দুই দিনেও উদ্ধার হয়নি মেঘনায় ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজ

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৪৯

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়া এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামে কার্গো জাহাজটি ডুবে যাওয়ার দুই দিন পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

 

ডুবে যাওয়া জাহাজটি সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত আগের অবস্থানেই রয়েছে। তবে জাহাজটি উদ্ধারে অপর দুইটি জাহাজ রওয়ানা দিয়ে একটি বিকাল নাগাদ এসে পৌঁছেছে।

 

এদিকে গত দুই দিনে জাহাজটি উত্তোলন করতে না পারায় জাহাজে থাকা বিপুল পরিমাণ ডিজেল ও অকটেন মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা নদীর মৎস্য সম্পদসহ জীব ও বৈচিত্র্য। এদিকে তেলবাহী জাহাজটিকে ধাক্কা দেয়া জাহাজটিকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

 

এদিকে ঘটনায় সোমবার পদ্মা অয়েল কোম্পানীর পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত টিমের আহ্বায়ক পদ্মা অয়েল কোম্পানির উপ মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) আসিফ মালিকসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন, পদ্মা অয়েল কোম্পানরি সহকারী মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) মো. আনোয়ার হোসেন, উপব্যবস্থাপক (পরিচালন) চাঁদপুর ইমরানুল হাসান চৌধুরী, বরিশাল বিভাগের বিপনন কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বিশ্বাস। আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত শনিবার ৯ লাখ লিটার ডিজেল ও দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন লোড করে এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামের কার্গো জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।

 

রবিবার ভোর ৪টার দিকে ভোলার তুলাতুলি সংলগ্ন মাঝের চরের কাছে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে অপর একটি কার্গো জাহাজের সাথে সংর্ঘষে তেলবাহী জাহাজটির তলা ফেটে ডুবে যায়। এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় জাহাজে থাকা ১২ জেলে উদ্ধার হয়। কিন্তু রবিবার সকালে জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়লে নদীতে থাকা শত শত জেলেরা সেই তেল নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ডুবে যাওয়া জাহাজটি থেকে তেল মেঘনা নদীর ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা নদীতে গোসল করা থেকে শুরু করে নদীর পানি ব্যবহার কারীরা বিপাকে পড়েন। তেল ছড়িয়ে পড়ায় নদীর পানি দূষণ হয়ে মৎস্য খাতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় জেলেরা।

 

ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাহবুব আলম জানান, নদীর পানিতে দীর্ঘক্ষন জ¦ালানী তেলের আস্তরণ থাকলে জলজ প্রাণীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পানির ওপর তেলের আস্তরণ থাকলে পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের খাদ্য সংকট হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, রবিবার ভোর রাতে তেলবাহী একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গিয়ে পুরো মেঘনা নদীতে বিপুল পরিমানে জ¦ালানী তেল ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রæত ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারসহ ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণ করা না হলে নদীর পানির স্বাভাবিক যে ইকোসিস্টেম আছে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে মাছের উৎপাদন ব্যহতসহ মাছের সংকট দেখা দিবে। যা পরবর্তী প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই যত দ্রæত সম্ভব এ তেল অপসারণের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এ কর্মকর্তা।

 

ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজ এমভি সাগর নন্দিনী-২ এর মাস্টার মো. মাসুদুর রহমান বেলাল জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার একই মালিকের একটি জাহাজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে এসেছে। বাকী আরেকটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। দুই জাহাজ একত্রে মিলে ও ডুবুরীদের সহায়তা জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। এতেও কাজ না হলে পরবর্তীতে ক্রেনের বিষয়ে চিন্তা করা হবে। তবে জাহাজের যে ওজন রয়েছে এতে ক্রেনের মাধ্যমে উদ্ধার করা কতটুকু সম্ভব হবে সেটি নিয়ে চিন্তিত তিনি।

 

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. হাসান মেহেদী আরিফ জানান, তাঁরা পরিবেশে বির্পযয় রোধে গতকাল থেকে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে নদীতে থেকে তেল উত্তোলন করা শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কোস্ট গার্ড।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আবদুস সালাম জানান, জাহাজটি দুর্ঘটনার পর থেকে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ে যাতে পরিবশের ক্ষতি না হয় সে জন্য কোস্ট গার্ডের সহায়তায় নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনো জাহাজে ভিতর প্রচুর তেল রয়েছে। জাহাজের মালিক পক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে। খালি জাহাজটির ওজন রয়েছে ৩৩০ মেট্রিকটন। এর পরও জাহাজে তেল ও পানি রয়েছে। কিন্তু বিআইডবিøউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজের উত্তোলনের ধারণ ক্ষমতা আছে ২৫০ মেট্রিকটন। তাই জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব না। এখন জাহাজের মালিক পক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখন বেসকারিভাবে দুইটি জাহাজের মাধ্যমে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে এসে পৌছেছে। বাকী আরেকটি পথে রয়েছে। সেটি আসলে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।

 

তদন্ত কমিটির আহবায়ক আসিফ মালিক জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসেছেন। ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার, জাহাজে থাকা তেল অপসারণ ও কীভাবে জাহাজটি ডুবে গেল সবকিছুই তদন্তের মধ্যে রয়েছে। প্রথামিকভাবে জাহাজটি উদ্ধারই এখন মূল কাজ।

 

(ঢাকাটাইমস/২৬ডিসেম্বর/এআর)