আইইএলটিএসে স্কোর বাড়ানোর কথা বলে প্রতারণা!

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আইইএলটিএসে স্কোর বাড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সার্টিফিকেট প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতের নাম নাকিব ওসমান। এ সময় তার কাছ থেকে একটি নোকিয়া মোবাইল ফোন, একটি অপো স্মার্ট ফোন, তিনটি সিমকার্ড, নগদ ৪৯ হাজার ১৬৪ টাকা টাকা, পাঁচ হাজার ৬৭০ ভারতীয় রুপি, দুইটি পাসপোর্ট, দুইটি চেকবই  উদ্ধার করা হয়।  সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

সিআইডির ভাষ্য, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে একটি অভিযোগ আসে যে, একটি চক্র অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আইইএলটিএসের স্কোর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) অভিযোগটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায় যে, একটি চক্র ফেইসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে সহজে আইইএলটিএসের স্কোর ৮ এর উপরে লাভ এরূপ লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। এই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা তাদের হোয়াটঅ্যাস ও ম্যাসেঞ্জারের  সিক্রেট গ্রুপের ইনবক্সে যোগাযোগ করলে তখন চক্রটি আগ্রহী প্রার্থীদের টার্গেট করে বিনা পরীক্ষায় আইইএলটিএসে ৮ এর বেশি স্কোর পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। এভাবে প্রতারিত করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। যেহেতু বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং চাকরি বা ব্যবসা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে শর্তে আইইএলটিএসে স্কোর সাতের অধিক প্রয়োজন পড়ে, তাই আগ্রহীরা সহজেই এই সংঘবদ্ধ চক্রের পাতা ফাঁদে পা দেয়। শনিবার দুপুরে দেড়টার দিকে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি টিম রাজধানীর দারুসসালাম থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে এই সংঘবদবদ্ধ চক্রের মূল হোতা নাকিব ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত নাকিবর বরাত দিয়ে সিআইডি বলছে, নাকিব এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। নাকিব সিআইডিকে জানায়, যে, সে এবং তার সাথে আরও সাত থেকে থেকে আটজনের একটি চক্র অনলাইন প্লাটফর্মে আইইএলটিএসের স্কোর বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের প্রতারিত করে আসছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য যে সকল শিক্ষার্থী বিদেশে যেতে চায় চক্রটি তাদেরকে টার্গেট করে। প্রথমে চক্রটি ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে আইইএলটিএসের স্কোর ৮ এর উপরে লাভ এরূপ লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। আর শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখায় যে আইইএলটিএসের স্কোর যদি কম হয়, তাহলে স্কোর ৮ এর উপরে করে দিতে পারবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের মোটা অংকের আর্থিক চুক্তি হয় এবং যেখানে টাকা আগে পরিশোধ করতে হয়। যেসকল শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারা সহজেই এ ফাঁদে পা দেয়। চক্রটি টাকা  হাতে পাওয়ার পরে প্রতারক চক্রটি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। এভাবে অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারক চক্রটির প্রতারণার প্রমান পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত নাকিব ওসমান সিআইডিকে জানায়, শুধুমাত্র আইইএলটিএসের স্কোর বাড়ানোই নয়, পাশপাশি বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করত। এক্ষেত্রে তার সাথে কয়েকজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী জড়িত। শিক্ষার্থীরা বাইরের দেশে যে সকল বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, ওই সকল বিষয়ের ভুয়া সার্টিফিকেট দেশের বিভিন্ন বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েকজন অসাধু শিক্ষকের সহায়তায় তৈরি করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। এ সকল সার্টিফিকেটর দ্বারা বিদেশে পড়াশুনার আবেদন করলে, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর ই-মেইল করে। দেশের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা চক্রটির সহযোগী তারা সার্টিফিকেটটি বৈধ হিসাবে ই-মেইলের জবাব পাঠায়। এছাড়াও বিশ্বের অনেক নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলেও চক্রটি প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে বহুদিন যাবত এরা প্রতারণা করে টাকা কামিয়ে আসছে।

এ ঘটনায় নাকিব ওসমানের বিরুদ্ধে গত ২৪ ডিসেম্বর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ডিসেম্বর/এএ)