টিএসসিতে বসেই 'স্বপন মামার' ১০ বিশ্বকাপ

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৪৫ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:১২

মুকুল মুর্শেদ

বর্তমান সময়ের তো বটেই ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফুটবলের তকমা পেয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। তার হাতে শিরোপা দেখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন ফুটবলপ্রেমীরাও। এতো গেল মেসি যুগের কথা। এমনও অনেক সমর্থক রয়েছেন, যারা মেসির পাশাপাশি ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো ম্যারাডোনার হাতেও শিরোপা দেখেছেন। আর সেটা বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বসেই। অর্থাৎ ১৯৮৬-২০২২ পর্যন্ত ১০টি বিশ্বকাপ দেখেছেন টিএসসিতেই। বলছি টিএসসির চা দোকানি আবদুল জলিল মিয়ার কথা।

আবদুল জলিল মিয়া বললে হয়তো চিনবেন না অনেকে। কিন্তু 'স্বপন মামা' বললে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কিংবা বর্তমান সকল শিক্ষার্থী চিনবেন এক পলকেই। হ্যাঁ, টিএসসিতে বসেই টানা দশটি বিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে সবার পছন্দের 'স্বপন মামার'।

চা বানানোর পাশাপাশি আবদুল জলিল মিয়া ওরফে 'স্বপন মামা' শোনাচ্ছিলেন ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা। ১৯৮৬-তে টিএসসিতে প্রথমবার ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ উপভোগ করলেও ১৯৭৮ সাল থেকেই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিয়ে আসছেন ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।

সেই সময়ে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার খেলা দেখার জন্য কম কষ্ট পোহাননি স্বপন মামা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'সেই সময় তো এতো টেলিভিশন ছিল না। আবার যাদের বাড়িতে থাকতো তারা তো দেখতে দিতো না। খেলা দেখতে না দিলে পোলাপাইনরা মিলে তাদের বাসায় ঢিল মারতাম।’

তাহলে কিভাবে খেলা দেখতেন, এই প্রশ্নের জবাবে স্বপন মামা বলেন, ‘গ্রামের চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বারদের বাসায় টেলিভিশন থাকতো। তারা অবশ্য খেলা দেখার সুযোগ দিতো। আর আমরা দেখতাম।’

টিএসসিতে তার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৮৬ সালে। তখনকার জনপ্রিয় ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন ‘স্বপন মামার’ প্রিয় ফুটবলার। কিন্তু খেলা দেখা নিয়ে পড়েন ঝামেলায়। এরপর কয়েকজন মিলে টেলিভিশন ভাড়া করেন দেখতেন খেলা। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আমরা এক হাজার টাকা দিয়ে এক মাসের জন্য একটি টেলিভিশন ভাড়া করেছিলাম। তখন এতো মানুষ আর্জেন্টিনার সমর্থন করতো না। আর আমরা যারা একসঙ্গে খেলা দেখতাম, তাদের অনেকে আর বেঁচে নেই।’

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের পর স্বপন মামার সঙ্গী হয়েছে হতাশা। কেননা বিশ্বকাপে সুবিধা করতে পারছিল না তার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। তবে এই স্বপন মামার হতাশার ও কষ্টের সঙ্গী হয়েছে কিছু মধুর স্মৃতি। হাসতে হাসতে স্বপন মামা বলেন, ‘প্রখ্যাত আবৃতিকার শিমুল মুস্তফা ব্রাজিলিয়ান সমর্থক, কিন্তু স্ত্রীর পছন্দের দল আর্জেন্টিনা। ২০১০ সালের বিশ্বকাপের দুদলই বাদ পড়ে কোয়ার্টার ফাইনালে। তো ব্রাজিল বাদ পড়ার দিন নেঁচেছিলেন তার স্ত্রী, আবার আর্জেন্টিনা হারার দিনে নাচতে নাচতে উদযাপন করেছিলেন শিমুল মুস্তফা।’

২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন স্বপন মামা। খেলা ছিল রমজান মাসে। আর খেলাগুলো হতো ভোরবেলায়। তাই সেহরি করতেন টিএসসিতেই। তিনি বলেন, ‘সেবার তো ভোররাতে খেলা হইল, মামা। সেহরি করলাম এখানেই। কিন্তু জিততে জিততে শেষ মুহূর্তে হেরে গেলাম। খুব কষ্ট পাইছি।’

২০১৮ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়ার কারণে আর খেলার দেখার অবস্থায় ছিলেন না স্বপন মামা। তবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ ছিল তার। মেসির শেষ বিশ্বকাপে শিরোপা আর্জেন্টিনাই জিতবে বলে ধারণা করেছিলেন তিনি। মামা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল এবার মেসিই বিশ্বকাপ জিতবে। তাই আর্জেন্টিনার খেলার দিনে দোকান বন্ধ রাখতাম। মেসির পায়ের জাদু দেখার জন্যই খেলার দিনে চা বিক্রি বন্ধ রাখতাম।’

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/এমএম)