম্পিউটারে কাজ করে চলি। এই অভ্যাস ঘাড়ের বারোটা বাজাচ্ছে। এদিকে আমাদের শোয়ার ঢঙেরও কোনও ঠিকনা নেই। অনেকেই এমন সব ভঙ্গিতে শুয়ে পড়েন যে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অনেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে মোটরসাইকেল চালান। তাদেরও এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও গবেষণা বলছেন, দুশ্চিন্তা থেকেও এই সমস্যা বাড়তে থাকে। চাইলে মাত্র কয়েকটি ইয়োগা ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে এই ব্যায়ামগুলো করুন।

স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ

এক্ষেত্রে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে হবে। স্ট্রেচিং করলে ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়। তবে শুধু ঘাড়ের স্ট্রেচিং নয় পিঠের স্ট্রেচিংও করুন। কারণ ঘাড়ের পেশির সরাসরি সংযোগ থাকে পিঠের পেশির সঙ্গে। তাই পিঠের স্ট্রেচিংও করতে হবে।

জয়েন্টের মুভমেন্ট

আপনার কাঁধের সঙ্গে ঘাড়ের বড় জোগ রয়েছে। তাই ভালো থাকতে চাইলে কাঁধের মুভমেন্ট করুন। এক্ষেত্রে কাঁধ বরাবর পাশাপাশি দুটি হাত তুলে প্রথমে ঘড়ির দিকে এবং পরে ঘড়ির বিপরীতে হাত ঘোরান। এই মুভমেন্টে কাঁধ ও ঘাড়ের সমস্যা দূর হবে।

ভুজঙ্গাসন

ঘাড়ের সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে ভুজঙ্গাসন দারুণ উপকারী একটি ব্যায়াম। এই ব্যায়াম করার জন্য প্রথমে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর দুই হাত বুকের দুই পাশে রাখুন। এরপর দুই হাতের উপর ভর দিয়ে কোমর থেকে বুক উপরের দিকে যতটা সম্ভব তুলুন। দৃষ্টি থাকবে সামনের দিকে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে প্রথমে ১০ থেকে ২০ সেকন্ড থাকুন। তারপর সময় বাড়ান।

ঘাড়ের স্ট্রেচিং

এক্ষেত্রে প্রথমে ঘাড় উপর নীচে করুন ১০ থেকে ১৫ বার। তারপর ঘাড় ডানদিক-বাঁদিকে দশবার ঘোরান। তারপর গোলাকারে ঘাড় ঘোরান। শেষে মাথা একবার ডান কাঁধে এবং একবার বাম কাঁধে লাগান। এভাবে ৩ থেকে ৪ বার করুন।

ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

আপেল সিডার ভিনেগার ঘাড়ের ব্যথা এবং শক্তভাব দূর করার দুর্দান্ত এক ঘরোয়া উপায়। আপেল সিডার ভিনেগারে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্টগুলো ঘাড়ের পেশীর স্ট্রেস এবং ব্যথা কমাতে পারে। এজন্য একটি পাতেও আপেল সিডার ভিনেগার ও সামান্য পানি মিশিয়ে নিন। হালকা গরম পানি হলে বেশি ভালো হয়। এর মধ্যে একটি কাপড় ভিজিয়ে ঘণ্টাখানেকের জন্য ঘাড়ের ব্যথার স্থানে রাখুন। ঘাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত দিনে দুইবার এটি পুনরাবৃত্তি করুন।

ম্যাসেজ থেরাপি শরীরের যেকোনো ব্যথা নিরাময় করতে পারে। পাশাপাশি আপনাকে আরও ভালো ঘুমাতে সহায়তা করে। রক্ত প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে এবং পেশীগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে জলপাই, সরিষা বা নারকেল তেল। প্রথমে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এরপর পুরো শরীর মুছে নিন। এক টেবিল চামচ তেল সামান্য গরম করে ঘাড়ে ম্যাসেজ করুন।

কয়েক মিনিটের জন্য বৃত্তাকার গতিতে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। প্রতিদিন সকালে এটি পুনরাবৃত্তি করুন। দিনের যেকোনো সময় আপনি আবারও ঘাড়ে ম্যাসেজ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে কোনো আহত স্থান ঘষবেন না।

পেশীর প্রদাহ কমাতে বরফ দুর্দান্ত কার্যকরী। আইস প্যাক প্রয়োগে ত্বকের ভাসোডিলেশন বাড়ে, যা শীতল রক্তের প্রবাহকে ঘাড়ের পেশীগুলো ফিরে যেতে সাহায্য করে। এজন্য প্রয়োজন হবে আইস কিউব, তোয়ালে। প্রথমে তোয়ালের মধ্যে বরফের কিউবগুলো রাখুন এবং এটি ঘাড়ে রাখুন। কয়েক মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন। দিনে তিন থেকে চারবার আইস প্যাক নিতে পারেন।

আপনি যখন ল্যাপটপ বা পিসি ব্যবহার করবেন; তখন নিশ্চিত হয়ে নিন যে স্ক্রিনটি চোখ বরাবর আছে কি-না। আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করার সময়, নিশ্চিত করুন যে টেক্সট করার সময় আপনার ঘাড়ে চাপ পড়ছে না। এক টানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ না করে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর বিরতি নিন। প্রথমে মাথা নিচু করে কয়েক মিনিট বসে থাকুন। তার পর চোখের সোজাসুজি কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। কাজের ফাঁকে মাঝেমাঝেই এটা করুন। দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালাবেন না। কারণ এতে আপনার ঘাড় এবং পিঠ শক্ত হতে পারে।

অনেক সময়ে এক টানা কয়েক দিন খুব ভারী ব্যাগ বইতে হলে ঘাড়ে এমন ব্যথা হয়। তাই ভারী ব্যাগ সব সময়ে বহন করবেন না। যতটুকু জিনিস প্রয়োজন, সেগুলোই ব্যাগে রাখুন। ব্যাগ বেশি ভারী হয়ে গেলে ঘাড়ের পেশিতে চাপ পড়বে। পেশিগুলো স্থিতিস্থাপকতা হারাবে।

ঘাড়ে ব্যথা যদি দীর্ঘ দিন থাকে, সে ক্ষেত্রে বালিশ ব্যবহার করা বন্ধ করুন। বালিশ ছাড়া সোজা হয়ে ঘুমোলে ঘাড়ের পেশিগুলো ধীরে ধীরে নমনীয়তা ফিরে পাবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ ডিসেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :