শীতে শরীরে পানি শূন্যতার সমস্যা বুঝবেন যেভাবে
পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে প্রতিদিন পানির প্রয়োজন রয়েছে। পানি ছাড়া আমাদের জীবন ধারণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের শরীরের ৩ ভাগের ২ ভাগই পানি। পানি টিস্যুতে অক্সিজেন এবং নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
শীতকালে বাড়তি পানির চাহিদা কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মেই কমে যায়। শীতে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে ত্বকের পাশাপাশি শরীরও খুব তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায়। এজন্য শীতকালে অনেকেরই পানি কম পান করার প্রবণতা দেখা যায়। গরমকালে তেষ্টা বেশি পায় ফলে পানি পান করা হয়। কিন্তু শীতকালে সেই সম্ভাবনা থাকে না। শরীরে পানির ঘাটতি ডেকে আনতে পারে নানা রোগ। হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।
শীতের সময় ঠান্ডার ভয়ে পানি পান করা কমালে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি খেতে অসুবিধা হলে শীতের সকালে চায়ের আগে গরম পানি খেয়ে দিন শুরু করুন। সাধারণত বেশি বয়সে অনেককেই প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরলসহ নানান ধরনের ওষুধ খেতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান না করলে শরীরে নানান ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে শুরু করে।
শরীরে পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ডিহাইড্রেশন। এটি হলো শরীরের পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতার একটি অবস্থা। খুবই অল্প পরিমাণে পানি পান করলে ব্যক্তির শরীরে পানিশূন্যতা বা পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এ ছাড়া ব্যায়াম, রোগ বা পরিবেশগত উচ্চ তাপমাত্রার কারণেও শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
মানুষের শরীরে ৭০ শতাংশ পানি। দেহে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ৩ লিটার পানি করা উচিত। এর চেয়ে কম পরিমাণে পানি পান করলেই শরীরে ড্রিহাইড্রেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই শীতের এই সময়টাতে এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিমিত পানি পান করা ছাড়াও ডায়রিয়া, অতিরিক্ত সূর্যের তাপে থাকা, অতিরিক্ত শরীর চর্চা, প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়ার কারণেও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
শরীরে ড্রিহাইড্রেশন সমস্যা থাকলে আপনার মধ্যে বেশকিছু উপসর্গ স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এগুলো হলো মাথাব্যথা, বারবার গলা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, বারবার পানি পিপাসা পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, পেশিতে টান পড়া, চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখের দৃষ্টিগত সমস্যা দেখা দেওয়া, হজমে সমস্যা হওয়া, পরিপাক তন্ত্রের কাজ ব্যহত হওয়া ইত্যাদি।
এ ছাড়াও শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে আপনার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যাবে। ত্বকে দেখা দিবে ব্রনের সমস্যা। আপনার প্রসাবের পরিমাণ কমে যাবে। সেই সঙ্গে প্রসাবের রং হয়ে যাবে হলুদ। পানি আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আপনি পানি কম খেতে শুরু করলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অভাবে আপনার মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে।
শরীরে পানির অভাব হলে আপনি অল্পতেই ক্লান্তিবোধ করবেন। আপনার দেখা দেবে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা। এর ফলে আপনার হঠাৎ করেই হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাবে।
পানি শূন্যতার সমস্যায় লিভার ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, লিভার পানির সাহায্যে গ্লাইকোজেন তৈরি করে, যা আমাদের শক্তি জোগায়। কিন্তু পানি শূন্যতা অবস্থায় শরীরে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই নোনতা স্ন্যাকস, চকলেট, মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে, যদি আপনি পানি শূন্যতায় ভোগেন।
শরীরে টক্সিন জাতীয় সব পদার্থই মূত্রের মাধ্যমেই নির্গমন হয়। পানি কম খেলে মূত্র নির্গমনের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জ্বালা অনুভব হতে পারে। যা থেকে ইনফেকশনের আশঙ্কাও থাকে। পানি কম খেলে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
শরীরে পানির ঘাটতি হলে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়তে পারে। যা থেকে মাথা, ঘাড়ে এবং চোখের ব্যথাও বাড়তে পারে। একটানা কাজের মাঝেও পানি পান করা উচিত। শীতকালে শরীরে পানির ঘাটতি হলে ক্লান্ত লাগে।
শীতকালে শুষ্কতার জেরে চুল, ত্বকও শুষ্ক হয়। খুশকি বাড়ে। পরিমিত পানি পান করলে এই সমস্যা দূর হয়। শীতে পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। তাই এ সময় ডায়েটে যুক্ত করতে পারেন ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত, স্যুপের মতো তরল খাবারগুলো।
পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করতে আমাদের সবারই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কেননা স্বল্প মাত্রার ডিহাইড্রেশন পানি পান করার মাধ্যমে ঠিক হয়ে গেলেও গুরুত্বর ডিহাইড্রেশনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য আমাদের প্রত্যেকের চাহিদামত বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পানি বিশুদ্ধ না হলে পানি বাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে শরীরে।